পাখি নীড়ে ফেরেনি
‘পাখি নীড়ে ফেরেনি ‘ বইটি পুলিশ ডিপার্ট মেন্টের নিম্নতমপদ সিপাইদের নিয়ে,যারা শুধু স্যালুট করে,কাঁধে বন্দুক নিয়ে মুখ বুজে নীরবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে, তাদের জীবনের সুখ দুঃখ, ব্যাথা বেদনার করুন ইতিহাস। সেই কবে ব্রিটিশ আমলে পুলিশ তৈরি। তার সর্বনিম্ন পদ সিপাই। যে সেপাইকে তাদের দেশের মানুষ আদর করে ডাকে, ববি। আর আমাদের দেশে সেই সেপাই কি জনগণ,কি পুলিশ আমলা ঘৃণা ও অবজ্ঞার চোখে দেখে। মেয়ের বাবারা মেয়ের বিয়ে পর্যন্ত চায়না দিতে পুলিশ সেপাই কে। এই উপন্যাসে সেই রকম এই সেপায়ের লড়াইয়ের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। হারুন গরীব ঘরের মেধাবী ছাত্র। ইংলিশ অনার্স নিয়ে কলেজে পড়তে পড়তে পুলিশ সেপাইএ ভর্তি। যে যুগে পুলিশ সেপায়কে নিয়ে পুলিশ আমলা আর্দালির নামে গৃহভৃত্যের মতো বাড়ির কাজ করতো। তারা সাহেবদের আজ্ঞাবহ দাস হিসেবে কাজ করতো। কাউকে ডাকতে বললে ধমকে আসতো,ধরতে বললে লাঠিপেটা করে নিয়ে আসত। পুলিশ ব্যারাকের অস্বচ্ছ মিটমিটে আলোয় ছোট্ট লোহার খাটিয়ায় তাসপাশা, সাটটা,সারাবে মত্ত থাকতো। সেই পরিবেশে হারুন কঠিন পুলিশ ডিউটি করেও কলেজে ভর্তি হয়ে ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি ছিনিয়ে নিয়েছে।
নিজের যোগ্যতায় সেই হারুন শিরি ভাঙতে ভাঙতে ধাপএকদা থানার ওসি হয়েছে। ৬/৭টা থানায় সুনামও সুখ্যাতির সঙ্গে ওসি গিরি করেছে। শুধু কি তাই সেই হারুন ইন্সপেক্টর হল, দু দুটো থানায় আই সি হিসাবে সবার শ্রদ্ধা অর্জন করলো। যা পুলিশের ইতিহাসে বিরল। শিরদাঁড়া খাড়া করে সেই সেপাই হারুন সিআইডি ইন্সপেক্টর হিসাবে চাকুরীজীবন শেষ করলো। ভাবছেন এটা গল্প । না না,এটা টাটকা সত্য। এই বইয়ে লেখক আরোদেখিয়েছেন,নিম্নপদস্থ পুলিশের নুনতম আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্যে কিছু সিপাইয়ের আত্ম বলিদান, আত্মত্যাগ। মানবিক অধিকার রক্ষা আদায়ে যারা একটি ডিসিপ্লিনড পুলিশ বাহিনীর ওপরওয়ালার রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে সংগঠন তৈরি করেছিল। পরবর্তীতে সরকার সেই সমিতি ব্যান্ড করে দেয়। তাদের চাকরী খোয়ায়। উদ্যোক্তারা মিশায় জেল খাটে। চাকরি খুইয়ে পথে পথে পরিবার নিয়ে চরম দুঃখ দুর্দশায় দিন গুজরান করেছে। ঘরে বাইরে লাঞ্ছিত হয়েছে। মজার কথা,পরবর্তী সরকার যখন আবার সেই সংগঠনের স্বীকৃতি দেয়,তাদের চাকরি পুনর্বহাল করে,তখন তাদের সৃষ্ট সমিতিতে তারা ব্রাত্য। নব্যতরুন তুর্কিরা সংগঠনের মাথা। আতর সেন্ট মেখে গলায় চেইন ঝুলিয়ে সেইসব নব্যবাবুরা সমিতির ব্যাবহারেরপুলিশ গাড়ী চড়ে এক একজন এস পি, ডি এস পি র মতন রেলা দিত। ফোর্সের দুর্দশায় তারা আর কান দিত না। সফরারদের বুরোভাম বলে টিটকারী দিত। আর বুরভাম সফরাররা কপাল ছাপড়াতো,হা ভগবান!আমরা লড়াই করেছিলাম,জেল খেটে ছিলুম,বরখাস্ত হয়েছিলাম, জুরিদারদের চোখের জল মোচাতে,তাদের দুঃখকষ্ট লাঘব করতে,ওপরওয়ালার রক্তচক্ষু রুখতে। আমরা চাইনি সমিতির নামে কেউ এস পি, এস ডি পির মত উদ্ধত আচরণ করবে,সমিতির চাদর গায়ে চড়িয়ে তার জুরিদার ভাইকে ধামকাবে, আর নাজায়েজ কাজে মত্ত থাকবে। লেখক নিজে পুলিশে ছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা,বাস্তবতা, আর নিজের চোখে দেখা দৃশ্য পুলিশ সিপায়ের নীরব আকুতি,তাদের ব্যাথা বেদনা, দুঃখ কষ্ট ঝর্না ধারার মতো ঝর ঝরিয়ে ঝরে পড়েছে।
বইটির মধ্যে পাঠক নিশ্চয় ভিন্ন স্বাদ পাবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct