আপনজন ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন সাংসদ তথা মাফিয়া বলে পরিচিত আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফকে শনিবার সাংবাদিক সেজে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। উত্তর প্রদেশের প্রায়াগরাজে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ক্যামেরার সামনে এ দুই ভাইকে গুলি করা হয়। এ ঘটনায় তিন হামলাকারীকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এই তিনজনের নাম আগে থেকেই পুলিশের করা অপরাধীর তালিকায় ছিল। ‘গ্যাংস্টার’ থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া আতিক আহমেদ এবং তাঁর ভাই আশরাফ ২০০৬ সালের এক অপহরণের মামলায় কারাগারে ছিলেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গতকাল শনিবার তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। হাসপাতালে যাওয়ার পথে হাতকড়া পরা অবস্থায় তাঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ছেলের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে তিনি গিয়েছিলেন কিনা? ক্যামেরার সামনে তার সর্বশেষ বক্তব্য ছিল, ‘তারা আমাদের নিয়ে নিয়ে যায়নি, সুতরাং আমরা যেতে পারিনি।’ ঠিক সেই সময় ভিড়ের মধ্যে সাংবাদিক সেজে ছিলেন বন্দুকধারীরা। তাঁরা ওই দুই ভাইয়ের মাথায় গুলি করেন। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আতিকের ছেলে নিহত হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় এমন ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় তিন সন্দেহভাজনকে প্রথমে আটক করেছে পুলিশ। তারা হল লাভলেশ তিওয়ারি, সানি সিং ও অরুণ মৌর্য। এদের মধ্যে একজন “মাদকাসক্ত” যার ভাইয়েরা এখন পুরোহিত, একটি শিশু যে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। গ্যাংস্টার-রাজনীতিবিদ আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরাফকে হত্যাকারী তিনজনের মধ্যে দু’জনকে তাদের প্রতিবেশী। তরুণরা পুলিশকে জানিয়েছে, তারা শনিবার এই দুঃসাহসিক হামলা চালিয়েছিল, যখন দুই ভাইকে পুলিশ মেডিকেল চেক-আপের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল, কারণ তারা অপরাধের জগতে নিজেদের নাম তৈরি করতে চেয়েছিল। পরে অবশ্য অভিযুক্ত হামলাকারী বান্দার লাভলেশ তিওয়ারি (২২), হামিরপুরের মোহিত ওরফে সানি (২৩) এবং কাসগঞ্জের অরুণ মৌর্য (১৮) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।এই তিন অপরাধীর পরিচয় সামনে এসেছে।
লাভলেশ তিওয়ারি: ক্রসফায়ারে তিওয়ারি আহত হন, এতে এক পুলিশ সদস্যও আহত হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বান্দার এক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিওয়ারির পরিবার দুর্বৃত্ত ছেলেকে পছন্দ করত না, কারণ সে ছিল “মাদকাসক্ত”। তিনি বলেন, তার পরিবার আমাদের প্রতিবেশী। পরিবারটা খুবই সাধারণ। তার দুই ভাই পুরোহিত এবং একজন এখনও পড়াশোনা করছেন। লাভলেশ অপরাধের সাথে জড়িত এবং বেশ কয়েকবার জেলে গেছে। এর আগেও ইভটিজিংয়ের মামলায় তিনি জেলে গেছেন। বললেন। প্রতিবেশীর দাবি, অপরাধ জগতে একটি বড় নাম অর্জনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল তার।
মোহিত ওরফে সানি: হামিরপুরে সানির ভাই পিন্টু বলেন, কীভাবে সে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তা তিনি জানেন না। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাই কিছুই করত না, এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়াত। তার বিরুদ্ধে কিছু মামলা রয়েছে, তবে আমি বিস্তারিত জানি না।তিনি আরও বলেন, আমরা তিন ভাই ছিলাম, যাদের মধ্যে একজন আগে মারা গেছেন। আমি জানি না সানি কীভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ল। বহু বছর আগে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। গতকাল কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা নেই। এক প্রতিবেশী জানান, সানি প্রায় ১০ বছর ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছে না। তিনি বলেন. সানি কুরারার বাসিন্দা ছিল এবং যখন তিনি ছোট ছিল তখন স্বাভাবিক ছিল। গণ্যগোলের পর জেলে যায়, যার পর তার মানসিকতা পাল্টে যায় ও সে অপরাধজগতে প্রবেশ করে। কয়েকটি ঘটনার পর সে কুরারা ছেড়ে চলে যায়। প্রায় এক বছর হামিরপুর জেলে ছিল। কুরারা থানার এসএইচও পবন কুমার প্যাটেল জানান, সানির বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, ডাকাতির পাশাপাশি মাদক আইন ও অস্ত্র আইনে অপরাধসহ ১৪টি মামলা রয়েছে। প্রথম মামলাটি ২০১৬ সালে দায়ের করা হয়েছিল, যা ২০১৬ সালে প্রয়াগরাজ বন্দুকযুদ্ধের আগে সবচেয়ে সাম্প্রতিক।
অরুণ মৌর্য: কাসগঞ্জে অরুণ মৌর্যের প্রতিবেশীরা এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। অভিযুক্ত বন্দুকধারীর বাবা-মা মারা গেছেন। তার দুই ভাই দিল্লিতে স্ক্র্যাপের ব্যবসা করেন। তারা আরও দাবি করেছিল যে মৌর্য কী করেছিল এবং সে কোথায় থাকত তা গ্রামের কেউ জানত না। সে প্রায় এক দশক আগে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে বলে মনে হচ্ছে। পুলিশ তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যার চেষ্টার পাশাপাশি অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছে। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত দুটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।এফআইআর অনুসারে, অভিযুক্তরা পুলিশকে জানিয়েছে যে তারা আতিক আহমেদের গ্যাংকে নির্মূল করে নিজেদের জন্য একটি নাম তৈরি করতে এবং তাদের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে কুখ্যাত অপরাধী হতে চেয়েছিল। এ কারণে আতিককে খুন করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, পুলিশ এখনো তাঁদের জবানবন্দিকে বিশ্বাস করেনি। তাঁদের জবানবন্দিতে ফাঁক আছে। পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র বলছে, গতকালের ঘটনার পর যোগী আদিত্যনাথ সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব এবং মুখ্যমন্ত্রী সঞ্জয় প্রসাদের সঙ্গে উত্তর প্রদেশ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়। বিরোধী দলগুলো উত্তরপ্রদেশ সরকারের সমালোচনা করে বলছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গত ছয় বছরে উত্তর প্রদেশে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত ১৮০ জনের বেশি ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। বিরোধীরা বলছে, পুরো প্রদেশজুড়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, পুলিশ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করে যাচ্ছে, যদিও উত্তর প্রদেশের সরকার সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct