সম্প্রতি জলদাপাড়া জাতীয় অভয়ারণ্যে এরকমই একটি চিত্র উঠে এসেছিলো। তাছাড়াও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রাণী হত্যার সংবাদ শিরোনামে উঠে আসছে। প্রসঙ্গত পৃথিবীতে অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। প্রত্যেকটি প্রজাতিই পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন কারণ তথা পরিবেশগত ও জলবায়ু গত পরিবর্তনের জন্য এই সকল বন্যপ্রাণীরা নানা রকম সমস্যায় বর্তমানে পড়ছে। এরকম পরিস্থিতির মধ্যেই ৩রা মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস পালিত হতে চলেছে। এ নিয়ে লিখেছেন সজল মজুমদার।
বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’- সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পালামৌ ভ্রমণ কালে তার করা এই উক্তিটি আজ অত্যন্ত বাস্তব এবং প্রাসঙ্গিক। আসলে বন্যপ্রাণীরা অরণ্যাঞ্চলে বর্তমানে কতটা সুরক্ষিত!!! আমাদের দ্বারাই প্রতিনিয়ত বন্যপ্রাণীরা বিরক্তির শিকার হচ্ছে না তো!!! সম্প্রতি জলদাপাড়া জাতীয় অভয়ারণ্যে এরকমই একটি চিত্র উঠে এসেছিলো। তাছাড়াও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রাণী হত্যার সংবাদ শিরোনামে উঠে আসছে। প্রসঙ্গত পৃথিবীতে অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। প্রত্যেকটি প্রজাতিই পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন কারণ তথা পরিবেশগত ও জলবায়ু গত পরিবর্তনের জন্য এই সকল বন্যপ্রাণীরা নানা রকম সমস্যায় বর্তমানে পড়ছে। এরকম পরিস্থিতির মধ্যেই আগামী ৩রা মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস পালিত হতে চলেছে। এবারের বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, - “ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ” । অর্থাৎ বিপন্ন বন্যপ্রাণদের রক্ষা করার জন্য তথা বন- পরিবেশের সুস্থায়ী ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে আমাদের সকলকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা আবশ্যক। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ৬৮ তম অধিবেশনে ঘোষণা করা হয় যে, ৩ রা মার্চ ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, তৎসহ বিরল বিপন্ন সংকটা পন্ন বন্যপ্রাণীদের নিয়ে বেআইনি ব্যবসা বন্ধ করবার জন্য যে Convention on International Trade in Endangered Species of Flora & Fauna (CITES) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেটি কেই সামনে রেখে প্রতিবছর ৩রা মার্চ তারিখে বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবস উদযাপিত হবে। সৌভাগ্যবশত এবছর CITES ৫০ বছরে পদার্পণ করেছে। তথাপি আমাদের দেশেও বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন ১৯৭২ সালে এবং অরণ্য সংরক্ষণ আইন ১৯৮০ সালে কার্যকরী হয়েছিল। যাই হোক, বন ও বন্যপ্রাণীদের গুরুত্ব এবং প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে সমাজের বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, সোশিও ইকোলজিস্ট, অধ্যাপক, বন্যপ্রাণবিদ প্রভৃতি মানুষদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন জীব বৈচিত্রের আধার। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় এযাবৎ কয়েক লক্ষ ম্যানগ্রোভ চারা লাগিয়ে বন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের বার্তা দিয়ে চলেছেন সেখানকারই ভূমিপুত্র তথা WWF প্রদত্ত Dr.Rimington Award জয়ী ম্যানগ্রোভ ম্যান বলে পরিচিত উমা শংকর মন্ডল।
বন্যপ্রাণ নিয়ে তিনি বলেন, “সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু অত্যধিক সাইক্লোনিক এফেক্ট থেকে এই অঞ্চলকে রক্ষা করবার জন্য ম্যানগ্রোভ চারা রোপনের পরিমাণ আরো বাড়ানো প্রয়োজন। সেজন্য সোশ্যাল ফরেস্টট্রিতে জোর দিতে হবে। অরণ্য সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত থাকলেই বন্যপ্রাণ নিরাপদে থাকবে। সুন্দরবনের বাফার এলাকায় কাজকর্মের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে নানা ধরনের ইকোলজিক্যাল প্রাণীদেরও বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। এই উদ্দেশ্যেই আগামী ৩রা মার্চ স্থানীয় গ্রামবাসী,এনজিও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফে যৌথভাবে ৫০০০ ম্যানগ্রোভ চারা রোপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে” । অপরদিকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বনাঞ্চলে নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির অস্তিত্ব সংকটের দোরগোড়ায় বা বিলুপ্তির দিকে। এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট বন্যপ্রাণ বিদ ড: রাজা রাউত জানালেন , “ বন্যপ্রানের একটা বিরাট অংশের আঁতুড় ঘর হল উত্তরবঙ্গ। দুর্ভাগ্যবশত উত্তরবঙ্গে বন্যপ্রাণ ভগ্নপ্রায় দশায় রয়েছে। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের সরকারি পরিকাঠামোর আরো উন্নতি প্রয়োজন। বর্তমানে ট্যুরিজমের নামে বন্যপ্রাণীদের যাতায়াতের স্থান অবরুদ্ধ করে কোর এরিয়ায় কটেজ,লজ, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হচ্ছে। ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত আনাগোনার ফলে বন্যপ্রাণীরা বিরক্তির শিকার হচ্ছে। শুধুমাত্র ট্যুরিজম প্রজেক্ট হচ্ছে, কিন্তু ওয়াইল্ড লাইফ ট্যুরিজমের সাথে সাথে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে একরকম উদাসীনতা চোখে পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, বক্সা টাইগার রিজার্ভ যেটি কিনা National Tiger Conservency Authority র অধীনে রয়েছে, ২০১৮ সালের বাঘ গণনার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে বক্সায় বর্তমানে একটিও বাঘ নেই, অথচ প্রকল্প কিন্তু চালু রয়েছে। এছাড়া উত্তরবঙ্গে বন্যপ্রাণীদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই। সে কারণে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা ব্যবস্থাতে জোর দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন”। অপরদিকে আবার বন্যপ্রাণ নিয়ে মালদা কলেজের ভূগোল বিভাগের নবীন অধ্যাপক ড: মিঠুন রায় বলেন, “ বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করতে হবে, এই ভাবনাটাই ভুল!!! তার মানে আমরা শক্তিশালী আর বন্যপ্রাণীরা দুর্বল!!! প্রকৃতিতে সবার বেঁচে থাকার সমান অধিকার রয়েছে, মানুষ বন্যপ্রাণীদের প্রতি উপযুক্ত মর্যাদা দিলে এবং বন্যপ্রাণ নিয়ে প্রকৃত উপলব্ধি জাগ্রত হলেই বন্যপ্রাণী দিবস পালনের যথার্থতা থাকবে। তাই বন্যপ্রাণ রক্ষা করবার পাশাপাশি তাদের প্রতি উপযুক্ত কর্তব্য পালন করাও আমাদের প্রয়োজন। যেটি ভারতীয় সংবিধানেও বলা হয়েছে”। সুতরাং আসুন, বিশ্বের বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ কুলের প্রতি গণসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা এবারের বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসকে সার্থক করে তুলি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct