সুব্রত রায়, কলকাতা, রঙ্গিলা খাতুন, বহরমপুর, আপনজন: রবিবার মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে বৈঠক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেন মুর্শিদাবাদ জেলার সাংসদ, বিধায়ক-সহ ৬জন নেতা। মুর্শিদাবাদেরর জেলা তৃণমূল অফিসে জেলার দুই সাংসদ আবু তাহের, খুলিলুর রহমান ছাড়াও মন্ত্রী আখরুজ্জামান, বিধায়ক ইদ্রিশ আলি, ঈমানি বিশ্বাসরা হাজির ছিলেন। নেত্রীর সঙ্গে তাদের সঙ্গে প্রায় ২০ মিনিট ফোনে কথা বলেন। খলিলুর রহমান তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে অভিযোগ করেন, মিডিয়া আমাদের নিয়ে যে প্রচার করছে তার ফলে ব্যক্তি খলিলুর রহমান, আবু তাহের বা আখরুজ্জামানের যা ক্ষতি হচ্ছে তার থেকে বেশি ক্ষতি হচ্ছে দলের। বিষয়টি নিযে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মমতার। তার প্রতিবাদ হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। খলিলুর বলেন, সাগরদিঘির হার নিয়ে আমরা মর্মাহত। আমরা একে অপরের সঙ্গে মত বিনিময় করে সাগরদিঘিতে আগের জায়গায় তৃণমূলকে ফিরিয়ে আনব, এই অঙ্গীকার করছি। কালীঘাট থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে বলেন, সাগরদিঘিতে অনৈতিক লড়াই করেছে। লোকটা কার? বিজেপির। প্রার্থী কংগ্রেসের। সমর্থন দিল সিপিএম। আসলে অধীর চৌধুরী আরএসএসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। সংখ্যালঘুদের ভুল বোঝানো হয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেদিনের বৈঠকে সাগরদিঘি নিয়ে আপনাদের নিয়ে যে কথা মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, তা আমি বলিনি। তা একেবারেই ভুল কথা। কোনও এক সাংবাদিক একটা মিথ্যা কথা ঢুকিয়েছেন। এতে কংগ্রেস এবং সিপিএমের হাত রয়েছে। আজকের দিনে দুঃখের বিষয় কোনও সাংবাদিক হয়, বিজেপি কিংবা কংগ্রেস বা সিপিএমের পে রোলে রয়েছে। সেদিন খলিলুর বা আবু তাহেরের নামে কোনও কথা আলোচনা হয়নি। তবু তারা করছেন, তৃণমূলের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দেওয়ার জন্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদের নেতাদের বলেন, তার কথা রেকর্ড করে রাখতে। সাংবাদিকরা উল্টোপাল্টা বললে এফআইআর করবেন। মমতা বলেন, সাগরদিঘিতে আগেও আমার জিতেছি বিজেপির সঙ্গে লড়াই করে। বিজেপির সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছি। কংগ্রেসের যে নেতা বড় বড় কথা বলে, সে বিজেপির এক নম্বর দোস্ত। রাহুল গান্ধি যত দিন থাকবেন, মোদীকে কেউ খারাপ ভাববে না। সে জন্য রাহুলকে নেতা বানানোর চেষ্টা করছে বিজেপি। আমি দিল্লিতে তোমার সঙ্গে দোস্তি করব, আর এখানে তুমি বিজেপির সঙ্গে মস্তি করবে! আমি বিজেপির কাছে মাথা নত করিনি, মাথা নত করেছে কংগ্রেস।
মমতা রাজ্যে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, এখন সংখ্যালঘুদের মধ্যে ডিএসপি হচ্ছে, ১৭ শতাংশ ওবিসি করে দিয়েছি। কেন্দ্র সংখ্যালঘুদের স্কলারশিপ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি ঐক্যশ্রীতে ৫৫ লক্ষ সংখ্যালঘুর স্কলারশিপ দিচ্ছি। ইমাম মোয়াজ্জিন ভাতা থেকে শুরু করে কবরস্থান ঘেরা সবই হয়েছে। মমতা জোরের সঙ্গে বলেন, এ রাজ্যে এনআরওি করতে দেব না, ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু করতে দেব না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএমেকও খোঁচা দিতে ছাড়েননি। এ নিয়ে তিনি রাজ্যের বাম শাসনে কাটরা মসজিদ দাঙ্গার ঘটনার কথা তুলে ধরে বলেন, সিপিএমে সেসময় ১৬টি বোমা মেরেছিল। মমতা এদিন কিন্তু এখনও আবু তাহের, খলিলুর রহমান-সহ গোটা জেলা নেতৃত্বের ওপর যথেষ্ট আশা, ভরসা রেখেছেন। তিনি আবু তাহেরকে খলিলুর ও জাকিরের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বলেন। তাই সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সাগরদিঘির উপনির্বাচনে হারের ক্ষত ভুলে সবাইকে একসঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাজে ঝাঁপাতে হবে। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে মাঠে নেমে সরকারি প্রকল্পগুলির বিশেষত সংখ্যালঘুদের জন্য যে যে কাজ হয়েছে, তা সবিস্তারে জানানো, বোঝানোর কাজ করতে হবে। শুনতে হবে অভাব-অভিযোগের কথা। দল যে কর্মসূচি দিয়েছে সেই কাজ করতেই হবে। জেলায় মানুষ কোন কোন বিষয়ে অভাব-অভিযোগ জানাচ্ছেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই দলের কাছে রিপোর্ট আসছে। সংখ্যালঘুদের ভুল বোঝানো হয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে ভোটের ফলে সবকিছু স্থির হয় না। প্রতি পঞ্চায়েত ও ব্লকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করতে হবে।এর পাশাপাশি এদিন মমতা আক্রমণ শানিয়েছেন অধীরকে। ফোনে সাংসদ খলিলুর রহমান, আবু তাহেররা তাঁর কাছে অভিযোগ করেন, সেখানে অধীর চৌধুরী সবাইকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভুল বোঝাচ্ছেন। এই অভিযোগের জবাব মমতা বলেন, অধীর আরএসএসের কথায় কাজ করছেন। তিনিই বিজেপির এক নম্বর লোক। বুঝতে পারছেন তো? আর বিজেপি তো রাহুল গান্ধিকে মূল বিরোধী হিসেবে তুলে ধরতে পারলে তাদেরই লাভ। অন্য বিরোধীদের দুর্বল করে দেওয়া যাবে। তবে, এদিনের আলাপচারিতায় মন্ত্রী আখরুজ্জামান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানান, রমজান মাসে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদে দিদির সুরক্ষা কর্মসূচির সেভাবে প্রচার করার অসুবিধা আছে। তবে, দুয়ারে সরকার কর্মসূচি চালিয়ে যেতে কোনও অসুবিধা নেই বলে তিনি জানান। তবে, আবু তাহেরের আবেদনে সাড়া দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহরমপুরে রমজানের পরে বড় সভা করার আশ্বাস দেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct