জয়দেব বেরা
(গেস্ট লেকচারার, সমাজতত্ত্ব, সেবাব্রত ইনস্টিটিউট অফ নার্সিং এবং গভর্মেন্ট কলেজ অফ নার্সিং,
শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটাল,উলুবেড়িয়া)
নার্স মানেই এক আকাশ পরিশ্রম ও ধৈর্যের সাগর, সহস্র আত্মত্যাগ এবং এক শক্তি। পরিবার ও সমাজের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নার্সদের নানান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। একজন ছেলে এবং মেয়ে এমনি এমনি নার্স হয়ে ওঠে না। তার পেছনে থাকে এক সুবিশাল দীর্ঘ লড়াই এর ইতিহাস। নার্স হতে গেলে দুই থেকে চার বছর এবং তারও বেশি পড়াশোনা করতে হয়। এই পড়াশোনার পাশাপাশি তাদেরকে ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসও করতে হয় দীর্ঘ সময় ধরে। যা সত্যিই এক লড়াই। অসীম ধৈর্য নিয়েই এগিয়ে যেতে হয় নার্স হওয়ার পথে। এই পথে অসংখ্য বাধাও অতিক্রম করতে হয়; তার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তাও তাদেরকে অর্জন করতে হয়। একজন ছাত্র-ছাত্রীকে নার্স হতে গেলে অসীম ধৈর্য, লড়াই করার শক্তি, সেবা পরায়নমূলক মনোভাব, সহানুভূতিশীল, আত্মত্যাগী এবং ভালো মনের মানুষ হতে হয়। যদিও এই গুণগুলি ধীরে ধীরে তারা অর্জন করে নেয়।একথাও ঠিক যে সবাই আবার পারে না,তাই তো আমি বলে থাকি-’সবাই নার্সিং পাশ করে,কিন্তু সবাই নার্স হয়ে উঠে না।’ যাইহোক,একজন ছাত্র-ছাত্রী সহস্র লড়াই করেই কিন্তু একজন প্রকৃত নার্স হয়ে উঠে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে যদি একটি মানবশরীর ধরা হয় তাহলে এই শরীরের কিডনি হল ডাক্তার এবং হৃৎপিন্ড হল নার্স।আমাদের শরীরের যেমন বিভিন্ন অঙ্গ রয়েছে ঠিক তেমনি একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও বিভিন্ন পেশার মানুষ কাজ করে থাকে।মানব অঙ্গের মতো তাদের মধ্যেও একটা সম্পর্ক কাজ করে থাকে। বিভিন্ন অঙ্গের পাশাপাশি আমাদের শরীরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল কিডনি এবং হৃৎপিন্ড, যা ব্যাতিত একটি মানবশরীর অসম্পূর্ণ।ঠিক তেমনি একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও ডাক্তার ও নার্স ছাড়া অসম্পূর্ণ।নার্সরা হলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হৃৎপিন্ড; যা স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে সর্বদা বাঁচিয়ে রাখে।ডাক্তারদের পাশাপাশি একজন নার্সের দায়িত্বও কিন্তু কম নয়।সাধারণত ডাক্তাররা কেবল রোগী দেখে চলে যান কিন্তু একজন নার্সকে দীর্ঘ সময় ধরে দিবা-রাত্রি রোগীর পাশে থাকতে হয়।রোগীকে সময় মতো ঔষধ দেওয়া, তার যত্ন নেওয়া, খাওয়ার সম্পর্কিত দেখাশোনা করা সহ যাবতীয় বিষয় একজন নার্সকে দেখতে হয়।অর্থাৎ একজন নার্সকে মায়ের ভূমিকা পালন করতে হয়।তাইতো নার্সদেরকে দেবী দুর্গার মতো দশ হাতে দশটি গুণ রাখতে হয়।নার্সরা কখনো চিকিৎসক,কখনো শিক্ষক,আবার কখনো সমাজকর্মী,মনোবিদ,পুষ্টিবিদ, কাউন্সেলর এবং সমাজতাত্ত্বিকও বটে।মনে রাখা প্রয়োজন, সবসময় একজন নার্সকে কিন্তু বন্ধুর মতো হয়েই রোগীর পাশে থাকতে হবে এবং সামাজিক-মানসিক-শারীরিক ভাবে তার সেবা করতে হবে।স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নার্সরাই মায়ের মতো কিংবা বন্ধুর মতো হয়েই একজন রোগীর পাশে থাকেন।নিজের ঘাম ঝরা পরিশ্রম দিয়ে রোগীকে সুস্থ ও স্বাভাবিক করে তোলেন।তাইতো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন রোগীর সাথে ডাক্তারের থেকে নার্সের যোগাযোগ এবং সহানুভূতিশীল বন্ধন অনেক বেশি থাকে।নার্সরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দিন-রাত পরিশ্রম করে,লড়াই করে,নানান অবজ্ঞা-লাঞ্ছনা সহ্য করে এক বুক ধৈর্য ও শক্তি নিয়ে জীবনের চলার পথে এগিয়ে চলে।তাই বলা যায় শ্রেয়, হৃৎপিন্ড ছাড়া মানবশরীর যেমন অসম্পূর্ণ ঠিক তেমনি নার্স ব্যাতিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রও অসম্পূর্ণ।তাই নার্সরাই হল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হৃৎপিন্ড।একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকে থাকার পেছনে নার্সদের অবদান অনস্বীকার্য।নার্সরাই অক্সিজেন হয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে মানবশরীরের মতো বাঁচিয়ে রাখে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct