দেবাশীষ পাল, মালদা, আপনজন: স্যার আপনি জেয়েন না স্যার ? আপনাকে ছাড়া বিদ্যালয়ে আমাদের ভালো লাগবে না। শিক্ষকের বিদায় বেলায় ছাত্রদের হাত ধরে এখনো অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বক্তব্য শোনা গেল এক শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানে। বিশিষ্ট শিক্ষক অবিনাশ বিশ্বাস শুক্রবার তার কর্ম জীবন থেকে অবসর নিলেন। তিনি মালদা চক্রের সাহাপুর সি আর সির অন্তর্গত বালাসাহাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পদে অসীন ছিলেন। তার কর্ম জীবনের শেষ দিনে তাকে নিজের বিদ্যালয়ের সহকর্মী ও গোটা সাহাপুর সিআরসির গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আলাদা ভাবে সংবর্ধনা সম্মাননা প্রদান করলেন। শিক্ষক-শিক্ষিকা এদিন অবিনাশ বাবুকে মানপত্র উত্তরীয় সহ বিভিন্ন পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেন। পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহাপুরের বাসিন্দা অবিনাশ বিশ্বাস। প্রায় এক দশক আগে বালা সাহাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় তার যোগদান। বিদ্যালয় ঘর বলতে সে সময় কিছুই ছিল না। অবিনাশবাবু ই সাজিয়ে তোলেন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
এখন সাজানো গোছানো বিদ্যালয় চত্বর পাকা ঘর সাজানো বাগান শিশুদের হাত ধোয়ার জলের ব্যবস্থা পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্হা বাগান রকমারি ফুলের বাগান মিড ডে মিল খাওয়ার জায়গা। সবই রয়েছে বিদ্যালয়ে। বর্তমানে বিদ্যালয় ছাত্র সংখ্যা ২৫৮ শিক্ষক সংখা ৮। বিভিন্ন সময়ে একাধিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছে এই বিদ্যালয়। অভিনাশ বাবুর কথায় “এই বিদ্যালয়ে আমার প্রাণের বিদ্যালয়। বিদ্যালয় ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারি না। চিরকাল বিদ্যালয়ের ভালোর জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছি। বিদ্যালয়ের সকল ছাত্র ও শিক্ষক আমার কাছে খুব প্রিয়।” অভিনাশ বাবুর সহকর্মী অরূপ সরকার এর বক্তব্য “ কাল থেকে আপনি বিদ্যালয়ে আসবেন না আমরা ভাবতেই পারছি না। আমরা চাই আপনি প্রতিদিন বিদ্যালয় আসুন।” বালাসাহাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আরাধ্যা সরকার তার অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে শিক্ষকের হাত ধরে একটাই আবেদন জানায় “প্লিজ আপনি চলে যেয়েন না স্যার!” উপস্থিত মালদা চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক ভরত ঘোষ অবিনাশ বাবুর কর্মদক্ষতা ও বিদ্যালয় ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি তার ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেন। অবিনাশ বাবু তার কর্মজীবনে শুরু করেন ২০০১ সালের ১৬ জানুয়ারি এন জি হাতিডুবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর ২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর বালাসাপুর বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগদান করেন। দীর্ঘ এক দশক ধরে বিদ্যালয়ে পঠন পাঠন সুখ-দুঃখ উন্নয়নের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীকভাবে জড়িত হয়ে যান এই শিক্ষক। মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে ব্রতি থাকেন সারাটা জীবন। এর আগে মালদা চক্রের সাহাপুর জিপির মধ্যে তিনি বেস্ট টিচার আওয়ার্ড পান। এদিনের বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাহাপুর সি আর সির সকল শিক্ষক শিক্ষিকা সহ মালদা চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক ভরত ঘোষ। বিদ্যালয়ের জমিদাতা বনমালি কূন্ডুর পৌত্র সুশান্ত কূন্ডূ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct