আপনজন ডেস্ক: ওভারে ছয় বলে ছয় ছক্কা আছে। স্বীকৃত ক্রিকেটে এমন ছক্কাবাজদের তালিকা একেবারে ছোট নয়। কিন্তু ছয় বলে ৬ উইকেট প্রায় দেখাই যায় না। এমন একটি ওভার বোলারদের জন্য সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত। পালমারস্টোন নর্থ বয়েজ হাইস্কুলের বোলার ম্যাট রোয়ি সেই সৌভাগ্যবানদের একজন। নিউজিল্যান্ডের স্কুল ক্রিকেটে গতকাল রোটোরোয়া হাইস্কুলের বিপক্ষে এক ওভারে ছয় বলে ৬ উইকেট নিয়েছেন রোয়ি। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘পারফেক্ট ওভার’। নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ‘স্টাফ’ জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়া রোয়ি গতকালের ম্যাচে ৬ ওভার বোলিং করে ১২ রানে নিয়েছেন ৯ উইকেট। এর মধ্যে নিজের পঞ্চম ওভারে ৬ বলে ৬ উইকেট নেন ১৩ বছর বয়সী রোয়ি। ‘সত্যি বলতে পাগলাটে-কাণ্ড। একেবারেই অবিশ্বাস্য ব্যাপার’—কিশোর বোলারটির এমন প্রতিক্রিয়াই স্বাভাবিক। তাওরাঙ্গায় সুপার এইট টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে জয় ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না পালমারস্টোন নর্থ বয়েজ হাইস্কুলের। নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট নিয়ে দলকে ভালো শুরু এনে দেন পেসার রোয়ি। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন নিজের পঞ্চম ওভারে এসে—প্রথম বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ, পরের চারটি বোল্ড এবং শেষ আউটটি এলবিডব্লু। প্রথম দুই বলে দুই উইকেট পেয়ে যাওয়ার পর ম্যাচের আম্পায়ারের সঙ্গে কথা হয়েছে রোয়ির, ‘আম্পায়ারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন, আমাদের সময় খুব বেশি হ্যাটট্রিক দেখিনি। ভাবলাম, তাহলে আম্পায়ারের জন্য চেষ্টা করে দেখা যায়। সেটা ছিল কেবল শুরু।’ ৪ বলে ৪ উইকেট, অর্থাৎ ডাবল হ্যাটট্রিক পেয়ে যাওয়ার পর কেমন লেগেছে? রোয়ির প্রতিক্রিয়া, ‘চতুর্থ উইকেট পেয়ে যাওয়ার পর মনে হয়েছে, বিষয়টি তাহলে সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে।’ ৫ বলে ৫ উইকেট পাওয়ার পর? ‘বিস্মিত। সত্যিই বিষ্মিত হয়েছি। এমনকিছু হবে তা ভাবিনি’—নিজের প্রতিক্রিয়া জানান রোয়ি। সেই ওভারের শেষ বলেও উইকেট পাওয়ার প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন এ খুদে ক্রিকেটার, ‘বিশ্বাস হচ্ছিল না। সতীর্থরা আমাকে ঘিরে ধরেছিল। সবকিছু পাগলাটে মনে হচ্ছিল। সতীর্থরা আমার চেয়ে বেশি উন্মাদনা দেখিয়েছে।’
এমন ধ্বংসযজ্ঞের পর কোন দল ঘুরে দাঁড়াবে! রোটোরোয়া হাইস্কুলও পারেনি। মাত্র ২৬ রানে অলআউট হয়। ২.১ ওভারে তাড়া করে জয় তুলে নেয় রোয়ির দল পালমারস্টোন নর্থ বয়েজ। দলটির কোচ স্কট ডেভিসন রোয়ির কীর্তি নিয়ে বলেছেন, ‘আমি নিজে অনেক খেলেছি। আমার ম্যানেজারও এই খেলায় অনেক দিন ধরে আছেন। আমরা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি।’ ক্রিকেটে এক ওভারে ৬ বলে ৬ উইকেট প্রায় দেখাই যায় না। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বালারাত ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের টুর্নামেন্টে ২১ জানুয়ারি ইস্ট বালারাত ক্রিকেট দলের বিপক্ষে এক ওভারে ৬ বলে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন গোল্ডেন পয়েন্ট ক্রিকেট ক্লাবের অ্যালেড ক্যারি। সেই ওভারে দুটি ক্যাচ, একটি এলবিডব্লু ও বাকি তিন বলে বোল্ড আউট করেন ক্যারি।আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক ওভারে কেউ ৬ কিংবা ৫ উইকেট নিতে পারেননি। টেস্ট ক্রিকেটে এক ওভারে ৪ উইকেট নেওয়ার নজির আছে। ১৯২৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিলেন ইংল্যান্ডের পেসার মরিস অ্যালম। তাঁর সঙ্গে আছেন আরও পাঁচজন—ইংল্যান্ডের ক্রেন ক্রানস্টোন, ফ্রেড টিটমাস, ক্রিস ওল্ড, অ্যান্ড্রু ক্যাডিক ও পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম। ১৯৯০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে এক ওভারে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন আকরাম। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও এক ওভারে ৪ উইকেট নেওয়ার নজির আছে। ২০১৯ সালে টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ওভারে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার সাবেক পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। দুই বছর পর ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এক ওভারে ৪ উইকেট নেন আয়ারল্যান্ডের পেসার কার্টিস ক্যাম্ফার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct