মোল্লা মুয়াজ ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: বর্ধমান শহরে “নূরানী মসজিদ” একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক বহুল চর্চিত মসজিদ। এই মসজিদে বর্ধমান “শাহী জামে মসজিদ বা জামা মসজিদের” পরবর্তী একটি তবলিগ জামাতের কার্যালয় যা “মারকাজ” নামেই খ্যাত। মসজিদের একটি প্রাচীন ফারসি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে- “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, হিজরী ১১২৮, চেরাগে মসজিদ মেহরাবে সাবজ আবুবক্কার , ওমর ,অসমান, ও হায়দার, বাদরে শাহেনশা জললি ইলাহ বাহ জাহানে ফাজাহফ এ শির এ বাদসা বা তৌফিক এ হাক পাইলু ইবনে কামাল বানা কার ইন মসজিদে বা শাফা চু তারিহাস হাজ আকল জিসমে তাফলার বা কাপতা সুদা খানা এ হাক বানা” । বাংলা অর্থ অনেকটা এইরকম যা, ‘পরমেশ্বরের নামে শুরু করলাম, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত নবী ও দূত, হিজরী- ১১২৮। এই জ্বলন্ত উজ্জ্বল প্রদীপ(মসজিদ) তার উজ্জ্বলতায় সবুজ আভা দিগন্তে ছড়াবে ,তার নিজস্ব আলোয় আলোকিত হয়ে ঈশ্বরের কাছে পূণ্য পৌছাবে, হযরত আবুবক্কার, ওমর ,ওসমান ও হায়দার এর পূর্ণ আত্মায়। দূরদর্শী বাদশার মেহেরবানীতে দুনিয়ার মধ্যে সেই সময়ের বাদশা আল্লাহর কুদরতে সম্রাট এই মসজিদ নির্মাণ করলেন, তার জ্ঞান ,বুদ্ধি, কম থাকা সত্ত্বেও দুর্বল শরীর থাকার পরও শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই মসজিদ নির্মাণ করলেন।’ ১১২৮ হিজরী অর্থাৎ ১৭১৫ খ্রিস্টাব্দে শরীফাবাদে এই মসজিদ নির্মাণ করালেন নবম ভারত সম্রাট ফারুকশিয়ার। এই শরিফা বাদের সাথে সম্রাট “ফারুকশিয়ার”, ও পিতা “শাহজাদা আজিম উস শান” এর গভীর সম্পর্ক।
নূরানী মসজিদ যেখানে অবস্থান সেই পড়া টির নাম হিজড়ে পাড়া, কিন্তু কেন এমন নাম পুরাতন নথিপত্রে দেখা গেল যে, এখানে একটি প্রাচীন “হুজরা “ ছিল হুজরা ফারসি শব্দ যার অর্থ ইমামের থাকার ঘর বা ইবাদত করার জন্য ইবাদত খানা যা অপভ্রংশ হয়ে হুজরা হয়ে যায় হিজরা এবং পাড়ার নামও হয়ে যায় হিজরা পাড়া। রাস্তাটির নাম ছিল সাড়খানা গলি, বর্তমানে নবাব দোস্ত কায়েম লেন ( এন ডি কায়েম লেন)। মসজিদের দলিল নাম্বার ২৬৫০ তারিখ ১২/৯/১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দ। মোট জমির পরিমাণ ২১ বিঘা । সাধনপুর মৌজায় ১৫ বিঘা, বর্ধমান মৌজায় ৬ বিঘা। তার মধ্যে মসজিদের ১০ কাঠা। সামনেই অর্থাৎ সদর থানার উল্টোদিকে দাগ নাম্বার ৯৭০২ পরিমাণ ৭২০ একর যা সম্পূর্ণই নূরানী মসজিদের ওয়াকফ সম্পত্তি। মসজিদের সামনে সমগ্র এলাকায় মসজিদের (১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে টেকনিক্যাল কলেজ এখান থেকে সাধনপুর ওয়াকাফ্ স্টেট এর জায়গায় উঠে গেলে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে এই জায়গাতেই বর্ধমান রাজা, পাঁচটি নতুন আলমারি ও সাতটা জীর্ণ আলমারি ও কিছু পুরাতন বই দান করে নিজের নামে গ্রন্থাগারটি করে নেন)। এমনকি মসজিদের সামনে পুকুরটি দাগ নাম্বার ১০৩৫৩ যা জনৈক সুষমা রানীর নামে রেকর্ড হয়ে গেছে, যা আদালতে বিচারাধীন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে সাধন পুর মৌজায় নূরানী মসজিদের/ওয়াকাপ জমির উপর টেকনিক্যাল কলেজটি (মহারাজ ধীরাজ বিজয় চাঁদ ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি)তৈরি হয়, যা সম্পূর্ণ মসজিদের জায়গা। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানের সৈয়দ বন্দে আলী ,পিতা সৈয়দ কেরামত আলী ,পেশা চাকুরী, সাং -, তেতুলতলা, বর্ধমান। উক্ত সম্পত্তি দান করেন। তৎকালীন যুগে মূল্য ৪০০ টাকা এবং ৫ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে দলিল লেখা হয়েছিল, পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬, সাক্ষী ছিলেন মীর নবী বক্স। ১৯৩৪ বঙ্গীয় ওয়াকআপ আইনের ৪৪ ধারা মতে ওয়াকাপের নথিভুক্ত করা হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ গোলাম মহিউদ্দিন (অ্যাডভোকেট)উক্ত সম্পত্তি ওয়াকাফে নথিভুক্ত করেন, তৎকালীন যুগে বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছিল ৪০ টাকা,“নূরানী মসজিদ” “ভেলু মিদ্দা ওয়াকাফ্ স্টেট “এর অন্তর্গত, যার ই সি নাম্বার ১২০০৩, এবং একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পরিচালন কমিটির সদস্যের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সম্পাদক জনাব মোঃ ইয়াসিন ২০১৯ এ ইন্তেকাল করলে, বর্তমানে যুগ্ম সম্পাদক শেখ তাজ উদ্দিন আহমদ,”নূরানী মসজিদ” পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, যত শীঘ্র সম্ভব সম্পাদক নির্বাচন করে ওয়াকাফ্ বোর্ডে পাঠানো হবে বলে যুগ্ম সম্পাদক জানালেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct