আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় নতুন মোড় নিল বৃহস্পতিবার। কলকাতা হাইকোর্ট বলেছে, কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের আদালতে লেখা চিঠির প্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (সিবিআই) বিরুদ্ধে দ্বৈত চিঠিতে কুন্তল ঘোষ অভিযোগ করেছিলেন যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা বাংলায় নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে অভিষেককে সুবিধাভোগী হিসাবে উল্লেখ করার জন্য তাকে চাপ দিচ্ছেন। শুনানির সময় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ জানায়, এজেন্সিগুলি এখনও পর্যন্ত কেবল প্রতারকদের কোমর পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে এবং হৃদয় ও মাথা এখনও শনাক্ত করা যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) সুপারিশে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে গ্রুপ-সি ও ডি কর্মীদের পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কলকাতা হাইকোর্ট। ইডি এই কেলেঙ্কারিতে অর্থের ট্রেল ট্র্যাক করছে। ২৯ মার্চ কলকাতার শহীদ মিনার মাঠ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসমক্ষে দেওয়া ভাষণ এবং কুন্তলের চিঠির মধ্যে সম্ভাব্য যোগসূত্র খুঁজে বের করে ২০ এপ্রিলের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কার্যত ইডি ও সিবিআইকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বক্তব্যে অভিযোগ করেছিলেন যে কুনাল ঘোষ এবং মদন মিত্রের মতো তৃণমূল নেতারা, যারা এর আগে অর্থ লগ্নি কেলেঙ্কারি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেলে ছিলেন, তাদের মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যদি তারা অভিষেককে সুবিধাভোগী হিসাবে উল্লেখ করেন। কুন্তল ঘোষের চিঠিগুলি প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে লেখা হয়েছিল, যেখানে তিনি আছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ দেওয়ার একদিন পরে স্থানীয় হেস্টিংস থানায় এবং বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল। গত ৬ এপ্রিল বিচারক আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় কুন্তল ঘোষ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তিনি হাইকোর্টের বিচারপতিকে এই চিঠিগুলি লিখেছিলেন। বৃহস্পতিবার আদালত রাজ্য পুলিশকে আরও নির্দেশ দিয়েছে, চাকরি কেলেঙ্কারির তদন্ত কারী এজেন্সি অফিসারদের বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর দায়ের করা হবে না। প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারিনটেনডেন্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ২১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিলের মধ্যে অভিযুক্তদের কাছে থাকা দর্শনার্থীদের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করতে এবং ২০ এপ্রিল দুপুর ১২টার মধ্যে কারাগারের ভিজিটর রেজিস্টার আদালতে জমা দিতে। তা করতে ব্যর্থ হলে সুপারিনটেনডেন্টের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছে আদালত। বিচারপতি বলেন, কুন্তল ঘোষ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ থেকে এই চিঠি লেখার সূত্র পেয়েছেন কিনা তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। কারণ দুজনের স্বর অনেকটা একই রকম। বিচারপতি কারাগারে আসা দর্শনার্থীদের শনাক্তকরণের বিষয়ে নির্দেশ দেন, ঘোষকে বহিরাগতরা চিঠি লিখতে প্ররোচিত করেছিল কিনা। তদন্তের ধীর গতির জন্য এজেন্সিগুলির সমালোচনা করে বিচারপতি বলেন, “সময় ফুরিয়ে আসছে এবং এই নিয়োগ কেলেঙ্কারির প্রধান এখনও পুলিশের জালের বাইরে রয়েছেন। আপনাকে অবশ্যই তাড়াহুড়ো করতে হবে, অন্যথায় আদালত জানে কী করা দরকার। যারা হেফাজতে রয়েছে তারা নিছক মধ্যস্বত্বভোগী যারা কমিশনের টাকা নিয়েছিল। আসল টাকা কোথায় গেল? সেটা খুঁজে বের করা দরকার। ইডি-সিবিআই কী করছে?
কুন্তল ঘোষের আদালতে লেখা চিঠির প্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি, এই মন্তব্য করা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সমালোচনায় মুখর হলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। তিনি অভিযোগ করেন, ‘এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওনার উইশ লিস্টে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ ওকেই টার্গেট করেছেন বিচারপতি। উনি ঠান্ডা মাথায় সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেসের হয়ে অভিষেকের চরিত্র হননের চেষ্টা করছেন। বিচারকদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারবে না। এখানে কেউ বলছেন না তো। অমিতাভ লালা বাংলা ছেড়ে পালা বলেছিল সিপিএম। আজকে যা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন সেটাকে অর্ডার সিটে লেখার ওনার ক্ষমতা নেই। লিখলে দু সেকেন্ডে হায়ার কোর্টে উড়ে যাবে। উনি ব্যক্তিগত প্রচার, বিরোধীদের মধ্যে হিরো হওয়া, ক্রোধবশত, সরকার পক্ষকে বিড়ম্বনায় ফেলার জন্য, নেতিবাচক খবর তৈরির জন্য মহামান্য বিচারপতির চেয়ারকে ভয়ঙ্করভাবে মিসইউজ করছেন বলে অভিযোগ করেন কুনাল। বলছেন লোয়ার কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের পিপি-রা অভিযুক্তদের জামিন পাইয়ে দিতে সওয়াল করছেন। লোয়ার বা হায়ার কোর্টে কে দাঁড়াবেন সেটাও আপনি ঠিক করে দেবেন। লিমিট আছে সবকিছুর একটা। জাস্টিস গাঙ্গুলি বিচারপতির চেয়ারে বসে রাজনৈতিক দলের ক্যাডারে পরিণত হয়েছেন। আপনি বাংলার বিরোধী দলগুলোর হাত শক্ত করছেন। আপনি তো বিকাশ ভট্টাচার্যকে গুরু বলে মানেন। আপনার কালচার তো বিচারপতি লালা বাংলা ছেড়ে পালা। আমরা বলছি আপনি বাংলার ছেলে বাংলাতেই থাকবেন। কেন থাকবেন না? আপনি আবোল তাবোল কথা বলে যাবেন চেয়ারে বসে, কারণ আপনার চেয়ারটা রয়েছে। এত বিচারক বাংলার রয়েছেন, তাঁরাও কাজ করছেন। আর অভিজিৎবাবু কী ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠীর হয়ে বলে রয়েছেন?’ চাকরি কেলেঙ্কারির তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর না করার নির্দেশ এবং ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ও নিম্ন আদালত কর্তৃক তাদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে যুক্তি দিয়ে গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একাধিক এফআইআর দায়ের করেছে এবং তদন্ত চালাচ্ছে। এমনকি লালান শেখ মামলার (বোগটুই হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত যিনি সিবিআই হেফাজতে মারা গিয়েছিলেন) অংশ ছিলেন না এমন অফিসারদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। মনে হচ্ছে এটি এখন একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে”।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct