আপনজন ডেস্ক: অবশেষে ২০১৯ সালের ‘মোদি’ পদবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের ঘটনার মানহানি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার একদিন পরেই রাহুল গান্ধীকে সংসদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হল শুক্রবার। এদিন দুপুরে রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজ করার নোটিশ জারি করে লোকসভা সচিবালয়। বিরোধী দল কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধিকে মানহানির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে গুজরাতের সুরাতের আদালত। রায় ঘোষণার মাত্র এক দিনের মাথায় কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীকে লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫১-এর ৮ (৩) ধারা অনুসারে রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজ করল সংসদ। এর ফলে, রাহুলকে আর সাংসদ হিসেবে গণ্য কর যাবে না।।যদিও কেরলের ওয়ানাদের সংাসদ রাহুল গান্ধি শুক্রবার সকালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য লোকসভায় গিয়েছিলেন। এ সময় লোকসভার অধিবেশনে ব্যাপক হট্টগোল হয়। বিক্ষোভ-প্রতিবাদের জেরে দুপুর পর্যন্ত লোকসভার অধিবেশন মুলতবি করা হয়। এরপর রাহুল চলে যান। রাহুলকে লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণার পর জরুরি বৈঠক ডেকেছে কংগ্রেস। এই বৈঠকে কংগ্রেসের স্টিয়ারিং কমিটি, সব রাজ্যের কংগ্রেসের সভাপতিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। বৈঠকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে দলটি।
বৃহস্পতিবার গুজরাতের সুরাতের একটি আদালতে রাহুল দোষী সাব্যস্ত হন। তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। তবে আদালত রাহুলকে ৩০ দিনের জামিন এবং আপিল করার সুযোগ দিয়েছেন। রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাটি হয়েছিল ২০১৯ সালে। ওই সময় লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘চৌকিদার চোর’। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘সব মোদিরা কেন চোর হয়। সব চোরের পদবি কীভাবে ‘মোদি’ হয়।’ নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে এমন মন্তব্যের পর রাহুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন বিজেপির বিধায়ক ও গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুর্নেশ মোদি। সাজা পাওয়ার পর রাহুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পর রাহুর ট্যুইট করে বলেছেন, “আমি ভারতের কণ্ঠস্বরের জন্য লড়াই করছি। আমি যে কোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত’। কংগ্রেস এই পদক্ষেপের পিছনে একটি ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অভিযোগ করেছে এবং দাবি করেছে যে রাহুল গান্ধীকে চুপ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে কারণ তিনি সরকারকে কঠোর প্রশ্ন উত্থাপন করছেন। রাহুল গান্ধীর অযোগ্য ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস নেতা তথা তিরুবনন্তপুরমের সাংসদ শশী থারুর বলেন, “আদালতের রায়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যখন একটি আপিল প্রক্রিয়াধীন ছিল, তখন আমি এই পদক্ষেপ নেওয়ার দ্রুততা দেখে স্তম্ভিত। এ ধরনের রাজনীতি আমাদের গণতন্ত্রের জন্য খারাপ।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩ সালে এক মামলার রায়ে বলেছিলেন, কোনো মামলায় কোনো সংসদ সদস্য, বিধায়ক বা বিধান পরিষদের সদস্যের দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সদস্যপদ সঙ্গে সঙ্গে খারিজ হয়ে যাবে।
অন্যদিকে, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫১-এর ৮ (৩) ধারা অনুসারে, যদি কোনো সংসদ সদস্য কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন, আর কমপক্ষে দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত হন, তাহলে তাঁর পদ খারিজ হবে। দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও দুই বছরের সাজার কারণে সংসদ সদস্য হিসেবে রাহুল স্বয়ংক্রিয়ভাবে অযোগ্য হয়ে যাওয়ায় সংসদও তাতে সিলমোহর দিল।তবে, রাহুলের সাংসদ পদ চলে যাওয়অর পর কংগ্রেস নেতৃত্ব দলের সদর দফতরে জড়ো হয়ে সামনের ভবিষ্যতে কোন পথে এগনো হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু করে। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরা, কে সি বেণুগোপাল, জয়রাম রমেশ, রাজীব শুক্লা এবং তারিক আনোয়ার এবং সিনিয়র নেতা পি চিদাম্বরম, আনন্দ শর্মা, অম্বিকা সোনি, মুকুল ওয়াসনিক, সালমান খুরশিদ এবং পবন কুমার বনসল সহ শীর্ষ কংগ্রেস নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এই দিনটিকে ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য ‘কালো দিন’ আখ্যায়িত করে কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে ক্ষমতাসীন দল গান্ধি এবং অন্যান্য বিরোধী নেতাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করে গণতন্ত্রকে “শ্বাসরোধ” করছে। কংগ্রেস বলেছে, তারা আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে লড়াই করবে।কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রমেশ বলেন, আদানি ইস্যুতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা, সরকারের পররাষ্ট্রনীতি এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য চিনকে ক্লিন চিট দেওয়ায় রাহুল গান্ধীকে ইচ্ছাকৃতভাবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। রমেশ বলেন, ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্যে বিজেপি বিচলিত, যা একটি আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
কংগ্রেস নেতৃত্ব সমস্ত বিরোধী নেতাদের সমর্থনের বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং জোর দিয়ে বলেছে, আমাদের এখন বিরোধী ঐক্যের বিষয়টিকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। রাহুল গান্ধিকে অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য একতরফাভাবে এত দ্রুত গতিতে নেওয়া পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে অনেক বিরোধী দল। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে লোকসভা ও রাজ্যসভার ফ্লোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct