বাঙালি যেখানে বাস করেন মাথা উঁচু করে, সেই গর্বের বাংলায় আজ সব মূল্যবোধ ম্লান হতে বসেছে। যেখানে দুর্নীতি বাহাদুরি করছে আর স্বচ্ছতা মাথা ঠুকে মরছে। পলকে পলকে ন্যায়কে কবর দেওয়া এবং দুর্নীতি এ বাংলায় এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। কিন্তু এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কমে গেছে। যারা সমাজকে পথ দেখাবেন তারাই আজ কেমন করে যেন অপরাধের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রেখেছেন। বেশির ভাগ মানুষই রোজগারের দিকে চেয়ে থাকে ন্যায়ের দিকে ফিরেও তাকান না। নিজে বাঁচলে বাপের নাম। এ বিষয় নিয়ে লিখেছেন সনাতন পাল।
রজনী কান্ত সেন লিখে গেছেন- “তুমি নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে.....”। গানটি শুনলে বাঙালির মনে পবিত্রতা আজও উঁকিঝুঁকি মারে। একথা অনেকেই মনে করে থাকেন যে সত্যিই যদি নিষ্পাপ নির্মল হতে পারতাম, সব মলিনতা যদি মুছে যেত! এমন বাঙালি যেখানে বাস করেন মাথা উঁচু করে, সেই গর্বের বাংলায় আজ সব মূল্যবোধ ম্লান হতে বসেছে। যেখানে দুর্নীতি বাহাদুরি করছে আর স্বচ্ছতা মাথা ঠুকে মরছে। পলকে পলকে ন্যায়কে কবর দেওয়া এবং দুর্নীতি এ বাংলায় এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। কিন্তু এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কমে গেছে। যাঁরা সমাজকে পথ দেখাবেন তাঁরাই আজ কেমন করে যেন অপরাধের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রেখেছেন। যখন ন্যায়ের চেয়ে করে কম্মে খাওয়াটাই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তখন বেশির ভাগ মানুষই রোজগারের দিকে চেয়ে থাকে ন্যায়ের দিকে ফিরেও তাকান না। তারা শুধুই ভাবে নিজে বাঁচলে বাপের নাম। এই ধরণের বিশিষ্ট জনদের চুপ করে থাকা দেখে একথা অনেকেই বলছেন যে - মানুষ হবার চেয়ে কেঁচো হয়ে জন্মালেই হয়তো ভালো করতেন, শিরদাঁড়াটাই থাকত না। মাথা তুলে দাঁড়ানোরই প্রয়োজনীয়তা থাকত না, হামাগুড়ি দিয়ে চলতেন! কিছূ মানুষের পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, তাদের ভোকাল কর্ড দিয়ে শাসকের জুতোর ফিতে বাঁধলেও আপত্তির কিছু থাকবে না, বিনিময়ে শুধু কিছু দাও। কেমন যেন সব শাসককে দেখলেই লজ্জাবতীর পাতার মত নুইয়ে পড়ে। শুধুই নিজের স্বার্থে শাসকের পিঠ চুলকে দেয়। অথচ তাঁদের অনেকের ঘরেই স্বামীজির ছবি ঝোলে। যে স্বামীজি একদিন এই বাংলার মাটিতেই শ্রীরামকৃষ্ণ দেবকে গানের মাধ্যমে শুনিয়েছিলেন - “গায়ে মেখে ভক্ত পদধূলি -কাঁধে লয়ে চির বৈরাগ্যের ঝুলি...”। কোথায় গেল সেই বৈরাগ্য? যা প্রেমের ভিক্ষে করবে।
চৈত্রের শেষ। আকাশের মুখ ভার। যে কোনো সময় কালবৈশাখী ধেয়ে আসবে। এমন সময়ে বাংলা আজ লজ্জায় মুখ ঢেকেছে। বিশ্ব বাংলার লোগো ব্যবহার করা বাংলার মাথাটা আজ সারা বিশ্বের সামনে হেট হয়ে গেছে। বাঙালি বলে গর্ব করার মতো আমাদের কাছে আর কিই বা রইল বাকি ! যা ছিল সবই তো ধূলিসাৎ হয়ে গেল! একটা সময় রবীন্দ্রনাথ এই বাংলাকে নিয়েই গর্ব করে বলেছিলেন - “বাংলার মাটি বাংলার জল ....”। সেই বাংলায় শিক্ষক নিয়োগের কলঙ্কে কালিমালিপ্ত। কোটি কোটি ঘুষের টাকা, তাকে তাকে সাজানো ! শাসকের ঘরে ঝরা পাতার মত সাদা নোট গুলো সব কালো হয়ে আজ উড়ছে। ধরা পরতেই ও টাকার মালিক আর কেউ হতে চাইছেন না! বিনয় বাদল দীনেশ ক্ষুদিরামের ফাঁসি যায়নি বৃথা -তাদের শহীদের বিনিময়ে শৃঙ্খল মুক্ত হয়েছে দেশমাতৃকার। সে দেশেই কালো টাকা উদ্ধারের নামে হয়েছিল যে নোট-বন্দী। তখন ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়েই মৃত্যু হয়েছিল ১৪৪ জন মানুষের, সে কি সবই বৃথা গেল ! এরা তাহলে কি সাহেবদের চেয়েও ধুরন্ধর? তাই যদি না হবে! তাহলে এতো কিছুর পরেও শাসকের কাছে এতো কালো টাকা এলো কি করে? বাতাসে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে আরও কোটি কোটি এমন ঘুঁষের টাকা রয়েছে এ বাংলায়, তারও রং নাকি কালো। নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে মন্ত্রী মশাই আর তার বান্ধবী জেলে। বঞ্চিতরা পথে পথে শুধু মাথা ঠুকেই মরে! আর ওদিকে দুর্নীতির আসল পান্ডা নাকি হাসে মুচকি মুচকি! এ বাংলার মানুষ কখনও একসাথে এতো নোটের ছবি সিনেমাতেও দেখেননি। অনেকে বলছেন টিভি, মোবাইল, খবরের কাগজ চারিদিকেই নাকি শুধু টাকা আর টাকা - শুধু নিজের মানি ব্যাগটাই ফাঁকা! শুনেছি এখানে নাকি কারো পাতে ভাজা ইলিশের গন্ধ আর কারো থালায় পান্তার জলেরও আকাল! তাই বুঝি এতো সব কান্ড! সদ্য বিদায়ী মন্ত্রী মশাই বলেন- “কোনো টাকা আমার নয়”। তার বান্ধবীও বলে কোনো টাকাই তার নয়। প্রশ্ন আসে, এ টাকা তাহলে কার? অমনি সদ্য পদ খোয়ানো মন্ত্রী মশাই বলেন- শরীরটা আজ তার ভালো নেই। হাটে বাজারের গুঞ্জন শুনলে একথা বেশ ভালো করেই বোঝা যায় যে মানুষ বলছেন এতো বড় দুর্নীতি নিশ্চয়ই দুজনের কান্ড নয়। প্রশাসনের মদত না থাকলে নাকি এখনও একাজ করা সম্ভব নয়! সঠিকটা বের করার দায় তদন্তকারীদের। অনেকে এটাও বলছেন চটি থেকে শাড়ি এ রাজ্যে যখন সবই সাদা তখন কালো হল শুধুই কোটি কোটি টাকা? ইডি বলে আমি বড়, উনি বলেন আমি! ওদিকে মুখ লুকিয়ে হাসেন রাজনীতির চোরাকারবারি!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct