এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: লোকসভা থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অপসারণের পর তার প্রতি সমর্থনের পুনরাবৃত্তি করে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাংসদ পদ এবং বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিধায়ক পদ খারিজের দাবি তুলেছেন। বুধবার কলকাতার শহীদ মিনার ময়দানে তৃণমূল যুব কংগ্রেস এবং দলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুলের মতো একই অপরাধের জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্য বিরোধী দলের জন্য একই শাস্তির দাবি জানান। এদিকে আজ একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যকে বঞ্চনা করার অভিযোগে কলকাতায় দু’দিনের ধর্না-অবস্থানে শামিল হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের ‘বৈষম্যের’ প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দু’দিনের ধর্না থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরে জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে অভিষেক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এ নিয়ে অভিষেক বলেন, রাহুল গান্ধিকে সংসদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।কিন্তু কী বলেছেন রাহুল গান্ধি? তিনি নীরব মোদী, ললিত মোদী এবং নরেন্দ্র মোদীর নাম উল্লেখ করেছিলেন। তিনি যা বলেছেন তা আমি সমর্থন করি না এবং আমি কারও অনুভূতিতে আঘাত করতে চাই না। কিন্তু আমি বাংলার মানুষকে জিজ্ঞেস করতে চাই... মোদিকে চোর বলা যদি সমগ্র সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করার শামিল হয়, তাহলে ২০২১ সালের নির্বাচনী জনসভায় ‘দিদি, ও দিদি’ মন্তব্য করে সমস্ত মহিলাদের অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কেন সংসদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না? সমগ্র নারী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্মক ও অবমাননাকর মন্তব্য করার জন্য কেন তাকে শাস্তি দেওয়া হবে না? সেই প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। অভিষেক বলেন, ‘এখানে ‘এসটি’ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন। ‘মোদী’ বলায় যদি ‘ওবিসি’ সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত লাগার অভিযোগে রাহুল গান্ধীর দু’বছর সাজা হয়, তাহলে বীরবাহা হাঁসদা, দেবনাথ হাঁসদাদের বলেছিল এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা যে, ওরা আমার জুতার তলে থাকে! তাহলে বিরোধী দলনেতার দু’বছরের জেল হবে না কেন? আইন কী আমার জন্য আলাদা, আর আপনার জন্য আলাদা? ভারতবর্ষের আইন আমি তৃণমূল করি বলে একরকম, আর আপনি বিজেপি করেন বলে আরেক? কোথাকার বিচার?’
এরপর ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আমি আমাদের লিগ্যাল সেলের যারা দায়িত্বে আছেন যারা আইনজীবী, সুরাট কোর্টের রায়কে হাতিয়ার করে আমরা আদালতে যাব। ওবিসি সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত হয়েছে বলে যদি রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হয় তাহলে ‘এসটি’ সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত করে শুভেন্দু অধিকারী কেন জেলে যাবে না? ওই বিষয়ে আগামে এক মাসের মধ্যে পিটিশন চাই। তারপর মানুষ দেখুক বিচার ব্যবস্থা কাকে সমর্থন করছে, বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন কী না। দেশের আইন যদি গুজরাতে প্রযোজ্য হয়, তাহলে বাংলায়ও একই আইন প্রযোজ্য হবে। অভিষেক আরও বলেন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের বিরোধী দলের নেতাকে সংসদ ও বিধানসভার নিজ নিজ সদস্যপদ থেকে অপসারণের দাবিতে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব। রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হলে প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পদ খারিজ হবে না কেন সেই প্রশ্নই বারে বারে তোলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বৈষম্যের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হন অভিষেক। এবিষয়ে এক লক্ষ কোটি টাকার ওপরে কেন্দ্রীয় তহবিল আটকে রাখার অভিযোগ তুলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লির রাস্তায় বিক্ষোভ করার হুমকি দেন। অভিষেক কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, গত ২১ মাসে বাংলায় ২১টি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমএনআরইজিএ বাস্তবায়নে সিবিআই তদন্ত শুরু করার জন্য আমি আপনাকে সাহস দিচ্ছি। কিন্তু আগে এই রাজ্যের ১৭ লক্ষ পরিবারের কাছ থেকে আপনি যে টাকা আটকে রেখেছেন তা ফেরত দিন। আমি খোলাখুলিভাবে ঘোষণা করছি, তৃণমূল কংগ্রেসের কেউ যদি সেখানে কোনও দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকে তবে তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বহিষ্কার করা হবে। আর যদি আপনারা টাকা না দেন, তাহলে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি জনগণের সঙ্গে মিছিল করব এবং দিল্লিকে অচল করে দেব।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct