ভারতের সংস্কৃতিক বিভিন্ন ধারাকে যে নামেই ডাকা হোক, তা আসলে হিন্দু রাষ্ট্র। তবে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র (থিওক্র্যাটিক স্টেট) নয়—এই মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধান হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেও হোসাবালে। আরএসএসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারণী সংগঠন অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার বৈঠকে সম্প্রতি এই মন্তব্য করেছেন হোসাবালে। ১২ থেকে ১৫ মার্চ উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সামালখায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আরএসএসের প্রধান মোহন ভগবতসহ এই বৈঠকে সংগঠনের সব শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। লিখেছেন শুভজিৎ বাগচী...
ভারতের সংস্কৃতিক বিভিন্ন ধারাকে যে নামেই ডাকা হোক, তা আসলে হিন্দু রাষ্ট্র। তবে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র (থিওক্র্যাটিক স্টেট) নয়—এই মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধান হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেও হোসাবালে। আরএসএসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী সংগঠন অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার বৈঠকে সম্প্রতি এই মন্তব্য করেছেন হোসাবালে। ১২ থেকে ১৫ মার্চ উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সামালখায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আরএসএসের প্রধান মোহন ভগবতসহ এই বৈঠকে সংগঠনের সব শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে হোসাবালে বুঝিয়ে বলেন, রাষ্ট্র (স্টেট) এবং জাতির (নেশন) ফারাকের কথা। অনুষ্ঠানে হোসাবালে বলেন, ‘হিন্দু রাষ্ট্র সম্পর্কে সংঘ (আরএসএস) আগেই বলেছে যে এটি একটি সাংস্কৃতিক ধারণা। এটি ধর্মভিত্তিক ধারণা নয়। ১০০ বছর ধরে আমরা বলে আসছি, ভারত আসলেই একটি হিন্দু রাষ্ট্র, একে নতুন করে (হিন্দু রাষ্ট্র) বানানোর প্রয়োজন নেই। এখানে বলা দরকার যে রাষ্ট্র (স্টেট) এবং জাতি (নেশন) দুটি পৃথক বিষয়।’ হোসাবালে বলেন, সংবিধান দ্বারা যে প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে, তা হলো রাষ্ট্র। জাতি একটি সাংস্কৃতিক চিন্তা। জাতি হিসেবে ভারত হিন্দু। এখানকার সাংস্কৃতিক যে ধারণা রয়েছে, তাকে নানা নামে ডাকা যেতে পারে। হিন্দু বলা যেতে পারে, ইন্ডিক বলা যেতে পারে, আর্য বা সনাতনও বলা যেতে পারে। আরও হয়তো কয়েক শ নাম দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আসলে তা হিন্দু রাষ্ট্র এবং সেই কারণেই সেটি একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নয়। অর্থাৎ, কার্যত ভারতের ‘স্টেট’ এবং ‘নেশন’ দুটিই আদতে হিন্দু হলেও, ভারতকে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করেননি হোসাবালে। সংবিধান নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রকেও হিন্দু রাষ্ট্রের সংজ্ঞার বাইরেই রেখেছেন। আরএসএস ভারতের এই মুহূর্তে প্রধান হিন্দুত্ববাদী এবং জাতীয়তাবাদী সংগঠন যার বিভিন্ন শাখা রয়েছে। রাজনৈতিক শাখার নাম ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিজেপির জাতীয় সভাপতি জগতপ্রকাশ নাড্ডা এবং সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার তিন দিনের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
জনসংখ্যার হার প্রসঙ্গে হোসাবালে: ভারতে জনসংখ্যার সাম্য ভেঙে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেন হোসাবালে। তিনি কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা দেশের নাম করেননি, যেখান থেকে শরণার্থীরা আসার কারণে ভারতে জনসংখ্যার অসাম্য (ডেমোগ্রাফিক ইমব্যালেন্স) তৈরি হচ্ছে। হোসাবালে বলেন, ‘সংঘ (আরএসএস) কোনো নতুন কথা বলছে না। টি ভি রাজেশ্বর যখন আসামের রাজ্যপাল ছিলেন বা পরে যখন তিনি উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল হয়েছেন, তখন তিনিও এ কথা বলেছেন। তিনি আরএসএসএর স্বয়ংসেবক ছিলেন না। জনসংখ্যার অসাম্য এবং দেশের উন্নয়নের প্রশ্নে কেন এই অসাম্য বিপজ্জনক, সে সম্পর্কে তিনি তাঁর মতামত দিয়েছেন। অনেকেই এই রকম মতামত অতীতে দিয়েছেন।’ অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভার বৈঠকে কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম, জাতি বা দেশের প্রসঙ্গ না তুলে শুধু ‘ডেমোগ্রাফিক ইমব্যালেন্স’-এর ওপরই হোসাবালে জোর দেন এবং বলেন যে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে তিনি এখন বলবেন না। তবে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে আরএসএসের অপর একটি শাখা সংগঠনের (অখিল ভারতীয় কার্যকরী মণ্ডল) সভার পর সাংবাদিক বৈঠকে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় হোসাবালে বলেছিলেন যে বাংলাদেশের কারণেই ভারতের কিছু রাজ্যে জনসংখ্যার অসাম্য বাড়ছে। অক্টোবর মাসে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের কারণে উত্তর বিহারের জেলা যেমন পূর্ণিয়া বা কাটিহারে জনসংখ্যার অসাম্য বাড়ছে। হোসাবালে আরএসএসের একজন গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী এবং সম্ভবত ভবিষ্যতে তিনি সংগঠনটির প্রধান হবেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর এবং আরএসএসের জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে মন্তব্যের প্রভাব রাজনীতিতে পড়েছিল। তাঁর মন্তব্যের কিছু আগে এবং পরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা (যেমন আসামের মুখ্যমন্ত্রী) বলতে শুরু করেন যে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্মহার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে।বিষয়টি নিয়ে ভারতে বিতর্ক হয় এবং সম্ভবত সে কারণেই গত তিন দিনের বৈঠকের পর নির্দিষ্টভাবে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী বা দেশের নাম বলেননি হোসাবালে। তবে ভারতে ‘ডেমোগ্রাফিক ইমব্যালেন্স যে বড় বিপদ, সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন। আর সেটা মনে করিয়ে দিতে গিয়ে তিনি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নামও নিয়েছেন। হোসাবালে বলেন, ভারতে জনসংখ্যার সাম্য ভেঙে পড়ার কারণে নানান প্রশ্ন ওঠে। এ সম্পর্কে অতীতে সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছেন, নির্বাচন কমিশনের এক সাবেক প্রধান টি এন শেসন বলেছেন। এমনকি মহাত্মা গান্ধীও এই সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। জনসংখ্যার অসাম্যের কথা শুধু আরএসএস নয়, আরও অনেকেই মনে করিয়ে দিয়েছেন।আরএসএসের সর্বোচ্চ কমিটির বৈঠকের পর হোসাবালের মন্তব্য বুঝিয়ে দিচ্ছে, আগামী দিনে কোন কোন বিষয়ের ওপর জোর দিতে চলেছে বিজেপি এবং আরএসএস।
কৃতজ্ঞতা: প্র. আ.
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct