আপনজন ডেস্ক: ভারতে, যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদে মহিলাদের অত্যন্ত কম প্রতিনিধিত্ব, সেখানে বিচার বিভাগও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে ভারতে মহিলার সংখ্যা হবে ৪৮.৪ শতাংশ, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। কিন্তু উচ্চতর বিচার বিভাগীয় পদে মহিলাদের অংশগ্রহণ মাত্র ১২ শতাংশ। আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ মার্চ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টে মোট ৮৬০ জন বর্তমান বিচারকের মধ্যে মাত্র ১০৯ জন মহিলারয়েছেন। এটি মোট সংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ। আর মাত্র দু’জন মুসলিম মহিলা বিচারক রয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সম্প্রতি বিচার বিভাগে প্রান্তিক সম্প্রদায় এবং মহিলাদের কম প্রতিনিধিত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্তিমূলক বিচার ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আমরা চাই বিচার বিভাগ লিঙ্গ, প্রান্তিক সম্প্রদায়, তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হোক।তেলেঙ্গানা রাজ্যে সর্বোচ্চ যেখানে হাইকোর্টের মোট ৩২ জন বিচারপতি, তাদের মধ্যে ৯ জন মহিলা যা ২৮ শতাংশ । কিন্তু, রাজ্যের উচ্চ আদালতে বিচারক হিসাবে মুসলিম মহিলাদের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। মাদ্রাজ হাইকোর্ট ২৪ শতাংশ শেয়ার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ৫৮ জন বর্তমান বিচারকের মধ্যে সর্বাধিক ১৪ জন মহিলা থাকার গৌরবও রয়েছে। বিহার এবং উত্তরাখণ্ডের মতো বড় রাজ্যগুলিতে মহিলা বিচারকদের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। মণিপুর, মেঘালয় এবং ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যগুলির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, যেখানে বিচার বিভাগীয় পদে মহিলাদের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। তবে মাত্র দুটি উচ্চ আদালতে মুসলিম মহিলা বিচারপতি রয়েছেন খাজি জয়াবুনিসা মহিউদ্দিন এবং মোকশা খাজুরিয়া কাজমি। তারা যথাক্রমে কর্নাটক এবং জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখ হাইকোর্টের বর্তমান বিচারপতি। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ হাইকোর্টে দু’জন মহিলা সহ ১৫ জন বর্তমান বিচারপতি রয়েছেন। কর্নাটক হাইকোর্টের মোট ৫৩ জন বিচারকের মধ্যে মাত্র পাঁচজন মহিলা।
আইন শিক্ষায় নারীদের তালিকাভুক্তি:
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উচ্চশিক্ষায় মহিলাদের তালিকাভুক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিসংখ্যান ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন মন্ত্রকের প্রকাশিত “উইমেন অ্যান্ড মেন ইন ইন্ডিয়া ২০২২” রিপোর্ট অনুসারে কলা, বিজ্ঞান, শিক্ষা, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞানের মতো শাখায় মহিলাদের সংখ্যা পুরুষদের চেয়ে বেশি। এর পাশাপাশি আইন শিক্ষায় নারীদের তালিকাভুক্তি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে উচ্চতর বিচার ব্যবস্থায় তাদের প্রতিনিধিত্ব স্থবির হয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ বছর বিচার বিভাগে মহিলাদের অংশগ্রহণ গত বছরের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের নারী ও পুরুষের হিসাব অনুযায়ী, এই হার ছিল ১৩ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে কমে দাঁড়িয়েছে ১২.৭১ শতাংশে। ২০১৪-১৫ সেশনে মোট ৩,০১,৮১০ জন মহিলার মধ্যে ৯৪,২০১ জন মহিলা স্নাতক অধ্যয়নের জন্য আইন বেছে নিয়েছিলেন। সে বছর মহিলাদের তালিকাভুক্তির হার ছিল ৩১ শতাংশ, যা ২০১৮-১৯ সেশনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩.৫৮ শতাংশে। আইন বিভাগের মোট ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৯ জন নারী। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে সারা দেশে উচ্চ পদে ৭১৩ জন বিচারক ছিলেন। এর মধ্যে ৭৯ জন মহিলা রয়েছেন। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৪,৭৮,০১২ জন স্নাতক শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৩.৮৬ শতাংশ বা ১,৬১,৮৯৭ জন মহিলা আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে উচ্চ আদালতে ৭৫ জন মহিলাসহ ৬৮২ জন বিচারপতি ছিলেন। দিল্লির সমাজকর্মী ও আইনজীবী কাওয়ালপ্রীত কৌর মনে করেন, বিচার ব্যবস্থায় মহিলাদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব কেবল মাত্র সম্মিলিত মানসিকতার পরিবর্তন, নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা এবং আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘সামগ্রিক ব্যবস্থাই মহিলাদের বাড়ি থেকে আদালতে যেতে বাধা দিচ্ছে। মহিলাদের বিচার বিভাগে যেতে উৎসাহিত করা হয় না। এটা দেখা যায়, বিচার বিভাগ পুরুষদের জন্য, কেবল তারাই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। এমনকি যদি কোনও মহিলা প্র্যাকটিশের সিদ্ধান্ত নেন তবে তিনি উচ্চতর পদে পৌঁছাতে সক্ষম হন না। কারণ টি বিবেচনা করা হয় মহিলারা এই বড় দায়িত্ব গ্রহণের জন্য কিছুটা দুর্বল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct