আপনজন ডেস্ক: গোমাংস বহনের সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার শিকার হলেন আরও এক মুসলিম ব্যক্তি। এ যেন উত্তরপ্রদেশের আখলাক হত্যার পুনরাবৃত্তি। তবে, এবারের ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের ছাপরা জেলায়। ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে হিন্দুত্ববাদী জনতার হাতে প্রকাশ্য দিবালোকে খুনের মতো অনেক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বিহারের ছাপরা জেলায় গো মাংস বহনের সন্দেহে নাসিব কুরেশিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নাসিব বাড়ি ফেরার সময় লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে কয়েক ডজন লোক তাকে ধরে নিয়ে যায়। ছাপরা পুলিশ সুশীল সিং, রবি শাহ এবং উজ্জ্বল শর্মা নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার ছাপরার রসুলপুর থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৭৯ ও ৩৪ ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘অন্য অভিযুক্তদের গ্রেফাতার করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। কুরেশি সিওয়ানের হাসানপুরের বাসিন্দা ছিলেন। নাসিবের এক আত্মীয় আশরাফ কুরেশি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, গোমাংস বহনের সন্দেহে ছাপরার রসুলপুরে জনতা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। তিনি জানান, নাসিব একজন শ্রমিক। তার ছয় মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। এক মেয়ে অবিবাহিত। তাকে সরকারি চাকরি দেওয়া উচিত। দোষীদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। তবে আশরাফ পুলিশের নেওয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়, নাসিবকে আটক করে কালো ও নীল রঙের কয়েক ডজন লোক লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। প্রচণ্ড মারধরের ফলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। নাসিবের ভাগ্নে ফিরোজ আহমেদ জানান, ঘটনার সময় তিনি তার কাকার সঙ্গে ছিলেন। তারা যখন যোগিয়া গ্রামে প্রবেশ করেন, তখন গ্রামের এক প্রধান গোমাংস বহন করার অভিযোগ এনে লোকজনকে মারধর করতে প্ররোচিত করেন। ফিরোজ বলেন, ‘আমাদের মারধরের ডাক দেওয়ার কথা শুনে আমি পালিয়ে যাই। কিন্তু তারা আমার কাকাকে ধরে নিয়ে মারধর শুরু করে। আমি অনেক দূরে পালিয়ে গিয়েছিলাম। আমি যখন ফিরে এলাম, দেখলাম গ্রামবাসীদের ভিড় ক্রমাগত আমার কাকাকে মারধর করছে। এরপর আমি স্থানীয় থানায় যাই। ফিরোজ ঘটনাস্থলে পুলিশের সঙ্গে ফিরে আসেন। ফিরোজ আরও বলেন, এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ফিরোজকে তার চাচার মতো একই আচরণ করার হুমকি দেয়, যদি সে আর সেখানে থাকে। পরে ফিরোজ নাসিবকে অচেতন অবস্থায় ছাপরার একটি স্থানীয় হাসপাতালে দেখতে পান। তাকে সিওয়ান সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল যারা তাকে পাটনাতেও রেফার করেছিল। পাটনায় নিয়ে যাওয়ার পথে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নাসিব। ফিরোজ বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই... তারা শুধু মানুষ নয়, আমরাও মানুষ। তার এক আত্মীয় জানান, ছাপড়া পুলিশ প্রাথমিকভাবে এটিকে ‘দুর্ঘটনা’ বলার চেষ্টা করেছিল।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct