এম মেহেদী সানি, বনগাঁ, আপনজন: সম্প্রতি বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন কমিটি ঘোষণা হয়েছে৷ এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন ৩৫ জন। এর মধ্যে চারজন সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন তৃণমূলের লড়াকু জনপ্রিয় নেতা জাফর আলী মন্ডল৷ তিনি নয়া কমিটিতে জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য নিযুক্ত হয়েছেন। অত্যন্ত সুবক্তা জাফর আলী মণ্ডল ১৯৯৮ সালে তৃণমূলের জন্মলগ্নে বনগাঁ ব্লকের গঙ্গানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে দু’বার উপপ্রধান এবং বর্তমানে প্রধানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন৷ রাজনীতিতে প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই পোড় খাওয়া নেতা। জানা গেছে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও পর্যাপ্ত। তবুও বিশেষ যোগ্য পদে সুযোগ পাননি। এতে যদিও কোনোরকম অসন্তুষ্ট নন জাফর সাহেব। তাঁর কথায় ‘পদের কী প্রয়োজন? মানুষের জন্য কাজ করে যাব, দলের নির্দেশ মেনে মানুষের পাশে থাকবো৷’ নব নিযুক্ত বনগাঁ জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য জাফর আলী মন্ডল একাধিক বিষয় নিয়ে দৈনিক ‘আপনজন’-এ একান্ত সাক্ষাৎকারে অকপট মন্তব্য করেছেন। -আপনার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন। -তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম থেকেই আন্তরিকভাবে দলটাকে ভালোবেসে রাজনীতিতে আছি৷ অতি সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে আমাকে দলীয় সম্পাদক করা হয়েছে। আমি এবং আমার পরিবার সকলেই খুশি, ১৯৯৮ সালে প্রথম প্রধান তারপর পরপর দু’বার উপপ্রধান বর্তমানে প্রধানের দায়িত্ব পালন করছি। দল অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বিভিন্ন সময় দিয়েছে, নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করেছি৷ এবারে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে, আমি অত্যন্ত খুশি৷ মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সভানেত্রী মমতা ব্যানার্জীকে আজ থেকে নয়, জাতীয় কংগ্রেসের সেই সময় থেকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসে, আমরা তার সৈনিক৷ আসলে, পদটা বড় কথা নয়, নেত্রীর মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা, দলের সম্মান রাখাটাই বড় কথা, নিষ্ঠার সঙ্গে দলীয় দায়িত্ব পালন করব৷
-বর্তমান সময়ে সংখ্যালঘুরা কী তৃণমূল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে?-এটি একটি ভুল বার্তা ছড়ানো হচ্ছে যে তৃণমূল থেকে সংখ্যালঘুরা দূরে সরে যাচ্ছেন। কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বরাবরই আমাদের দল করতেন না। বিগত বিধানসভা নির্বাচনে হয়তো তাদের একটা অংশ আমাদেরকে ভোট দিয়েছিলেন, বর্তমান সময়ে তাঁরা তাদের রাজনৈতিক দলে ফিরে যাওয়ার উপক্রম করছেন, আর আমরা মনে করছি গেল গেল রব উঠেছে। এটা ভাবার কিছু নেই। সংখ্যালঘুরা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এর পাশে ছিলেন আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন৷ ভারতের মধ্যে বাংলাতেই সংখ্যালঘুরা সবথেকে সুরক্ষিত এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাতে নজর কাড়া উন্নয়ন হয়েছে যেটা ভারতে কোথাও হয়নি, এটা সর্বকালের সেরা নিদর্শন৷ -এ সময়ে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় বামফ্রন্ট এবং আইএসএফকে নিয়ে কতটা চিন্তিত?-যেমনভাবে জয় শ্রীরাম শ্লোগান দিয়ে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল তাঁরা ধর্মীয় ফয়দা নিচ্ছে তেমনি ভাবে বামফ্রন্ট এখন একটা দুর্দান্ত ফন্দি শুরু করেছে সেটা আইএসএফ নামক যন্ত্রটির মাধ্যমে৷ আইএসএফ আমাদের এলাকার কোনো ফ্যাক্টর নয়। উগ্র বামফ্রন্টরা আইএসএফের রূপ নিয়ে মুসলিম সমাজকে দ্বিধা বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। তাঁরা ব্যর্থ হবেন৷ আমরা যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ আমরা সেই আইএসএফের মুখোশ বা বামফ্রন্টের মুখোশ খুলে দিয়েছি। তারা যে মেরুকরণের রাজনীতি করছিল তা ব্যর্থ হয়েছে৷ আগামীদিনে এই বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় কেন, সারা পশ্চিমবাংলায় আইএসএফ কোনো ফ্যাক্টরই নয়৷ -বনগাঁ সাংগঠনিক জেলাকে বিজেপির হাত থেকে কীভাবে উদ্ধার করবেন? -বিজেপি ব্যাকফুটে পৌঁছে গেছে। বিজেপির বিশেষ কোনও সংগঠন নেই। বিজেপির বর্তমানে অবস্থা জাতীয় কংগ্রেস তথা বামফ্রন্টের থেকেও খারাপ। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে আপনারা বুঝতে পারবেন বিজেপি চতুর্থ নাম্বারে পৌঁছে যাবে। -আসন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কী ভাবনা রয়েছে? -বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় কাজ ভালোবাসেন। আর সবক্ষেত্রেই সবার আগে কাজকেই বেশি গুরুত্ব দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকেই হাতিয়ার করে আমরা সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়লাভ করবো৷ ইতিমধ্যেই মানুষের কাছে গিয়ে আমরা রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেছি। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। আমরা পঞ্চায়েতে উন্নয়নের প্রচার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। দল পরবর্তীতে যে নির্দেশ দেবে, সেটাকেই বাস্তবায়িত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct