ইউক্রেনের বেসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে বোমা ছোড়ার মধ্য দিয়ে যে বিভীষিকাময় পরিবেশ তৈরির নীলনকশা করে রাশিয়ান বাহিনী, তা আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত। রাশিয়ান সেনাদের কৌশল খুব একটা কাজে আসছে না। রুশ সেনা বহরে লাশের সারি ক্রমাগতভাবে দীর্ঘতর হচ্ছে! নিয়ে লিখেছেন পিটার ডিকিনসন। আজ শেষ কিস্তি।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এর ফলে দেশে-বিদেশে পুতিনের অবস্থান যারপরনাই দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি মিত্র চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মস্কো সফরও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উজ্জীবিত করতে পারেনি পুতিনকে! ব্যর্থতার গ্লানি দূর হয়নি বন্ধু শিকে কাছে পেয়েও! অর্থাৎ, পরিষ্কার হিসাব—বেলারুশে পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনের যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন পুতিন, তা যে তার হতাশার বহিঃপ্রকাশ—এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই! এটা এখনো পরিষ্কার নয়, ইউক্রেনে সামরিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে রাশিয়া ঠিক কী কৌশল আঁটছে। ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা সম্প্রতি ‘সামরিক উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে’ বলে সবাইকে বলে বেড়ানো শুরু করেছেন। রুশ কর্মকর্তাদের এ প্রচেষ্টা গুজব বই আর কিছুই নয়! ঝিমিয়ে পড়া রাশিয়ান বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধির জন্য এটা ক্রেমলিনের অব্যাহত প্রচেষ্টার অংশ মাত্র! যাহোক, ক্রেমলিন যত কৌশলই অবলম্বন করুক না কেন, ইউক্রেনের মাটিতে বিজয় পুতিনের জন্য অধরাই থেকে যাবে। এর কারণ, রাশিয়া যে পথে হাঁটছে তা ‘বাস্তবতার বিপরীত’! যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে ব্যবহৃত অস্ত্রভান্ডারই এখন রাশিয়ার সম্বল। অন্য কোনো উপায় না পেয়ে একেই গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন মনে করছেন পুতিন। কিন্তু অত্যাধুনিক ‘পশ্চিমা প্রযুক্তি’ ও ইউক্রেনের উজ্জীবিত বাহিনীর সামনে সেকেলে অস্ত্র সরঞ্জামসহ ধুঁকতে থাকা রাশিয়ান বাহিনীর অবস্থা কেমন হবে, তা সহজেই অনুমেয়। মুখে যাই বলুন না কেন, এ সত্য অজানা নয় পুতিনেরও। মূলত এ কারণেই নতুন করে ‘পারমাণবিক কার্ড’ খেলছেন পুতিন! তবে এ কথাও বলে রাখা দরকার, ‘পুতিনের পারমাণবিক হুমকি ফাঁপা হতে পারে’—এ কথা জানার পরও তাকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। যুদ্ধে যতই নাস্তানাবুদ হতে থাকবেন পুতিন, পারমাণবিক হুমকি ততই বাড়াবেন তিনি। চূড়ান্ত পর্বে যখন তিনি বুঝতে পারবেন, সব সম্ভাবনা একে একে মুখ থুবড়ে পড়েছে, তখন সর্বহারা পুতিন যে কোনো কিছু করে বসতে পারেন! একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ কথাও মাথায় রাখতে হবে, কোনো অবস্থাতেই ‘পুতিনের ভয় দেখানোর কৌশল’কে সফল হতে দেওয়া যাবে না। যদি ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে পুতিন কোনোভাবে সফল হয়ে যান, তবে পরাজয়ের গ্লানি ঝেড়ে ফেলে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠবেন তিনি। এক্ষেত্রে নিজের খেয়ালখুশিমতো যা ইচ্ছে তাই করে বসতে পারেন তিনি, যা হবে বিশ্বের জন্য বড় বিপদের কারণ। সব থেকে বড় ভয়, নিরাপত্তার প্রশ্নে বিশ্বব্যাপী বিধ্বংসী পরিণতি ডেকে আনতে পারে ‘পারমাণবিক হুমকি’। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের স্বাভাবিক উপাদান হয়ে উঠতে পারে ‘পারমাণবিক ভীতি’। ইউক্রেনের মতো করুণ ভাগ্য এড়াতে বিশ্বের দেশগুলো নিজস্ব পারমাণবিক শক্তি অর্জনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে পারে। অস্ত্রাগার নির্মাণের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। অর্থাৎ, পুতিনের পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল ঠেকানোর কোনো বিকল্প নেই। তাই বেলারুশে পুতিনের পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণায় তথা ‘পুতিনের পারমাণবিক ভীতি ছড়ানো’র বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও ন্যাটো বেশ সরব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct