আপনজন ডেস্ক: পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে অবশেষে অচলাবস্থা কাটতে চলেছে। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছে রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে এখনই কোনও হস্তক্ষেপ করতে চায় না। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এদিন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্তই নেবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে কলকাতা হাইকার্ট বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আর্জিও খারিজ করে দিয়েছে। এরাজ্যের ওবিসি সম্প্রদায়ের গণনার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে পঞ্চায়েতে আসন সংরক্ষণের বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই মামলাতেই এদিন হাইকোর্ট এই পর্যবেক্ষণ করেছে। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার হাইকোর্ট রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেই নিতে বলেছে। এতদিন পর্যন্ত রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে পারছিল না কমিশন। তবে এদিন আদালত তার মতামত স্পষ্ট করে দেওয়ায় জটমুক্ত হল পঞ্চায়েত নির্বাচন। ফলে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আর কোনও বাধা থ্কল না। সম্ভবত মে মাসের মধ্যেই হতে পারে পঞ্চায়েত নির্বাচন। সূত্রের খবর পয়লা বৈশাখ বা ১৫ এপ্রিলের পর পর বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার ২১ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে, নিয়ম কমিশনের। এপ্রিলের শেষে বিজ্ঞপ্তি জারি হলে মে মাসের মাঝামাঝির মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন।
প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ এদিন পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করতে চায়নি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতার জনস্বার্থ মামলার রায় দিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট বলেছে, পিটিশনের ক্ষেত্রে এই পর্যায়ে কোনও হস্তক্ষেপের ফলে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন স্থগিত হতে পারে।
হাইকোর্ট এই পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করে বলেছে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি), তফসিলি জাতি (এসসি) এবং তফসিলি উপজাতিদের (এসটি) জন্য আসন সংরক্ষণের বিষয়ে আবেদনকারীর আইনজীবীর যুক্তিতে সত্যতা রয়েছে।
বিচারপতি আর ভরদ্বাজের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে ২০১১ সালের আদমশুমারির পরিসংখ্যানে ৭.৫ শতাংশ দশকীয় বৃদ্ধি এবং ২০২২ সালের আগস্ট মাসে পারিবারিক জরিপের ভিত্তিতে ওবিসি জনসংখ্যার গণনার ভিত্তিতে এসসি/ এসটি / ওবিসি জনসংখ্যার অনুপাতে অসামঞ্জস্যতার প্রভাব বিবেচনা করার জন্য উন্মুক্ত রেখেছিল। ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে বলেছে, নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন, ১৯৭৩-এর ধারা ৪-এর উপ-ধারা ২-এর শর্ত, পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচন আইন, ২০০৩-এর ধারা ১৭-এর উপ-ধারা ২এ-এর বিধান এবং পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচন বিধিমালার বিধি ২০৬-এর ২২-এর ব্যাখ্যা-২-এর শর্তের উদ্দেশ্য নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আবেদনকারীর আইনজীবী বলেন, পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৪ এবং পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচন আইন, ২০০৩ এর ধারা ১৭ এবং পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচন বিধিমালা, ২০০৬-এর বিধি ২২ অনুযায়ী, গ্রাম পঞ্চায়েতে এসসি/ এসটি এবং ওবিসিদের জন্য আসন সংরক্ষণের পরিমাণ নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করা গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসনসংখ্যার সমান হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে ৭.৫ শতাংশ ের দশকীয় বৃদ্ধি যোগ করে এবং ২০২২ সালে সমীক্ষার ভিত্তিতে অনগ্রসর শ্রেণীর জনসংখ্যার সংখ্যায় পৌঁছানোর রাজ্যের সিদ্ধান্তটি ত্রুটিপূর্ণ। কারণ এসসি / এসটি এবং ওবিসি জনসংখ্যার অনুপাত নির্ধারণের জন্য দুটি পৃথক মাপকাঠি গ্রহণ করা যায় না। তিনি বলেন, এসসি/এসটি জনসংখ্যার জন্য ২০২১ সালের আনুমানিক পরিসংখ্যান বিবেচনা করা হয় এবং ওবিসিদের জন্য ২০২২ সালের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান বিবেচনা করা হয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশন ২০২২ সালের ২৯ জুলাই এবং ২ আগস্ট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর জনসংখ্যা গণনা করার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করেছিল।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মে মাসে গ্রাম পঞ্চায়েতের মেয়াদ শেষ হওয়ায় রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন এবং এই পর্যায়ে কোনও হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই বলেই আদালতে জানান নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী। তিনি আরও বলেন, প্রতি দশ বছর অন্তর নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ ও প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সংরক্ষণ করা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct