আপনজন ডেস্ক: বয়স ষাটের বেশি। জীবনের এতটা পথ পেরিয়ে এলেও কখনো সুযোগ হয়নি লেখাপড়া শেখার। সংসারের খরচ ও পরিবারের সুখের কথা ভেবে সারাটা জীবন খেটে গিয়েছেন তিনি। তবে বর্তমান সময়ে ছোট্ট মুদির দোকানের হিসাব-নিকাশ তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে, শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই তো বৃদ্ধ বয়সে ৫ বছরের নাতি কাওসারের সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন ষাটোর্ধ্ব আব্দুল মান্নান। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন মান্নান। সেখানে ক্লাস রুমে ছোট ছোট শিশুদের সঙ্গে বসে লেখাপড়া শিখছেন তিনি। আব্দুল মান্নানের রোল নম্বর-৩৭। বই ও কলম হাতে নাতি কাওসারের হাত ধরে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যান। আব্দুল মান্নানের বাড়ি ওই ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামে। বৃদ্ধ বয়সে স্কুলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে দীর্ঘ জীবনের স্মৃতিচারণ করে আব্দুল মান্নান বলেন, 'বাবা-মায়ের অভাবের সংসারে ছয় ভাই, এক বোনের মধ্যে আমি ছিলাম তৃতীয়। সংসারে সব সময় অভাব লেগেই থাকত। গমের ভাত, পায়রার ছাতু, কাঁঠাল সিদ্ধ খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হতো। কখনো লেখাপড়া শেখার সুযোগ পাইনি। ছোটবেলা থেকেই বাবার মতো অন্যের বাড়ি-জমিতে কাজ করতেন। সারাদিন শ্রম বিক্রি করে মিলত এক থেকে দুই টাকা অথবা এক কেজি চাল। এরপর টানা দুই যুগ চালান প্যাডেল চালিত ভ্যান। একপর্যায়ে বার্ধক্য ভর করে। নিরুপায় হয়ে জীবিকার তাগিদে বাজারে ছোট দোকানে পানের খিলি বিক্রি শুরু করেন। গ্রামের দোকানে মোট বিক্রির অর্ধেকই হয় বাকিতে। মুখে-মুখে এতো হিসাব বৃদ্ধ বয়সে মনে রাখা সম্ভব হয় না। সেখান থেকেই বাকি লেনদেনের হিসাব লিখে রাখার তীব্র প্রয়োজন অনুভব করি। বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পেছনে অনেক ঘুরে অবশেষে ভর্তি হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct