আব্দুস সামাদ মন্ডল, নদিয়া, আপনজন: রক্তদানের কাহিনী কম বেশি সকলেই শুনেছেন। কিন্তু পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে রক্ত দিতে আর ক’জন যায়! শুক্রবার এমনি এক ঘটনার সাক্ষী থাকলেন ডোমকলের কামুড়দিয়াড় নুজবল হক হাই মাদ্রাসার শিক্ষক নজরুল ইসলাম ও তার পরিবার।দিন তিনেক আগে মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের কবিতা খাতুন জামালপুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। হিমোগ্লোবিন অত্যন্ত কম থাকায় আটকে ছিল সিজার। ডাক্তার জানায়, ইমার্জেন্সি দুই ইউনিট এ-নেগেটিভ রক্ত লাগবে। বিরল গ্রূপের ওই রক্ত বৃহস্পতিবার একটা জোগাড় করতে পারলেও আরেকটির জন্য হয়রান হচ্ছিল পরিজনেরা। এদিন ভোরে ‘ইমার্জেন্সি ব্লাড সার্ভিস’ ও ‘থানারপাড়া রিলিফ ওয়ার্ক’ নামে দুই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোয়াটসআপ গ্রূপের মাধ্যমে খবর পেয়ে রক্তদানে ইচ্ছা প্রকাশ করেন নদিয়ার করিমপুরের সেনপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। এদিন ভোরে রোজার জন্য সেহেরি খান তিনি। সকালে রোজা ভেঙে রক্তদানের বার্তাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে নিজের গাড়িতে করেই তিনি বেরিয়ে পড়েন তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের উদ্দেশ্যে। সেখানেই তিনি পরিজনের হাতে তুলে দেন এক ইউনিট রক্ত।এটা তার অষ্টম রক্তদান। এই সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে রক্তটা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন রোগীর পরিজন।স্ত্রী সন্তানকে পাশে নিয়েই রক্তদান শেষে এদিন শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একজন মা তার আগত সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায় হাসপাতালে শুয়ে। এই অবস্থায় আমার রক্ত সেই মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে, এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে। আমার স্ত্রী একাজে ব্যাপক উৎসাহ দেয়। দশ বছরের সন্তানকেও সঙ্গে এনেছি যাতে করে বড় হয়ে ও বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে।’নদিয়ার তেহট্ট ব্লাড ব্যাংকের মেডিকেল অফিসার ইনচার্জ রামচাঁদ মুর্মু বলেন, রোজার মাসে ক্যাম্প না থাকায় ব্লাড ব্যাংকে রক্তের সংকট দেখা দিচ্ছে। নজরুল সাহেবদের মত অনেক মহানুভব ব্যক্তিরা আসছেন যারা রোজা অবস্থায়ও রক্ত দিচ্ছেন। সংকট মেটাতে আমাদের কর্মীরাও এগিয়ে আসছেন।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct