নিজস্ব প্রতিবেদক, কালিয়াচক, আপনজন: মালদার কালিয়াচকে নারীদের পুঁথিগত ও দ্বীনি শিক্ষার জন্য জন্য এলাকায় কোনও মহিলা মাদ্রাসা ছিল না। তার মধ্যে কালিয়াচক আর্থিক দিক থেকেও পিছিয়ে পড়া এলাকা। এরকম জায়গায় স্বভাবতই নারী শিক্ষার প্রসার ও শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ বিকাশের লক্ষে ত্রাতার ভূমিকায় এগিয়ে এসেছেন অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ কর্মী হাজী মোহা রুহুল কুদ্দুস। কালিয়াচক থানার সিলামপুর-১ গ্রামপঞ্চায়েতের ঝাকসুটোলায় তাঁর বাড়ি। কুদ্দুস বাবু নিজের বাড়িঘর সহ আড়াই কাঠা জমি দান করেছেন এবং সেই জমিতে গড়ে তুলেছেন মহিলা মাদ্রাসা। এটি গ্রামবাসী ও শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতায় চলছে। ২০১৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন পুলিশকর্মী কুদ্দুস। ২৭ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করেছেন। ছোটবেলা থেকেই পাচ ওয়াক্ত নামাজী ও শিক্ষানুরাগী এই পুলিশকর্মী কুদ্দুস। তার বাবা প্রয়াত হাজী রাব্বুল সেখ ও মা সাহেদুন বিবি ও পরিবারের স্মৃতিতে এই আড়াই কাঠা জমি দান করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। গত ২০২০ সালে “আল জামায়াতুস সুন্নিয়াহ মাদ্রাসাতুল বানাত” নামাঙ্কিত মহিলা মাদ্রাসা পথ চলা শুরু করে। মাত্র ৪০ জন ছাত্রী নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে ছাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮০ জন। ছাত্রীদের মধ্যে বেশির ভাগ গরীব ও দুস্থ পরিবার থেকে এখানে পড়াশোনা করতে আসে। ছাত্রীদের কারো বাবা নেই আবার কারো বাবা ভিনরাজ্যের শ্রমিক। কেউ দরিদ্র কারো বাবা প্রয়াত হয়েছেন। ওরা মেয়ে! ওরা ছাত্রী! ঘরের ছাত্রীরা আজ আমাদের রত্নের মতো। ওরা আলোকবর্তিকা। মারুফা খাতুনের বাড়ি কৃষ্ণপুর গাঙনী, সে পড়ে তৃতীয় শ্রেণীতে ।তার বাবা ফারিদুল সেখ মুম্বইয়ে শ্রমিক। ছাত্রী নূর ফাতেমার বাবা এনামূল সেখ মুম্বই এ শ্রমিক। দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী উম্মে হানীর বাবা পারিমুদ্দিন সেখ পাটনাতে কাজ করেন। তৃতীয় শ্রেণীর নাজমিন খাতুনের বাবা রিয়ামত প্রয়াত হয়েছেন। এরকম বহু দুস্থ ও ভিনরাজ্যের শ্রমিকের পরিবারের মেয়েরা এখানে প্রতিদিন পড়াশোনা করছে। এখানে বাংলা, ইংরেজী, অংক, আরবি, উর্দু, কর্মনির্ভর মূল্যবোধ নির্ভর বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করছে ওরা। ছাত্রীদের কথায়, পড়াশোনা করতে ভালো লাগছে। সকালে আসি। যদিও আর্থিক অনটন ও শিক্ষিকার অভাবে একটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে চলছে এই মহিলা মাদ্রাসা। ছাত্রীরা হাসিমুখে জানাল, “সকাল সাড়ে সাত শুরু সাড়ে ১০ টায় শেষ হয় পঠনপাঠন। “মোহাম্মাদীয়া হাই মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা কোষাধ্যক্ষ হাজী মোহা হামিদুল সেখ বলেন, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী কুদ্দুসের মহতি দানে গড়ে ওঠেছে মাদ্রাসা। তিনি আরো বলেন, সকালে ছাত্রীরা আসে আনুমানিক ২/৩ কিমির মধ্যে থেকে। এখানে কোন পয়সা লাগেনা। নিখরচায় পড়াশোনা হয়। এই মহিলা মাদ্রাসাটি দান জাকাত, ফেতরা প্রভৃতির ওপর চলছে ও এর উপর নির্ভর করেই চলছে। মহিলাদের শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ুক। মহিলারা শিক্ষিত হলে সমাজ থেকে আসাম্য, বৈষম্য ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান আরো সহজ হয়ে উঠবে। নারী শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে আমূল পরিবর্তন সম্ভব। এমনকি এই মহিলা মাদ্রাসার উন্নতিকল্পে সম্প্রতি দিনভর মহিলা বক্তা নিয়ে মহিলাদের জন্য জালসা অনুষ্ঠিত হল । মহিলাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। এই জালসায় বীরভূমের নলহাটির মোহতারামাহ ওয়াহিদা সূলতানা, মুর্শিদাবাদের সুতির হাসনেহানা বিবি, মুর্শিদাবাদের আরেক মহিলা বক্তা আলেমাহ কারিয়া মারইয়াম খাতুন, মালদার পুখুরিয়ার হাফেজা সুহানা খাতুন বিভিন্ন বক্তাগন বক্তব্য পেশ করেন। সমাজে নারীদের পঠনপাঠন ও শিক্ষাদীক্ষা মূল্যবোধ সহ নারী উন্নয়নের বিভিন্ন দিকের আলোকপাত করেন। মূলত মহিলাদের মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের সাথে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিপূরক। এই ধরণের কার্যক্রমে নারী শিক্ষার দিক উন্মোচন হবে কমিটির কর্মকর্তারা জানান। এদিকে যিনি জমি বাড়ি দান করেছেন সেই পুলিশ কর্মী সভাপতি হাজী মোহা রুহুল কুদ্দুস বলেন, আমার উদ্দেশ্য মহৎ। আমি নারী শিক্ষার প্রসারে ঘরবাড়ি সহ আড়াই কাঠা জমি দান করেছি। আমার আনন্দ এই মহিলা মাদ্রাসা থেকে ঘরে ঘরে শিক্ষার আলোর বিচ্ছূরন ঘটাবে। শিক্ষাই পারে পরিবর্তন আনতে। এলাকায় কোন মেয়েদের মাদ্রাসা নেই। আমার স্বপ্ন নারী শিক্ষার উন্নতি। একদিন মহিরুহে পরিনত হবে মহিলা মাদ্রাসা। প্রধান শিক্ষক আইনুল হক সাকাফি বলেন, আলিনগর, তোফি, সিলামপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় কোন মহিলা মাদ্রাসা নেই। অভিভাবকদের ও ছাত্রীদের উৎসাহ যথেষ্ট। আর্থিক কারনে পরিকাঠামো এখনো পূর্ণ গড়ে ওঠেনি। আমাদের মহিলা শিক্ষিকার অভাব রয়েছে। স্বভাবতই ধীরে ধীরে শিক্ষিকা পূরন হবে। পড়াশোনা করে উপকৃত হচ্ছে এলাকার ছাত্রীরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct