এম মেহেদি সানি, নিউ টাউন, আপনজন: কলকাতা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর নিউটাউন ক্যাম্পাসের মূল প্রবেশদ্বারের উদ্বোধন হল মঙ্গলবার। জানা গিয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসার শিক্ষা দফতরের অধীন ওই প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশদ্বারটি তৈরি করতে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ দিন প্রবেশদ্বারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট দফরের মন্ত্রী গোলাম রব্বানী সহ বিশিষ্টজনরা। এ সময়ে আলিয়ার ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে রাজ্যে বর্তমান সময়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য ব্যখ্যা করেন মন্ত্রী গোলাম রব্বানি। তিনি বলেন, সকলের প্রচেষ্টায় আগামী দিনে উন্নত শিক্ষা পরিষেবায় এই প্রতিষ্ঠান দ্রুত এগিয়ে যাবে। মন্ত্রীর দাবি রাজ্য সরকার উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানগুলির মানোন্নয়নে যথেষ্ট প্রাধান্য দিচ্ছেন। ওই অনুষ্ঠান থেকে কেন্দ্রীয় বাজেটে সংখ্যালঘু খাতে বরাদ্দ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানী। চলতি অর্থবছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সংখ্যালঘু খাতে যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে তা দেশের মধ্যে নজিরবিহীন বলে দাবি করেন তিনি।নিউটাউন ক্যাম্পাসের মূল প্রবেশদ্বারের উদ্বোধন হওয়ায় নিঃসন্দেহে অালিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুকুটে যোগ হল নতুন পালক। কোটি টাকা ব্যয়ে যখন প্রবশে দ্বারের উন্মোচন হল, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন রক্ষণাবেক্ষণে চরম উদাসীনতার অভিযোগও উঠতে শুরু হল। এ বিষয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরাগী ও শিক্ষার্থী মহলের একাংশের অভিযোগ, ঝাঁ চকচকে তোরণ যখন নিউ টাউন ক্যাম্পাসে শোভা পাচ্ছে তখন, পার্ক সার্কাস কিংবা তালতলা ক্যাম্পাসের বেশ কিছু বিল্ডিংয়ের পলেস্তারা খসে পড়ছে। তাদের অভিযোগ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের ভগ্ন দশা এমনই যে অনেক জানালা দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রয়েছে। ঝড় বৃষ্টি এলে জল ঢোকে। দীর্ঘদিন সেই পরিস্থিতি কারও নজরে না পড়লেও সুদৃশ্য প্রবেশ দ্বারের দিকেই যত নজর। তবে, এই শিক্ষা মহলের দাবি, প্রবেশদ্বার নিশ্চয়ই ভালো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য, সম্মানের পক্ষে ইতিবাচক। কিন্তু বাকি সমস্যাগুলোতে নজর দেওয়া অনেক বেশি দরকার রয়েছে।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রেমীদের একাংশের কটাক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন মেরামতির দিকে নজর না দিয়ে বিপুল টাকা ব্যয়ে প্রবেশ দ্বারে মনোনিবেশ করার মধ্যে সহজে প্রচার পাওয়া যাবে। আর সেটাই করা হচ্ছে। বিল্ডিং রং করে, মেরামতি করে এখন তো আর প্রচার হবে না বলে তাদের আক্ষেপ। তাদের খেদোক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পলেস্তারা খসে পড়া, কিংবা জানালার কাচ ভেঙে বৃষ্টির জল প্রবেশের কথা হয়তো সেভাবে আলিয়া কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছয় না। অথবা সদিচ্ছার অভাব। আগে দেখা গেছে, বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে না পারায় তা ফেরত চলে গেছে। আর কোটি টাকা ব্যয়ে প্রবেশ দ্বার তৈরি হলে ভবন রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ যোগানের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে কি কারণে আলিয়া ভবনের এই বেহাল দশা তা স্পষ্ট নয়। যদিও আলিয়ার উপাচার্য সহ পরিচালন কর্তৃপক্ষ অবশ্য এর দায় এগাতে পারেন না। অস্বীকার করার উপায় নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের প্রবেশ তোরণ ঐতিহ্যের হয়ে উঠবে। কিন্তু এতো আড়ম্বর না হলেও হতো বলেও অনেকে মন্তব্য করছেন। যেখানে লাইব্রেরিতে প্রয়োজনীয় বই, ইন্টারনেট, এসি নেই। ল্যাব গুলিতে ইনস্ট্রুমেন্ট-এর অভাবে ধুঁকছে। অর্থের অভাবে NAAC ভিজিট হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় একাডেমিক বিল্ডিং ও হোস্টেল নেই। যেখানে না এর তালিকা দীর্ঘ সেখানে এই তোরণ শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো বলে দাবি করেন তারা। এ বিষয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবু তাহের কামরুদ্দিনকে আপনজন-এর তরফে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের ভগ্ন দশা নিয়ে তিনি নীরব থাকাকেই শ্রেয় মনে করেন। এদিন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর নিউটাউন ক্যাম্পাসের মূল প্রবেশদ্বারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দফতরের প্রধান সচিব মোঃ গোলাম আলী আনসারী ছাড়াও বিশেষ সচিব শাকিল আহমেদ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবু তাহের কামরুদ্দিন, ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল গনি, সিও এহসান আলি, বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়, উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ও মাদ্রাসা বোর্ড সদস্য একেএম ফারহাদ, সংখ্যালঘু বিত্ত নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৃগাঙ্ক বিশ্বাস, রেজিস্ট্রার নুরুস সালাম প্রমুখ।অন্যদিকে, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউ নিউটাউন ক্যাম্পাসে যখন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি টাকার প্রবেশ দ্বার অনুষ্ঠানে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবু তাহের কামরুদ্দিন সহ অন্যরা ব্যস্ত তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে খারাপ খবর বয়ে আনে কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে জানিয়ে দেয়, আচার্যের অনুমতি ছাড়া রাজ্য সরকার কর্তৃক উপাচার্যদের নিয়োগ পুরোপুরি অবৈধ। তাদেরকে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই তালিকায় রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরও নাম এসে পড়ে। তাই পদত্যাগ করছেন কিনা জিজ্ঞেস করা হলে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবু তাহের কামরুদ্দিন ‘আপনজন’-কে বলেন, ‘আমি অর্ডার না দেখে কিছু বলতে পারব না, কালকে দেখে বলব।’
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct