রমজান মাসে পবিত্র মসজিদে ইসরাইলী পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলার বিরুদ্ধে মিশর, জর্ডান ও সউদি আরব নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। মুসল্লিদের উপর বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে আরব বিশ্বের নিন্দা ও প্রতিবাদ প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বুধবার দ্বিতীয়বারের মতো আল আকসায় প্রবেশ করে নির্বিচার হামলা চালায় ইসরাইলি পুলিশ। লিখেছেন ফৈয়াজ আহমেদ....
পবিত্র রমজান মাসে অন্যতম পবিত্র স্থান আল আকসা মসজিদের ভেতরে নামাজরত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে ইসরাইলী পুলিশ। মঙ্গলবার ভোরবেলা আল আকসা মসজিদের মুসল্লিদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, স্টান গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে মসজিদে প্রবেশ করে ইসরাইলী পুলিশ। ইট-পাথর ছুঁড়ে ও পটকা ফাঁটিয়ে প্রতিরোধে অংশ নেয়া তরুণ মুসল্লিদের সাথে চরম বর্বর আচরণ করে আগ্রাসী বাহিনী। মসজিদ থেকে চার শতাধিক মুসল্লিকে ধরে নিয়ে গেছে তারা। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইসরাইলের শহরগুলো লক্ষ্য করে কয়েকটি রকেট ছোঁড়ার পর ইসরাাইলী বিমান বাহিনী হামাস নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে বিমান হামলা চালিয়েছে। আল আকসায় ইসরাইলী পুলিশের রেডলাইন অতিক্রম ও বাড়াবাড়ির বিষয়ে মাহমুদ আব্বাস ও হামাসের পক্ষ থেকে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। রমজান মাসে পবিত্র মসজিদে ইসরাইলী পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলার বিরুদ্ধে মিশর, জর্ডান ও সউদি আরব নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। মুসল্লিদের উপর বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে আরব বিশ্বের নিন্দা ও প্রতিবাদ প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে বুধবার দ্বিতীয়বারের মত আল আকসায় প্রবেশ করে নির্বিচার হামলা চালায় ইসরাইলী পুলিশ।
চুয়াত্তর বছর আগে পশ্চিমা বিশ্বের মদতে ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে অবৈধ পন্থায় ইসরাইল রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর থেকেই উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনি ও আরব প্রতিবেশীদের উপর ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন একটি সাধারণ নিয়মে পরিনত হয়েছে। জায়নবাদী ইসরাইলীদের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের অন্ধ পক্ষপাত ও সমর্থন মজলুম ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া নির্মমতা বাড়িয়ে তুলেছে। যেখানে পশ্চিমারা সারাবিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ছবক দিয়ে বেড়ায়, সেখানে সাত দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের আগ্রাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তারা নিরবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। চক্ষুলজ্জার খাতিরে ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে কখনো কখনো ইসরাইলী হামলার নিন্দা করা হলেও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষায় তাদের ভূমিকা শুধুমাত্র ক্ষীণস্বরে লিপ সার্ভিসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারা কখনো জায়নবাদ প্রভাবিত ইঙ্গ-মার্কিন অক্ষ থেকে বের হতে পারেনি। এমনকি মুসলমান রাষ্ট্রগুলোর সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সংস্থা ওআইসি’ও ইসরাইল প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধভাবে জোরালো ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ওআইসি, আরবলীগসহ শান্তিকামী মুসলমান রাষ্ট্রগুলো যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা খুব কঠিন বিষয় নয়। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ভূ-রাজনীতির কাছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ঐক্য, শান্তি, নিরাপত্তা ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা জিম্মি হয়ে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ছাড়া ইসরাইলীদের মানবতাবিরোধী আগ্রাসন-অপরাধ চালিয়ে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না।
পশ্চিমা বিশ্বের ষড়যন্ত্র, আরব-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়ার মিথ্যা ভড়ং এবং ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলী বাহিনীর যত্রতত্র বিমান হামলা ও টার্গেট কিলিংয়ের বর্বরতা ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মনোবল ও শক্তি ভেঙ্গে দিতে পারেনি। গত দশকে একাধিকবার হামাস-হিজবুল্লাহর প্রতিরোধ ও পাল্টা আক্রমনের মুখে ইসরাইলী বাহিনীকে পরাস্ত হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে পশ্চিমাদের মধ্যস্থতায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রত্যাশা, প্রতিশ্রুতি এবং জাতিসংঘের কনভেনশন অগ্রাহ্য করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন জেরুজালেমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দ্বিরাষ্ট্রকেন্দ্রিক সমাধানের পথকে আরো জটিল করে তুলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালা বদল ঘটলেও ইসরাইল প্রশ্নে তার ভূমিকার তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায় না। পশ্চিমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিলিস্তিন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রত্যাশা ব্যর্থ হয়েছে। সাত দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা জায়নবাদীদের হাতে মার খাচ্ছে। পনের বছর ধরে গাজার উপর ইসরাইলের সর্বাত্মক অবরোধ চলছে। ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রশ্নে আরবদের ঐক্য ও বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। আল আকসা মসজিদের অবমাননা এবং নামাজরত মুসলমানদের উপর উস্কানিমূলক হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বের সব মুসলমানদের দাঁড়াতে হবে। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে পশ্চিমা বিশ্ব এবং রাশিয়া-চীন- ইরানের নতুন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মেরুকরণ চলছে। ফিলিস্তিন প্রশ্নে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিনের বক্তব্য ইতিবাচক। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে ওআইসি, আরবলীগ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের অবস্থান ও ভূমিকা স্পষ্ট হওয়া জরুরি। ইসরাইলী বাহিনীর বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বীকৃতি এখন সময়ের দাবি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct