আপনজন ডেস্ক: ইয়েলবং কালিম্পং পাহাড়ের একটি ছোট গ্রামের নাম যেখানে কেবল ১৫ থেকে ২০ টি পরিবারের বসোবাস। শিলিগুড়ি থেকে দুই কিংবা আড়াই ঘন্টার মাঝে পৌঁছে যাওয়া যায় এই স্বর্গরাজ্যে। বাখরাকোট থেকে ৭ কিলোিটার দূরে অবস্থিত এই ইয়েলবং। মেইন রোড থেকে ৪ কিলোিমটারের জঙ্গল, ছোটো ছোটো ঝর্না ও পাহাড়ি পথ পেরিয়ে পৌঁছে যাওয়া ইয়েলবং গ্রামে। যাওয়ার পথে দেখা মিলবে রকমারি প্রজাপতি ও মথ এর দলের ভিড়। এককথায় প্রজাপতিদের স্বর্গ ইয়েলবং। যেখানে ওদের সাথে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপিসাড়ে গল্পও করা যায় আর ওদের ছুঁয়ে দেখা যায়। গ্রামের চারিদিক থেকেই পাহাড়ের উঁকি ঝুঁকি ও এদিক ওদিকের কিছু মনোমুগ্ধকর ভিউ পয়েন্ট। ইয়েলবং গ্রাম থেকে রিভার ক্যানিয়ন কেভের দুরত্ব প্রায় ৩-৪ ঘণ্টার ট্রেকিং যা Robber’s Cave নামেও পরিচিত। রুমটি নদীর ধার বরাবর পাথরের উপর দিয়ে পায়ের টাল সামলে কেভে পৌঁছানো একটা চ্যালেঞ্জ। এটি প্রায় ২ কিলোমিটার বিস্তৃত নদীর পাড় ঘেঁষে ট্রেকপথ যার শেষে একটি গুহার দেখা মিলে যেরকমটা হয়ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সেরকম খুব একটা নেই। পাহাড়ী নদী তার আপন ছন্দে কখনো উত্তাল কখনো নিস্তরঙ্গ ঝিরিঝিরি হয়ে বয়ে চলেছে গুহার বুক চিরে। তবে এতোটুকু বলা যেতেই পারে – কেভে প্রবেশ করার পর নিজেকে খুঁজে পাবেন অন্য এক দুনিয়ায়। কেভের পথও বেশ চ্যালেঞ্জিং। নিজেকে মেন্টালি ও ফিজিক্যালি আগে থেকে তৈরি করে এই ট্রেকে আসা বাধ্যতামূলক। এছাড়া ইয়েলবং ক্যানিয়ন কেভের পাশে ৱ্যাপলিং করার ও শেখার সুযোগ এবং উপযোগী জায়গা দুইই আছে। স্টুডেন্টদের জন্যে ও এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য একেবারেই উপযোগী জায়গা। অনেক অজানা ফলসের সাথে পরিচয় হওয়ার সুযোগ রয়েছে, এদেরই একটি হলো রেইনবো ফলস। ফলস আবার তার উপর রেইনবো, কেমন এক অদ্ভুত কম্বিনেশন যা দেখে চোখ জুরাতে বাধ্য। ইয়েলবং এর স্থানীয় ছেলে ফ্রানচিস ছোট বেলায় কয়লার খনিতে হিরে খুঁজতে গিয়ে প্রথম এই রিভার ক্যানিয়নটি আবিষ্কার করেন। প্রথমে ভয়ে ফিরে এলেও পরে দলবল নিয়ে পুরো টাই খুঁজে বের করেন। আগে এই পুরো রিভার বেড টাই কয়লার খনি হলেও পরে ১৯৬২ সালের দিকে ধস নেমে খননকার্য বন্ধ হয়ে যায়। পুরো ট্রেক টাই বেশ রোমহর্ষক এবং খুব সোজা মোটেই নয়। প্রথমে গ্রাম থেকে ট্রেক করে ৫ কিলোমিটার এর মতো নামতে হবে রিভার বেডে। এরপর ক্যানিয়নে জল, পাথর ডিঙিয়ে এগিয়ে চলতে হবে পুরোটা দেখতে। পুরো ব্যাপার টাই বেশ থ্রিলিং এবং অনবদ্য।
ইয়েলবং যাওয়ার উপায়: প্রথমে ট্রেনে করে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন, তারপর ওখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ইয়েলবং। গাড়ি বাগরাকোট স্টেশন থেকে ইয়েলবং এর দিকে যাবে। গোটা রাস্তা ৩০ কিলোমিটার মতো, তবে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মতো। গাড়ি একদম গ্রামের ভিতর এর রাস্তায় না যেতে চাইলে অগত্যা ৪ কিলোমিটার মতো পায়ে হাঁটাই ভরসা।
কোথায় থাকবেন: ইয়েলবং একটি ইকো ফ্রেন্ডলি গ্রাম। ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়ন প্রকৃতির এক বিরল সৃষ্টি যা ভারতে খুব কমই পাওয়া যায়। এখানে এখন বেশ কিছু হোম স্টে চালু হয়েছে। তাছাড়া, আকাশ ভরা তাঁরাকে সাক্ষি রেখে জংগলের মাঝে পাহাড়ি নদীর আওয়াজ শুনতে শুনতে টেন্টের নিচেও কাটিয়ে দিতে পারেন কয়েকটা রাত।
গাইড: গাইড খরচ ৪০০ টাকা পার পার্সন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct