আপনজন ডেস্ক: এক আধজন নন। প্রায় ১০০জন। তাঁদের কেউ মন্ত্রী, কেউ বিধায়ক, কেউ সাংসদ, কেউ বা কাউন্সিলর। কেউ কেউ আবার গ্রাম পঞ্চায়েতের বা জেলা পরিষদের সদস্য। এরা সকলেই চাকরির জন্য বেশ কয়েক হাজার নাম সুপারিশ করে পাঠিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্যের কাছে। সেই সব সুপারিশপত্র হাতে পেয়েছেন দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও সিবিআই’র আধিকারিকেরা। আর তার জেরেই এই দুই তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা এবার তাঁদের তদন্তের জালে এই ১০০জন জনপ্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চলছে। কেননা তাঁদের ধারণা এরা মোটা টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন কয়েক হাজার যুবক-যুবতীকে। ইডি ও সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ১০০জন জনপ্রতিনিধিরা প্রায় সকলেই শাসক দলের নেতা। এরা প্রত্যেকে কতজন চাকরিপ্রার্থীর নাম পাঠিয়েছিলেন এবং তার জন্য কমিশন বাবদ কত টাকা পেয়েছেন, তার তালিকা ইতিমধ্যেই দুই কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে এসেছে। তাদের সম্পত্তির নথিও জোগাড় করেছেন তদন্তকারীরা। সমস্ত কাগজপত্র দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত এলেই জনপ্রতিনিধিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে ঝাঁপাবেন তাঁরা। জিজ্ঞাসাবাদে সদুত্তর না পেলে গ্রেফতার। ঘটনার তদন্তে নেমে যারা এই জনপ্রতিনিধিদের হাত ধরে চাকরি পেয়েছিলেন এবং পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন, তাদের বেশ কয়েকজনকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। তাদের কাছ থেকে মূলত জানতে চাওয়া হয়েছিল, পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও কীভাবে তাঁদের চাকরি জুটল। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ে ওই সব চাকরিহারা প্রার্থীরা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, এজেন্টদের মাধ্যমে প্রার্থী জোগাড় হতো। এজেন্টরা নামের তালিকা জমা দিতেন প্রভাবশালীদের কাছে। তাঁরাই ওই তালিকা পৌঁছে দিতেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে কিংবা মানিক ভট্টাচার্যের কাছে। কোন জেলা থেকে কোন এজেন্ট তালিকা পাঠালেন, তাঁর নাম ও ফোন নম্বর ওপরে লেখা থাকত। কে, কোন পদের জন্য টাকা দিয়েছেন, তাও উল্লেখ করে দিতেন প্রভাবশালীরা। প্রত্যেকের জন্য ‘কোটা’ নির্দিষ্ট ছিল। জেরার মুখে তাঁরা এটাও জানিয়েছেন, এজেন্টদের মুখে তাঁরা এলাকার বিধায়ক, মন্ত্রী বা কাউন্সিলারের নাম শুনতেন। এজেন্ট বা মিডলম্যানরা দাবি করতেন, এই সব ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের হয়েই তাঁরা কাজ করছেন। পরবর্তী সময়ে এজেন্টদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হতেই রহস্যের পর্দা ফাঁস হয়। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, প্রভাবশালীরা সকলেই নানা স্তরে জনপ্রতিনিধি। এর মধ্যে কলকাতা ও জেলা মিলিয়ে ৮৫ জন কাউন্সিলারের নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৭ জন কাউন্সিলর কলকাতা পুরসভার। বাকিদের কেউ বিধায়ক, কেউ সাংসদ, কেউ মন্ত্রী কেউ বা গ্রাম পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদের সদস্য।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct