সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: শুক্রবার সকালে শিবপুরের কাজীপাড়া এলাকায় নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যা কয়েক ঘন্টার মধ্যে পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনে এবং এর আগের দিন রামনবমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে হাওড়ায় ব্যাপক সহিংসতার পরে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী বিজেপির মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বসু এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে রাজ্য প্রশাসনের কাছ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার রিপোর্ট চেয়েছিলেন। রাজ্যপাল বসু শনিবার হাওড়ার সহিংসতা কবলিত এলাকা পরিদর্শনের পরিকল্পনা করছেন বলে অনিশ্চিত খবর ছড়িয়ে পড়লেও রাজভবনের এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়েছে, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বসু শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে “গোপন আলোচনা” করেন এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব বিপি গোপালিকা রাজ্যপালের সাথে দেখা করেন। বৃহস্পতিবার দাঙ্গাকারীদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের গাফিলতির কথা স্বীকার করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দেন, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দিন শেষ হওয়ার আগেই তিনি দু’দিনের সহিংসতার তদন্তের দায়িত্ব রাজ্য সিআইডির কাছে হস্তান্তর করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজভবন থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে এমনই দাবি করেছেন রাজ্যের বর্তমান রাজ্যপাল। তিনি জানান, গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে এবং কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে তার ওপর নজরদারি করতে রাজভবন একটি স্পেশাল সেল তৈরি করেছে। রাজ্যপাল তার বিবৃতিতে বলেন, তার সঙ্গে ইতিমধ্যে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবের আলোচনা হয়েছে। শান্তি রক্ষায় এবং সাধারণ মানুষ এর জীবন রক্ষা করতে যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করার তা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বলে তাকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার গোপন আলোচনায় রাজ্যে সাধারন মানুষের জীবন রক্ষা করতে, রাজ্য সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানানো হয়েছে।
রাজ্যপাল তার বিবৃতিতে এই রাজ্যে এই ধরনের ঘটনা কখনোই সঠিক পদক্ষেপ নয় এবং সাধারণ মানুষের ওপর এবং সম্পত্তির ওপর আক্রমণের তীব্র ভাষায় নিন্দা করেন। তার স্পষ্ট অভিযোগ, মানুষকে বোকা বানাতে পারবে ভেবে হিংসার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, শুক্রবার বিকেলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কাছ থেকে টেলিফোনে গোটা পরিস্থিতি জেনে নেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজভবনের রাজ্যপালের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন এবং অতি দ্রুত তাকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে রাজভবনে ডেকে পাঠানো হয়। অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারির পরেই বিশাল পরিমাণ পুলিশ ফোর্স নামানো হয় হাওড়ায়। শুক্রবার দুপুরে নতুন করে ওই এলাকায় গোলমাল ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। হাওড়ার জিটি রোড সংলগ্ন কাজীপাড়া সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। হাওড়া পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার করা হয়, দুজন থেকে তিনজনের বেশি ব্যক্তি এক জায়গায় জড়ো হয়ে জটলা করলে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে। সমস্ত মানুষজনকে রাস্তা ছেড়ে তাদের বাড়িতে ঢুকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct