নিজস্ব প্রতিবেদক, বর্ধমান, আপনজন: একজন শিক্ষিকাই যিনি মনের জোড় আর গঠনমূলক পরিকল্পনায় গোটা স্কুলেরই চরিত্র বদলে দিতে পারেন তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ নিলুফার বেগম। নিলুফার পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার শিমূলিয়া উলঙ্গীনি গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা। ২০০১ সালে তিনি যখন বিদ্যালয়ে চাকরি পান, তখন বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত হাল ও ছাত্রীদের শুধু স্কুলে আসা আর পড়া ভালো লাগেনি নিলুফারের। বীরভূমের সিউড়ির মেয়ে নিলুফার কবিগুরুর শান্তিনিকেতন দেখেছেন কাছ থেকেই। তার মনের ক্যানভাসে থাকা এক টুকরো শান্তিনিকেতনকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছেন মঙ্গলকোটে। ২০০১ সালে তিনি যখন শিক্ষিকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তখন বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল ৪০০ মতো। এখন সংখ্যাটা বেড়ে হাজারের কাছাকাছি। শারীর শিক্ষা ও বিজ্হান বিভাগের শিক্ষিকা নিলুফার বেগম সিউড়ি আরটি গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৮০-৮১ সালে সিউড়ী আরটি গার্লস স্কুল থেকে বীরভূম জেলায় শত মিটার রান ও লং জাম্পে রের্কড গড়ে নজির গড়েন । সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে গ্রাজুয়েট হন। তারপর শিক্ষকতাজীবন শুরু করেন। তিনি শারীর শিক্ষা বিভাগের শিক্ষিকা হলেও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড তার নেশা। বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নানা দিক দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন জীবনের সব প্রতিভাকে উদার করে। বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা মহকুমা থেকে জেলা স্তর ছাপিয়ে পৌছে গেছে রাজ্যস্তরে নিলুফারের প্রচেষ্টায়। বিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরুর সঙ্গে খুশি হবার থেকে মানসিকভাবেই ভেঙ্গেই পড়েছিলেন নিলুফার বেগম। কারণ চাকরী করে তিনি শুধু মাসমাইনে নিয়ে খুশি থাকতে চান নি। তিনি চেয়েছিলেন জীবনে এমন কিছু করবেন যাতে তার হাতে জন্ম নেয় হাজার হাজার নিলুফার। নিলুফার দিদিমনির অনুপ্রেরনায় বহু ছাত্রী আজ শিক্ষা জগৎ ছাড়াও বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। পড়াশুনোর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো ও পরিবেশগত উন্নয়ন করে বহু স্কুলছুট ছাত্রীকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন স্কুলে। আজ ৫৭ বছর বয়সের মধ্যে ২২ বছরের কর্মজীবনে তিনি হেঁটেছেন দীর্ঘপথ, তার পরিচয় পরিচিতি সম্মান ভালোবাসা নিলুফার ব্যাক্তিগত জীবনের হিসেবের খাতায় হিসেবহীন। জননেত্রী না হয়েও মঙ্গলকোট এলাকার হাজার হাজার মেয়ের মা হয়ে বেশ জনপ্রিয় নিলুফার বেগম।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct