আপনজন ডেস্ক: ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত সাহা ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছিলেন। কিন্তু সেই সুব্রত সাহার প্রয়াণের পর শূন্য আসনে সাগরদিঘি উপনির্বাচনে মাত্র দু বছরের ব্যবধানে তৃণমূল কংগ্রেসকে হারতে হল। শুধু তাই নয় তৃণমূলের সেই ৫০ হাজারের জেতার মার্জিনকে ছাপিয়ে ২২,৯৮০ হাজার ভোটে জিতে গেছেন বাম কংগ্রেসের জোট প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। সেটাই এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের কাছে। কারণ, সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট ৬৫ শতাংশের বেশি হলেও তৃণমূল প্রার্থী সুুব্রত সাহা বরাবরই বড় ব্যবধানে জিতে আসছিলেন। তার মূলে যে সংখ্যালঘু ভোট তা নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। কিন্তু সাগরদিঘি উপনির্বাচনে সুব্রত সাহার পরিবারের মধ্য থেকে প্রার্থী না করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক দূরাত্মীয় দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূল প্রার্থী করায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপর্যয়ের পর সেই প্রশ্ন এবার বড় করে দেখা দিয়েছে। তাই তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামল তা খতিয়ে দেখতে চাইছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে সংখ্যালঘুদের জন্য নানা উন্নয়নের পরই সংখ্যালঘুরা সত্যিই বিমুখ কেন, তার কারণ খতিয়ে দেখতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের মধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিলেন। শুধু তাই নয়, উপ নির্বাচনে তৃণমূলের বিপর্যয় নিয়ে পাঁচ সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গড়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর আলাদা করে এই ৫ জনের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। কমিটিকে প্রয়োজনে সাহায্য করবেন ফিরহাদ হাকিম ও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
সেই পাঁচজনের কমিটির উপর িদয়েছেন তদন্ত করে খুঁজে বের করতে, সত্যি িক সাগরদিঘিতে বড় সংখ্যক সংখ্যালঘু মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন? তার ওই তদন্ত কমিটিকে শীঘ্রই সাগরদিঘি হারের তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে দলনেত্রীর কাছে। জানা গিয়েছে, সাগরদিঘিতে তৃণমূল কংগ্রেসের হারের কারণ খুঁজে বের করতে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের চার সংখ্যালঘু মন্ত্রী ও একজন সংখ্যালঘু বিধায়কের উপর। তারা হলেন গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান, সংখ্যালঘু প্রতিমন্ত্রী গোলাম রাব্বানী ও বিধায়ক জাকির হোসেন। তবে, এই কমিটিতে স্থান পাননি জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান। যদিও সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় থাকতে দেখা গিয়েছিল খলিলুর রহমানকে। তারপরও সাংসদ খলিলুর রহমানকে কেন তদন্ত কমিটিতে রাখা হল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তৃণমূলের এক মুসলিম মহিলা সাংসদ সাগরদিঘিতে তৃণমূলের ভরাডুবি নিয়ে দলের একাংশের বিরুদ্ধে মিরজাফরের ভূমিকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন আর তারপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন খুবই ইঙ্গিতবহ। যদিও স্থানীয় সূত্র জানাচ্ছে, মুর্শিদাবাদ জুড়ে বরাবরই বিড়ি শিল্পপতিদের একটা প্রভাব রয়েছে সংখ্যালঘুদের মধ্যে। কারণ, সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ বিড়ি শিল্পের উপর নির্ভরশীল। তৃণমূল সেটাকেই ঢাল করে কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত জঙ্গিপুরে লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল বিড়ি শিল্পপতি খলিলুর রহমানকে। খলিলুর রহমান সেক্ষেত্রে বিপুল ভোটে জিতেছেন। একইভাবে বিড়ি শিল্পপতি জাকির হোসেন ও ইমানি বিশ্বাসকেও প্রার্থী করে সফল হয়েছে। কংগ্রেস সেই কায়দায় বিড়ি শিল্পপতি বায়রন বিশ্বাসকে প্রার্থী করে বাজিমাত করেছে কিনা তা তৃণমূলের তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ার পর স্পষ্ট জানা যেতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct