আপনজন ডেস্ক: সামনে পঞ্চয়েত নির্বাচন। তার আগে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এক ধরনের ঠান্ডা লড়াই প্রকাশ্যে। লড়ােইয়ের স্রোত পৌঁছে গেল খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরবারে। কলকাতা পুরসভা শহরে পার্কিং ফি বৃদ্ধি নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিযেছে তার বিরুদ্ধে সরব হন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। সাংবাদিক সম্মেলন করে কুনাল জানিয়ে দেন, পার্কিং ফি বৃদ্ধি প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তা হয়েছে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে। কলকাতার মেয়র মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কথা জানার আগে দলের মুখপাত্র মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বোঝাই যাচ্ছে মেয়র তথা রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কুনাল ঘোষ কিংবা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভাজন তৈরি হয়েছে। অবশ্য শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের সাংবাদিক সম্মেলন বুঝিয়ে দিল, সাগরদিঘিতে সংখ্যালঘু ভোটে ধস নামার পর তৃণমূলের ‘সংখ্যালঘু’ মুখ ফিরহাদ হাকিম এখন অনেকটাই ব্রাত্য। উল্লেখ্য, পয়লা এপ্রিল থেকে কলকাতায় নতুন পার্কিং ফি চালুর কথা ঘোষণা করা হয়। কলকাতা পুরসভার নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ঘন্টায় দু’চাকা গাড়ির জন্য পার্কিং ফি বাবদ ১০ টাকা করে দিতে হবে বলে জানানো হয়। আগে যা ছিল ঘণ্টা প্রতি ৫ টাকা। চার চাকার গাড়ির জন্য আগে প্রতি ঘণ্টায় পার্কিং ফি দিতে হত ১০ টাকা। ১ এপ্রিল তা করা হয় ২০ টাকা। পাশাপাশি বাস এবং লরি রাখার জন্য ঘণ্টাপিছু পার্কিং ফিও অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে তৃ কুণাল ঘোষ বলেন, ‘পার্কিং এর খরচ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষ যারা পার্কিং করেন তাদের অনেক টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। বিষয়টা আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছেছে। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নীতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের উপর যেন কোনও চাপ না পড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে ফি বাড়ানো হয়নি। আজকের মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। এই মর্মে কলকাতার মহানাগরিকের কাছে বার্তা পৌঁছে গিয়েছে।
এই বর্ধিত পার্কিং ফি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও সাংবাদিক সম্মেলনে জানান কুনাল ঘোষ। অবিলম্বে সেই পার্কিং ফি প্রত্যাহার হচ্ছে বলে ধন্যবাদ জানিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে টুইট করা হয়। তবে, তার পরেই দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ সংবাদ মাধ্যমের কাছে মুখ খোলায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমের সামনে বলা ঠিক হয়নি। আমার কাছে এখনো পর্যন্ত এই নিয়ে কোনো নির্দেশ আসেনি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দেশ এলে অবশ্যই প্রত্যাহার করে নেব। কিন্তু রাত গড়াবার আগেই মুখ্যমন্ত্রী ফিরহাদের সঙ্গে কথা বলে গোটা বিষয়টিতে ইতি ঘটানোর নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে বর্ধিত পার্কিং ফি প্রত্যাহার করা নির্দেশ দেন। মেয়র ফিরহাদ হাকিম তৎক্ষণাৎ তা মেনে নেন। ফলে, পুরনো হারে কলকাতায় পার্কিং ফি বহাল থাকছে। যদিও মেয়র ও কুনালকে ঘিরে এই সংঘাত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কিছুদিন আগে দলের তরফ থেকে দলের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে নিষেধ করা হয়েছিল ফিরহাদকে। তারপরেই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় “কণ্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে” কবিতার লাইন ঊদ্ধৃত করে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করেছিলেন। তবে, সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলের হার পর যে ফিরহাদের উপর দলীয় নেতৃত্ব আর সন্তুষ্ট তার ইঙ্গিত মিলেছিল সম্প্রতি ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ায়। মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ-মালদার পর্যবেক্ষক পদেও তাকে রাখা হয়নি। সেই জায়গায় স্থান পেয়েছেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct