মালয়েশিয়ায় আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠনের ১০০ দিন পেরোতে না পেরোতেই আবারো সরকারে অস্থি’রতার গুঞ্জন উঠেছে। বিরোধী জোট পেরিকাতান ন্যাশনালের প্রধান শরিক দল পাসের প্রধান আব্দুল হাদি আওয়াং বলেছেন, যেকোনো সময় বর্তমান সরকার ভেঙে পড়তে পারে। সরকার পক্ষ হাদির এই কথাকে গুরুত্বহীন হিসেবে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। আবার বিরোধী জোটের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা শুরু হয়েছে। মালয়েশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে লিখেছেন মাসুম খলিলী। আজ প্রথম কিস্তি।
মালয়েশিয়ায় আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠনের ১০০ দিন পেরোতে না পেরোতেই আবারো সরকারে অস্থি’রতার গুঞ্জন উঠেছে। বিরোধী জোট পেরিকাতান ন্যাশনালের প্রধান শরিক দল পাসের প্রধান আব্দুল হাদি আওয়াং বলেছেন, যেকোনো সময় বর্তমান সরকার ভেঙে পড়তে পারে। সরকার পক্ষ হাদির এই কথাকে গুরুত্বহীন হিসেবে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। তবে এর মধ্যে বিরোধী জোটের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা শুরু হয়েছে। মহিউদ্দিন দাবি করেছেন তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আর হাদি আওয়াং দাবি করেছেন সরকার পতনের জন্য যেকোনো প্রচেষ্টা চালানোর অধিকার বিরোধী জোটের রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম মাস চারেক আগে মালয়েশিয়ার শাসক সুলতানদের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে বৃহৎ জোট গঠনের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল সরকার তৈরির জন্য সম্ভব সব রকম উদ্যোগ নেন। তিনি পাকাতান হারাপানের সাথে উমনুর নেতৃত্বাধীন বারিসান ন্যাশনাল এবং সাবাহ ও সারওয়াকের আঞ্চলিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি বৃহত্তর কোয়ালিশন সরকার গঠন করেন। জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেন জোট সরকার গঠনের জন্য। সরকারে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব কারা করবেন সেটি দলগুলোর ফোরামে নির্ধারণ করা হয়। কোন দলের এমপিরা যাতে বিচ্ছিন্ন হতে না পারেন তার জন্য দলের সিদ্ধান্ত অমান্য বা দল থেকে বের হয়ে গেলে সংসদ সদস্য পদ হারানোর আইনও প্রণীত হয়। এসব আয়োজনে ধারণা করা হয়েছিল পাকাতান-বারিসান জোট সরকারের পতন ঘটানোর মতো নতুন কোনো ‘শেরাটন মুভ’ এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। কিন্তু মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে যেকোনো পথে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা একটি চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। এ কারণে আগের বার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণের আগেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী পদে তিন দফা পরিবর্তন হয়। নতুন মেয়াদেও একই লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। ২০২২ সালের শেষার্ধে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে যে ফলাফল আসে তার মধ্যেই এক ধরনের অস্থিরতার বীজ রোপিত ছিল বলে অনেকের ধারণা।
এই নির্বাচনে পাকাতান হারাপান একক বৃহত্তম জোট হিসেবে আভির্ভূত হলেও তাদের আসন সংখ্যা আগের তুলনায় বেশ কমে যায়। আসন কমে যায় উমনুর নেতৃত্বাধীন বারিসান ন্যাশনালেরও। সে তুলনায় বিস্ময়করভাবে ভালো ফল করে আব্দুল হাদি আওয়াং-এর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক দল পাস। তাদের আসন সংখ্যা ১৮ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ এ। তাদের জোট অংশীদার হিসাবে বারাসাতুও মোটামুটি ভালো ফল করে। প্রধানত এই দুই দলের সমন্বয়ে গঠিত পেরিকাতান ন্যাশনাল মহিউদ্দিন ইয়াসিনকে প্রধানমন্ত্রী করতে উমনু এমপিদের কাছ থেকে গোপন হলফনামা নিয়ে সরকার গঠনের তৎপরতা চালায়। কিন্তু মহিউদ্দিনের রাজার সাথে বিরোধ দেখা দিলে পেছনের দরজা দিয়ে সরকার গঠনে তার এই উদ্যোগ সফল হয়নি। এ সময় মালয় সুলতানদের সভায় পাকাতান ও বারিসান জোট সরকার গঠনের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানানো হয়। এ জোটের সাথে পরে সাবাহ ও সাবওয়াকের প্রধান দলগুলোও সংযুক্ত হয়। সংসদে এ সরকারের আস্থা ভোটে ১১২ জনের ন্যূনতম সমর্থন প্রয়োজনের স্থলে ১৪২ জন এমপির সমর্থন মিলে। তবে মুহিউদ্দিন ইয়াসিন ও আব্দুল হাদি আওয়াংরুর জোট আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনকে শুরু থেকে মেনে নিতে পারেননি। তারা সরকারের পতন ঘটানোর উদ্যোগ নেন শুরু থেকেই। সরকারের ১০০ দিনের মেয়াদ পূর্তির সময়ে হাদি আওয়াংয়ের সরকারের যেকোনো সময় পতন ঘটার ঘোষণা এরই একটি অংশ বলে মনে হয়মুহিউদ্দিন-হাদি ছাড়াও এই প্রচেষ্টার সাথে এক সময়ের আনোয়ারের সহযোগী ও এখনকার বারাসাতু নেতা আজমিন আলি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও উমনু নেতা হিশামুদ্দিন হোসেন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরির যুগসূত্রতা রয়েছে বলে মনে করা হয়। যতদূর জানা যায়, মুহিউদ্দিন-হাদির পরিকল্পনা হলো উপপ্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদিকে প্রধানমন্ত্রী করার টোপ দিয়ে বারিসান ন্যাশনালকে সরকার থেকে বের করে আনা। বারিসান সরকার থেকে বেরিয়ে এলে জোটের অন্য অংশীদারদের সমর্থন পাওয়া যেতে পারে বলে পরিকল্পনাকারীরা মনে করেন। আনোয়ার সরকারের পতন ঘটানোর এই পরিকল্পনা এখনই পরিণত হয়ে উঠেছে বলে মনে হয় না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct