আপনজন ডেস্ক: জগদীপ ধনকর রাজ্যপাল থাকাকালীন এ রাজ্যের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছিল রাজ্য সরকারের নিজস্ব মনোনীতদের। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আইনকে বলবৎ রাখতে তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর আচার্য হিসেবে মূল নিয়োগ কর্তা হলেও তা উপেক্ষা করেছিল রাজ্য সরকার। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্য সরকারের পছন্দের উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। নিয়মবহির্ভূতভাবে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে বলে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক ষংঘ নামে এক সংগঠনের সেক্রেটারি অনুপম বেরা। সেই মামলায় মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে জানিয়েছেন, আচার্যের অনুমতি ছাড়া উপাচার্যদের পুনরায় নিয়োগ করা যায় না। তাই যাঁদের মেয়াদ ফুরনোর পর রাজ্য সরকার নতুন করে মেয়াদ বাড়িয়েছিল সেগুলি বাতিল করা হল। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্যদের একমাত্র নিয়োগ করতে পারবেন আচার্য। উপাচার্য নিয়োগ করার কোনও ক্ষমতা রাজ্য সরকারের হাতে থাকবে না। সেই সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ বলে রাজ্যের ২৯ জন উপাচার্যকে অপসারণের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে আলোচনার পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার মেয়াদ-উত্তীর্ণ উপাচার্যদের ইস্তফা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তারপর ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশনের নিয়ম মেনে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করা হবে। তৈরি হবে সার্চ কমিটি। রাজ্যপালও সরকারের এই সিদ্ধান্তে সহমত হয়েছিলেন। যদিও, রাজ্যের ২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের গণহারে ইস্তফা দেওয়ার আগে কলকাতা হাইকার্ট তাদের অপসারণের নির্দেশ জারি করল। যদিও এই নিযোগ বিতর্কের সূত্রপাত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে। যখন সোনালি চক্রবর্তীকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নতুন করে নিযুক্ত করেছিল নবান্ন, সেই সিদ্ধান্তও প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বাতিল করে দেয়। এবারও আদালত জানিয়ে দিল, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুনর্নিয়োগের অধিকার রাজ্যের নেই। তাই সব পদ বাতিলের নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। তার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্ট প্রথমেই অবৈধ বলে বাতিল করেছিল। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য। সুপ্রিম কোর্টও কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখেছিল। এবার নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ বলে রাজ্যের ২৯ জন উপাচার্যকে অপসারণের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে, কলকাতা হাইকোর্টের রায বেরনোর পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে সরকার সার্চ কমিটি তৈরি করছে। ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী দশ বছর কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা না করলে উপাচার্য পদের জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হয় না। সেই নিয়মও এবার সরকার পালন করবে। মঙ্গলবার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ জানায়, ইউজিসি বিধি, ২০১৮ অনুসরণ করে উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে। শুনানিতে আবেদনকারীর আইনজীবী সওয়াল করেন, ইউজিসি আইন অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১০ বছর কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর পদে কিংবা গবেষণা সংস্থায় কর্মরত থাকার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু অভিযোগ রাজ্যের এক দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে এই বিধি পালন করা হয়নি। তবে, রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে শুনানির সময় আইনজীবীরা হাজির ছিলেন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে হাজির ছিলেন রঘুনাথ চক্রবর্তী ও অমৃতা দে। আজ, মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে জানিয়েছেন, আচার্যের অনুমতি ছাড়া উপাচার্যদের পুনরায় নিয়োগ করা যায় না। তাই যাঁদের মেয়াদ ফুরনোর পর রাজ্য সরকার নতুন করে মেয়াদ বাড়িয়েছিল সেগুলি বাতিল করা হল। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্যদের একমাত্র নিয়োগ করতে পারবেন আচার্য। উপাচার্য নিয়োগ করার কোনও ক্ষমতা রাজ্য সরকারের হাতে থাকবে না। সম্প্রতি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তারপর তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার এই সমস্ত উপাচার্যকে ইস্তফা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তাঁরা তাই ইস্তফা দেবেন। আর ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশনের (ইউজিসি) নিয়ম মেনে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করা হবে। রাজ্যপাল বিষয়টি নিয়ে সহমত পোষণ করেন এবং শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি’। ব্রাত্য বসু বলেন, ‘নবান্ন–রাজভবন–বিকাশ ভবন একসঙ্গে কাজ করবে।’ তারপর কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
আর কী জানা যাচ্ছে? বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, আচার্য তথা রাজ্যপাল একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আগে তিন মাসের জন্য পুনর্নিয়োগ করেছেন। যা সম্পূর্ণ ‘বৈধ’। কারণ আদালত বলেছে, উপাচার্যদের নিয়োগ করতে পারবেন আচার্য (রাজ্যপাল)। তাই এই রায়ের প্রভাব সেই উপাচার্যদের উপর পড়বে না। নিয়মবহির্ভূত ভাবে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন অনুপম বেরা। তার প্রেক্ষিতেই আজকের রায়। রাজ্যপাল কিছুদিন আগে একটি বিবৃতি দিয়ে জানান, উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বিধানসভায় আনা বিল খারিজ করে দেবে বলে তাঁকে জানিয়েছে। তাছাড়া রাজ্য সরকার পুরনো ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী। ডিভিশন বেঞ্চে ধাক্কা রাজ্যের। উপাচার্য নিয়োগ মামলায় ধাক্কা খেল রাজ্য। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর উপাচার্যদের পুনর্নিয়োগ করার কোনও অধিকার রাজ্যের নেই, মঙ্গলবার এমনটাই জানায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের প্রায় ২৯ জন উপাচার্যের পদ বাতিল হল এদিন। বাতিল করলেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ। এর আগে যখন সোনালি চক্রবর্তীকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নতুন করে নিযুক্ত করেছিল নবান্ন, সেই সিদ্ধান্তও প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বাতিল করে দেয়। এবারও আদালত জানিয়ে দিল, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুনর্নিয়োগের অধিকার রাজ্যের নেই। তাই সব পদ বাতিলের নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের প্রায় ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে মানা হয়নি ইউজিসি গাইডলাইন । এই দাবি তুলে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করে জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সংঘ (আরএসএস-এর অধ্যাপক সংঘ)। এই মামলা যখন হয়, তখন রাজ্যপাল ছিলেন জগদীপ ধনখড়। মামলাকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল, উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে রাজ্যপালের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি শাসকদল। পাশাপাশি তারা জানিয়েছিল, রাজ্যপাল চাইলে উপাচার্য পদে নিযুক্তদের পদ বাতিলও করতে পারেন। যদিও সেই সময় তেমন কিছু ঘটেনি। বরং মামলা হয় আদালতে। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই রাজভবনে বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। এরপর রাজ্যপালকে পাশে বসিয়ে নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বলেছিলেন, “উপাচার্যরা প্রত্যেকে রাজ্যপালের হাতে একটি করে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং রাজ্যপাল তাঁদের তিন মাসের এক্সটেনশন দিয়েছেন। এখন তাঁরা প্রত্যেকেই বৈধ উপাচার্য।”
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct