ভারতবর্ষের মাটিতে মুসলিম নারীদের সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশের ইতিহাসটি বেশ প্রাচীন। তবে প্রাচীনতার ভারে তা যে কতটা সমৃদ্ধ হতে পেরেছে, সেটা আজ একবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে দাঁড়িয়ে বিশেষভাবে আলোচনার দাবি রাখে। বিশ শতকের প্রথম দুই দশকে বাঙালি মুসলিম মেয়েদের কোন স্বতন্ত্র পত্রিকা ছিল না। তারা লিখতেন কলকাতার মুসলিম পুরুষ সম্পাদিত পত্রিকাগুলোতে। তথ্যবহুল আলোচনা করেছেন তরুণ লেখক সৌরভ মণ্ডল...
ভারতবর্ষের মাটিতে মুসলিম নারীদের সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশের ইতিহাসটি বেশ প্রাচীন। তবে প্রাচীনতার ভারে তা যে কতটা সমৃদ্ধ হতে পেরেছে, সেটা আজ একবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে দাঁড়িয়ে বিশেষভাবে আলোচনার দাবি রাখে। আজ থেকে আনুমানিক সাড়ে তিনশো বছর পূর্বে মুঘল সম্রাট ওরঙ্গজেব দুহিতা জেবুউন্নিসা ফারসি ভাষায় লেখেন ‘দেওয়ানী - ই- মাখফি’। আসমুদ্র হিমাচল বিস্তৃত ভারতাধিপতির গৃহভ্যন্তর থেকে যে সাহসের শুভ সূচনা হয়, তার পরবর্তীতে সালিমগড় দুর্গে জেবুউন্নিসার আমৃত্যু কারাবরণের পরিণতি দেখে ভারতবাসী হিসেবে যতটা হতাশ হয়েছি বাঙালি হিসেবে সেই হতাশা আরও কয়েকগুন বেড়ে যায়- যখন দেখি তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আর কোন মুসলিম মহিলা নারী, কবি হিসাবে সেভাবে আত্মপ্রকাশ করল না বা করতে দেওয়া হলো না। তবুও সৃষ্টিকর্তার অপার স্নেহ কে অবলম্বন করে ঊষর মরুভূমির বুকে যেমন কার্যকারণের তোয়াক্কা না করে গুল্মগুচ্ছ বেড়ে ওঠে, ঠিক তেমনই বাংলার মুসলিম মহিলা কবিরাও বাংলা সাহিত্যে ঊষরতার মাঝে গুল্মগুচ্ছের মতো নিরস মাটিকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যৎ বনানীর সম্ভাবনাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ শতকের প্রথম দুই দশকে বাঙালি মুসলিম মেয়েদের কোন স্বতন্ত্র পত্রিকা ছিল না। তারা লিখতেন কলকাতার মুসলিম পুরুষ সম্পাদিত পত্রিকা গুলোতে। এইসব পত্রিকার মধ্যে মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন( ১৮৮৮- ১৯৬৪ ) সম্পাদিত ‘সওগাত’ পত্রিকা সর্বপ্রথম শুরু করেছিল মেয়েদের জন্য পৃথক বিভাগ-‘জেনানা মহফিল’। তারপর পত্রিকাটি প্রকাশ করতে থাকে মহিলা সংখ্যা- নাম ‘মহিলা সওগাত’। ১৯২৯–১৯৪৫ এই পর্বে মোট ছটি ‘মহিলা সওগাত’ প্রকাশিত হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল অন্ত: পুরবাসী বাঙালি মুসলিম মহিলাদের সাহিত্য সংস্কৃতি ও জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ দেওয়া। এই সুযোগকে যে চারজন মুসলিম বঙ্গনারী সাহিত্যের পুব আকাশে উঁকি দিয়েছিলেন তারা হলেন- মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা (১৯০৬-৭৭) শামসুন নাহার মাহমুদ (১৯০৮- ৬৪) বেগম সুফিয়া কামাল (১৯১১–৯৯) এবং জাহানআরা বেগম চৌধুরী (১৯১৩- ৮২)।
মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা: বিংশ শতাব্দীর গোড়াতেই বাংলার মহিলা লেখিকাদের মধ্যে যাঁরা সাহিত্য জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা (১৯০৬-৭৭) তাঁদের অন্যতম। এই সময়টায় বিশেষ করে বাঙালি মুসলিম সমাজের মেয়েদের পক্ষে লেখাপড়া বা সাহিত্যচর্চা ছিল দুঃসাহসিক অভিযানের মতোই। ১২ বছর বয়সে মাহমুদার বিয়ে দেওয়া হলেও তিনি বিবাহ স্বীকার করেননি। তার বিবাহিত জীবন ছিল খুবই স্বল্পকালের। স্বামী গৃহে যাননি, বিবাহিতা জীবন উপভোগ করেননি। অবরোধ এবং বাল্যবিবাহ- দুই বেড়ি ভেঙ্গে মাহমুদা পড়াশোনায় মনোযোগী হলেন। ১৩৩৬ সনের বৈশাখের ‘সওগাত’ এ তার প্রথম কবিতা ‘বসন্ত বিদায়’ প্রকাশিত হয়। মুসলিম অন্দরমহলের এই উদীয়মান কবি একবার রবীন্দ্রনাথের সাথে দেখা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ মুসলিম কবির এই উত্থানে খুবই খুশি হয়। ব্যক্তিগতভাবে রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য লাভের সুযোগে মাহমুদা একটি কবিতা পাঠিয়ে ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশের অনুরোধ জানান। অনুরোধ রক্ষা করে রবীন্দ্রনাথ মাহমুদের ‘নিশীথে’ কবিতাটি সম্পাদক সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন এবং একটি চিঠি (২১শে সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ ) লেখেন –’এই মুসলমান মহিলা বিশেষ করে পরিচয়-এর সম্পাদকের কাছে পূর্ব্বপৃষ্ঠায় লিখিত কবিতাটি পাঠাতে আমাকে অনুরোধ করেছেন।… আমি লেখিকাকে জানিয়েছি কবিতা গ্রহণ বা বর্জন করবার দায়িত্ব সমস্তই সম্পাদকের’। রবীন্দ্রনাথের চিঠি ও মাহমুদের কবিতা পড়ে সুধীন্দ্রনাথ তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রবীন্দ্রনাথকে লেখেন--- ‘লেখিকার রচনাটি প্রায় অচল ১২ লাইনের কবিতা লিখতে গিয়ে যে কবি দু’বার পা পিছলোয়, তাকে উৎসাহ দেওয়ার কোনো সাহিত্যিক কারণ নিশ্চয়ই নেই।… সুতরাং লেখিকাকে আপ্যায়িত করার যদি কোন ব্যক্তিগত কারণ থাকে, তবে আপনার আজ্ঞা পেলে কবিতার সংস্কৃত সংস্করণ মাঘ সংখ্যায় ছাপাব। নচেৎ অহেতুক পরিশ্রমের কোন প্রয়োজন দেখি না। যাইহোক, মাহমুদার কবিতা অন্য সম্পাদকের কাছে পৌঁছে দেওয়া থেকে তার প্রতি পক্ষপাত ও সহানুভূতির আঁচ করা যায়, সন্দেহ নেই।
শামসুন নাহার মাহমুদ: শামসুন নাহারের ( ১৯০৮- ৬৪ )শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় চট্টগ্রামের খাস্তগির স্কুলে।ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার পর তাঁর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ই মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পাদিত ‘আঙ্গুর’ পত্রিকায় লেখেন ‘প্রণতি’ কবিতা। কবিতাটি চোখে পড়েছিল রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের। তিনি চিঠি লিখে শামসুনের সঙ্গে পরিচয় করেন। শামসুনের অদম্য আগ্রহের কথা বিবেচনা করে বাড়িতে বসে তাঁর পড়াশোনার ব্যবস্থা হল। ১৯২৬ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস। এই বছরই ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বিয়ে। ১৯৩২ সালে উচ্চস্থান অধিকার করে বিএ পাস করেন। ১৯৩৩ সালে ভাই হাবিবুল্লাহ বাহারের সঙ্গে মিলে সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন ‘বুলবুল’ পত্রিকা। প্রকাশিত হলে রবীন্দ্রনাথকে উপহার পাঠানো হল। ‘বুলবুল’ পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন থেকে লেখেন------ ‘ বুলবুল পত্রখানি পড়ে আনন্দিত হলুম। আত্মবিচ্ছেদ ও ভ্রাতৃবিদ্বেষে দেশের হাওয়া যখন বিষাক্ত হয়ে উঠেছে সেই পরম দুর্যোগের দিনে নিষেধের বাণী যে কোথাও ধ্বনিত হতে পারল একে আমি শুভ লক্ষণ বলে মনে করি। ‘ ১৯৩৯ সালে ‘শিশু শিক্ষা’ নামে একটি বই প্রকাশের পরিকল্পনা চলছে। এই বইয়ের ভূমিকা যদি লিখে দেন রবীন্দ্রনাথ ! আশীর্বাদ প্রার্থনা করে চিঠি লিখলেন কবিকে। দ্রুত উত্তর এল কবির- ‘গদ্যে পদ্যে তোমার সকল রচনাকেই আমি অন্তরের সঙ্গে গ্রহণ করে থাকি। কী ভাষায় কী মননশক্তিতে কী সরসতায় তোমার লেখা যে বিশিষ্টতা লাভ করেছে আমি তার প্রশস্তিবাদ তোমাকে পাঠাই, তোমার গ্রন্থে তার ব্যবহার করতে পারো’।
বেগম সুফিয়া কামাল: সুফিয়া কামাল যখন সাত মাসের, পিতা আব্দুল বারি আধ্যাত্মিক আকর্ষণে গৃহত্যাগ করেন। ফলে মাতামহের বাড়িতেই প্রতিপালিত সুফিয়া। বড় মাতুল সৈয়দ মোয়াজ্জেন হোসেন বহু ভাষাবিদ ও বিদ্বান হলেও স্ত্রীশিক্ষার বিরোধী, ফলে সুফিয়ার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ হয়নি। মা সাবেরা খাতুনের উৎসাহে ও প্রেরণায় মাতুলের গ্রন্থাগার থেকে বই চুরি করে করে লেখাপড়া শেখা। বারো বছর হতেই বিয়ে হয়ে গেল। ১৯২৪ সালে প্রথম গল্প ‘সৈনিক বন্ধু’ প্রকাশিত হয় ‘তরুণ’ পত্রিকায়। ১৯২৮ সালে, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন উপলক্ষে একটি কবিতা লিখে পাঠিয়ে দিলেন কবির ঠিকানায় এবং কী সৌভাগ্য, সেই কবিতা পেয়ে রবীন্দ্রনাথ ডেকে পাঠিয়েছেন এবং জোড়াসাঁকোর বাড়িতে দেখা করতে বলেছেন। বোরখা পরিহিতা সুফিয়ার সঙ্গে প্রথম আলাপ হতেই রবীন্দ্রনাথ বললেন- ‘তুমি এত ছোট, এত কচি, ভেবেছিলাম বেশ ভারিক্কি কোন মহিলা হবে তুমি ‘। কবির নিজের অভিনয় দেখার জন্য ডাক পেলেন সুফিয়া। সুফিয়া ও তার স্বামী নেহাল হোসেন গেলেন জোড়াসাঁকোয়। সুফিয়াকে খুব উৎসাহ দিলেন লেখার জন্য। তার স্বামীকে বললেন সহযোগিতা করতে, প্রেরণা দিতে। আসার সময় ‘গোরা’ উপন্যাসটি উপহার দেওয়ার আগে স্বহস্তে লিখে দিলেন ‘কল্যানীয়া সুফিয়া খাতুনকে’। ১৯৩৭ সালে ২৫ শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ্য করে একটি কবিতা লিখে পাঠিয়ে দিলেন। উত্তরে কবি আশীর্বাদ পাঠালেন- ‘বিদায় বেলার রবির পানে/ বনশ্রী যে অর্ঘ্য আনে/ অশোক ফুলের করুন অঞ্জলি।/ আভাস তারি রঙিন মেঘে/ শেষ নিমেষে বইবে লেগে/ রবি যখন অস্ত যাবে চলি’। ১৯৩৮ এ সুফিয়ার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’ প্রকাশিত হল। এটি পড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন- ‘তোমার কবিত্ব আমাকে বিস্মিত করে। বাংলা সাহিত্যে তোমার স্থান উচ্চ এবং ধ্রুব তোমার প্রতিষ্ঠা।
জাহানআরা বেগম চৌধুরী: জাহানআরা বেগমের ( ১৯১৩- ৮২) ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ। পর্দা প্রথা থাকলেও দাদা আলতাফ চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় তাঁর পড়াশোনা। ১৯ বছর বয়সেই ১৯৩২ সালে তার সম্পাদনায় মুদ্রিত হয় ১৫৪ পৃষ্ঠার সচিত্র বার্ষিকী ‘রূপরেখা’। ‘রূপরেখা’ নামকরণটি রবীন্দ্রনাথেরই। রূপরেখার সূচনায় ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি। রূপরেখার জন্য রবীন্দ্রনাথ দুটো ‘শুভেচ্ছা বাণী’ এবং ‘আর্ট’ সম্পর্কে একটি চিঠি পাঠান জাহানআরাকে। পাশাপাশি ‘আর্ট’ সম্পর্কে লেখা চিঠিও ছাপা হয় রূপরেখার প্রথম সংখ্যায়। রূপরেখার সূত্রে রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে আসেন জাহানআরা। একবার জাহানআরাকে স্বাক্ষর লিপি দিতে গিয়ে তাঁর অটোগ্রাফের খাতায় রবীন্দ্রনাথ লিখে দিয়েছিলেন ‘দিশাহারা’ নামের কবিতা..‘চাঁদ কহে, শোনো শুকতারা রজনী যখন হোলো সারা যাবার বেলায় কেন শেষে দেখা দিতে এলি হায় হেসে আলো আঁধারের মাঝে এসে, আমারে করি দিশাহারা’।
একদা ট্রেনে যেতে যেতে সামান্য অবসরে রেলপথেই জাহানআর কে লিখলেন- ‘সেদিন তোমার কথা শুনে বড়ো আনন্দ পেয়েছি এইটুকু জানাবার জন্য তোমাকে একখানি চিঠি লেখবার ইচ্ছা ছিল। সেদিন তোমার কাছ থেকে আমি যেন সমস্ত বাংলাদেশের মেয়েদের হাতের অর্ঘ্য পেয়েছি। এ আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে’। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি মুসলিম নারীরা শিক্ষা-দীক্ষা, লেখালেখি এবং পত্রিকা সম্পাদনা-প্রকাশ করতে গিয়ে রবীন্দ্র সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন বাল্যবিবাহ, কঠোর পর্দাপ্রথার শিকার। এদের কারও কারও বাল্যশিক্ষা প্রথাগত ছিল না। পরে পরিণত বয়সে, আপন চেষ্টা ও বুদ্ধিতে উচ্চশিক্ষার গণ্ডি অতিক্রম করেন। মনে রাখতে হবে, এরা কেউই কালাপাহাড় নন। ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে চেয়েছেন, মানুষ হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার। পৃথিবীর ইতিহাসে যত সর্বাত্মক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, তা অকস্মাৎ সমাজ সমুদ্র থেকে উঠে আসা উত্তাল ঊর্মিমালার সমষ্টি নয়। তা আসলে দশকের পর দশক, শতকের পর শতক চলতে থাকা অব্যবস্থার বিরুদ্ধে লক্ষ কোটি মানুষের স্তব্ধ হৃদয়ের সমবেত প্রতিরোধ। একথা ফরাসি বিপ্লবের ক্ষেত্রে যেমন সত্য তেমন সত্য রুশ বিপ্লবের ক্ষেত্রেও। আমেরিকার পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত নারীদের ত্যাগ তিতিক্ষাকে সামনে রেখে, আজ বিশ্বের নানা প্রান্তে যখন মহাসমারোহে আন্তর্জাতিক নারীদিবস পালিত হয়, নারীর অধিকার যখন অনেকাংশেই স্বীকৃত বলে আমরা দাবি করি; তখন বিশ্ব পরিস্থিতি কিছুটা হলেও যে নারীদের অনুকূলে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আজ থেকে শতাধিক বৎসর আগে মিঞা বাড়ির অন্দরমহল থেকে পর্দানসীন নারীরা সাহিত্যিক হওয়ার বাসনায় যে লড়াইটি চালিয়েছিলেন সেই পথ খুব একটা মসৃণ ছিল না। কাউকে পড়তে হয়েছে বাড়ির লাইব্রেরীর বই চুরি করে, কেউবা স্বল্প অক্ষর জ্ঞান নিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে উদ্যত হলে, সম্পাদক সুধীন্দ্রনাথ এর ভাষায় তা হয়ে যায়-” লেখিকার রচনাটি প্রায় অচল.. তাকে উৎসাহ দেওয়ার সাহিত্যিক কারণ নিশ্চয় নেই।” সেদিনের সুফিয়া কামাল, জাহানারা বেগম ,মাহমুদা সিদ্দিকারা যে লড়াইটা দিয়েছিলেন শত প্রতিকূলতার মাঝে, হতে পারতো এটা একটা ব্যর্থ বিপ্লবের প্রথম পদক্ষেপ। বিশ্ব সমাদৃত সাম্প্রতিককালে বহু আলোচিত এক নারী কন্ঠের নাম মালালা ইউসুফ জাই তার বক্তব্যকে সামনে রেখে বলা যায়..... “When the whole world is silent, even one voice becomes powerful.।” বাংলা সাহিত্যে মুসলিম মহিলা কবিদের অংশগ্রহণ বিষয়ে অবশিষ্ট বিশ্ব নীরব থাকলেও, সে তার পথ করে নিয়েছে আপন কৃতিত্বে। হাল আমলের আনোয়ারা সৈয়দ হক, সানজিদা খাতুন, সেলিনা হোসেনরা হলেন সেই পথেরই নবতম অভিসারী। যে পথ একদিন তৈরি করেছিলেন তাদেরই পূর্বসূরী সুফিয়া, জাহানারা ও মাহমুদা।
** তথ্যসূত্র: বাংলা সাহিত্যে কবি ও কবিতা ( সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ), নারী (হুমায়ূন আজাদ) এবং আমি বীরাঙ্গনা বলছি (নীলিমা ইব্রাহিম )।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct