নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর, আপনজন: সরকারি নির্দেশিকা ছাড়াই গ্রামের একমাত্র উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার থেকে ক্লাবে নিয়ে চলে যাওয়ার অভিযোগে তিন উপস্বাস্থ্য কর্মীকে গৃহবন্দী করে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয়রা। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার দুপুরে হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহেন্দ্রপুর গ্রামে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ,সরকারি নির্দেশিকা ছাড়াই গ্রামের কাউকে না জানিয়ে ওই কেন্দ্রের উপস্বাস্থ্য কর্মীরা গ্রামের অনত্র ক্লাবে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি গ্রামবাসীদের নজরে আসতেই তেতে উঠেন তারা। ক্ষুব্ধ হয়ে গ্ৰামবাসীরা তিন উপস্বাস্থ্য কর্মীকে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,দীর্ঘ ১২ বছর ধরে মহেন্দ্রপুর পূর্ব পাড়ায় ওই উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে প্রসূতি মা,শিশু ও গর্ভবতী মহিলারা পরিসেবা পেয়ে আসছেন। ২০১৭ সালের বন্যায় উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বেহাল হয়ে পড়ে। দেওয়ালে ফাটল দেখা দেয়। পরগাছা ও লতাপাতা গজিয়ে ওঠে দেওয়াল ও ঘরে। ঘরের মেঝে বসে গিয়ে পোকা মাকড়ের উপদ্রব শুরু হয়। সেই আশঙ্কায় উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীরা পাশের অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে চিকিৎসা পরিসেবা দেওয়া শুরু করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে সেখানেই চলছিল উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। সিডিপিও সেই অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারটি ছাড়তে বললে সেখান থেকে গ্রামের অনত্র ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন কর্মীরা বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের আরো অভিযোগ,উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার অভিযোগ জানানো সত্বেও কোন কাজ হয়নি। সেই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে মা ও শিশু দের পরিসেবা দেওয়া যাচ্ছিল না তাই পার্শ্ববর্তী একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকেই স্বাস্থ্য পরিসেবা দেওয়ার কাজ চলছিল। কিন্তু সেই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীরা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে টেবিল,চেয়ার,ঔষধ ও খাতাপত্র সহ সমস্ত কিছু নিয়ে বেশ কিছু দূরে পশ্চিম পাড়ায় একটি ক্লাব ঘর থেকে স্বাস্থ্য পরিসেবা দেওয়া হবে বলে ভ্যানে বোঝাই করতে থাকেন। আর তা দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীরা স্বাস্থ্য কর্মীদের বাধা দেয় এবং তাদের একটি ঘরে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেতাছাড়া ওই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ইসলামপুর,
আলিপুর ও রামপুর তিনটি গ্রামের শিশু ও মহিলারা স্বাস্থ্য পরিসেবা নেওয়ার জন্য ছুটে আসেন। তাই এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেলে ওই তিনটি গ্রামের লোককে নাজেহাল হতে হবে। তাই স্থানীয়দের দাবি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিজস্ব কক্ষ গুলি সংস্কার করে সেখানেই পরিসেবা দেওয়া চালু হোক। প্রধান স্বাস্থ্যকর্মী গীতা রায় জানায় ‘আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ২০১৭ সালের বন্যায় বেহাল দশা হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে পরিসেবা দেওয়া যাচ্ছে না,তাই পার্শ্ববর্তী একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে পরিসেবা দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে চাপ আশায় বাধ্য হয়ে বইএমওএইচ কে মৌখিকভাবে জানিয়ে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিসেবা সাময়িক পার্শ্ববর্তী একটি ক্লাব ঘর থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ থাকায় বর্তমানে এখান থেকেই পরিসেবা দেওয়া হবে যতদিন না পর্যন্ত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র মেরামত করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সিডিপিও হরিশ্চন্দ্রপুর-১ আব্দুস সাত্তার জানান প্রাথমিকভাবে সাব সেন্টারটি আইসিডিএস সেন্টার থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কিন্তু আমরা পরিস্থিতি লক্ষ্য করে আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ওই আইসিডিএস সেন্টারে সাব সেন্টারটি রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত বিশ্বাস জানান, ঘটনার কথা জানা নেই। আমি স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিকারীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাব সেন্টার টি সংস্কার করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct