নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে দেশজুড়েই আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। বর্ষাকাল ক্রমশ দীর্ঘায়িত হলেও বৃষ্টির ক্ষেত্রে কিন্তু আগের হিসাব মিলছে না বললেই চলে। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা তখন না হয়ে টানা কয়েকদিনের মুষলধারে বৃষ্টির ঘটনা এখন বেশি করে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। আবার যখন উত্তরবঙ্গ প্রবল বৃষ্টিতে ভাসতে দেখা যাচ্ছে তখন দক্ষিণবঙ্গ খরার মুখে পড়ছে। বৃষ্টির এই অসাম্যতার জেরে ধাক্কা খাচ্ছে রাজ্যের কৃষিকাজে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণে দিনের পর দিন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে বাংলায়। তার জেরে বিভিন্ন চাষের ক্ষেত্রে জলের ঘাটতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে চাষিদেরও। তাই এবার সেচের জলের প্রতিটি বিন্দুর সঠিক ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রকল্পের উদ্যোগ নিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। শুরু হতে চলছে বাংলার চাষিদের জন্য নতুন প্রকল্প ‘বাংলা কৃষি সেচ যোজনা’।আগামী ১ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে শুরু হতে চলছে দুয়ারে সরকার শিবির। আর সেই শিবিরেই শুরু হতে চলছে বাংলার চাষিদের জন্য নতুন প্রকল্প ‘বাংলা কৃষি সেচ যোজনা’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিরা ফোয়ারা সেচ ও বিন্দু সেচ করে লাভবান হতে পারবেন। একই সঙ্গে কমবে জলের ব্যবহারও। এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ কেনার ব্যাপারে চাষিদের সাহায্য করবে মমতার সরকার। রাজ্যের কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফোয়ারা সেচ ও বিন্দু সেচের জন্য একটি বিশেষ যন্ত্র কিনতে হয় চাষিদের। এই প্রকল্পে সেই যন্ত্র কেনার জন্য সরকার পাইপের ব্যাসার্ধ ও দূরত্ব এবং জমির পরিমাণ অনুযায়ী ১৫ হাজার ১৯৩ টাকা থেকে ৫৪ হাজার ৬৫৭ টাকা এবং ৩৬ হাজার ১৫১ টাকা থেকে ৬৫ হাজার ৮২৭ টাকা অনুদান দেবে। এক্ষেত্রে এই অনুসেচ উপকরণ ক্রয়ের জন্য রাজ্যের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা, যাঁদের দুই হেক্টরের কম জমি রয়েছে তাঁদের ১০০ শতাংশ এবং ২ থেকে ৫ হেক্টর জমির মালিকদের নির্দেশক মূল্যের ৪৫ শতাংশ অনুদান দেবে সরকার।নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের জন্য আগামী মাসের দুয়ারে সরকার শিবিরে এই যোজনায় আবেদন করতে পারবেন চাষিরা। এর জন্য তাঁদের জমি সংক্রান্ত নথি, আধার কার্ড, মোবাইল নম্বর, ব্যাঙ্কের পাস বই এবং ছবি সহ শিবিরে আবেদন করতে হবে। চলতি আর্থিক বছরে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে দুয়ারে সরকার শিবিরেই। রাজ্যের কৃষি আধিকারিকদের মতে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক ফোয়ারা সেচ ও বিন্দু সেচের মাধ্যমে চাষ করে জলের অপচয় বন্ধ করতে পারবেন। মেশিনের মাধ্যমে একটি বিশেষ নজলের দ্বারা ফোয়ারার মতো জমিতে বিভিন্ন জায়গায় সমান ভাবে জল ছড়িয়ে যাবে। ফলে জলের খরচও অনেকখানি কমবে এবং ফলন বাড়লে লাভের পরিমানও বাড়বে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct