ধূসর মরুর বুকে প্রাণের স্পন্দন সৃষ্টির নানা প্রচেষ্টা পৃথিবীর রাজা-বাদশাহরা করে গেছেন। এমনই একটি সফল প্রচেষ্টার নাম ‘বাগে শাহজাদে মাহান’। ফারসি এ নামের অর্থ হলো মাহানের শাহজাদার বাগান। বাগানটি ইরানের কিরমান প্রদেশের মাহান অঞ্চলের মরুভূমিতে অবস্থিত। মাহান শহর থেকে এর দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। কাজার রাজবংশের সময় কিরমানের প্রশাসকরা বাগানটি নির্মাণ করেছিলেন। ২০১১ সালে ইউনেসকো বাগানটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। নির্জন মরুভূমিতে নির্মিত সবুজ বাগানটি দর্শনার্থীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। সাড়ে পাঁচ হেক্টর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বাগানের নিম্ন ভাগে রয়েছে একটি প্রবেশদ্বার এবং উপরিভাগে আছে আবাসিক ভবন। মধ্যখানে আছে কৃত্রিম ঝরনা ও দৃষ্টিনন্দন বাগান। পারসিক বাগান শিল্পের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাগে শাহজাদে মাহান। পুরো বাগানটি উঁচু প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে বাগানটি নির্মাণ করা হয়েছিল ইরাভানির সরদার মুহাম্মদ হাসসান খানের জন্য। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে আবদুল হামিদ মির্জা নাসিরুদ্দৌল্লাহ বাগানটি সম্প্রাসরণ ও পুনর্নির্মাণ করেন। তিনি ছিলেন কাজার রাজাদের নিযুক্ত প্রশাসক। বাগানের বর্তমান অবকাঠামো তাঁর সময়েই নির্মিত হয়েছিল। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হওয়ায় বাগানের কাজ অসমাপ্তই থেকে যায়। বাগানটি স্তরে স্তরে এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে যে এর উঁচু অংশ থেকে নিচু অংশে অবিরাম পানি প্রবাহিত হতে থাকে। বাগানের প্রতিটি স্তরে আছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। মূল অংশে আছে একটি পুল ও পাঁচটি ফোয়ারা। শুধু সবুজ বৃক্ষরাজি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই দর্শককে মুগ্ধ করে না; বরং বাগানের অবকাঠামো ও তার নির্মাণশৈলীও দর্শককে মুগ্ধ করে। একটি শুষ্ক অঞ্চলে অবস্থিত হলেও বাগে শাহজাদেতে হালকা মিশ্র তাপমাত্রা উপভোগ করা যায়। বাগানের ঝরনাগুলোতে নিকটবর্তী পাহাড়ের গলিত তুষারই ব্যবহার করা হয়। কেবল মধ্যাকর্ষণ শক্তির ওপর নির্ভর করেই পানির ফোয়ারা ও ঝরনাগুলো কাজ করে থাকে।
ফৈয়াজ আহমেদ.....
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct