নকীব উদ্দিন গাজী, ফলতা, আপনজন: জন্ম থেকেই ওর দুই হাত প্রায় অসাড়। দু’টো চোখেই ভালো করে দেখতে পায় না। মেয়েকে নিয়ে উদ্বেগের শেষ ছিলোনা পরিবারের। সেই মেয়ের অদম্য জেদে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সে। যা কোনওদিন ভাবতে পারেননি পরিবারের লোকজন। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ফলতার শতলকলসা হাইস্কুল পরীক্ষাকেন্দ্রে রাইটার নিয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে বিশেষভাবে সক্ষম মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী লাবনী রায়। ফলতার বেলসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনাকোপা গ্রামের বাসিন্দা লাবনি। চানাচুর কারখানার কর্মী আনন্দ রায় ও ইরাবতী দেবীর দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে লাবনীই ছোট। কিন্তু জন্ম থেকেই মেয়ের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা চিন্তায় ফেলে দেয় রায় দম্পতিকে। একদিকে সাংসারিক অনটন অন্যদিকে মেয়েকে নিয়ে দু:শ্চিন্তা ক্রমে গ্রাস করে তাঁদের। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এক অদম্য জেদ যেন পেয়ে বসে লাবনীকে। উচ্চশিক্ষার জন্য পড়াশোনা করতে চায় সে। বর্তমানে স্থানীয় বেলসিংহ গার্লস হাইস্কুলের মাধ্যমিকের ছাত্রী লাবনী। বৃহস্পতিবার থেকে মা ইরাবতী রায়ের সঙ্গে শতলকলসা হাইস্কুল পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রথম দিনের পরীক্ষা দিতে আসে হাসিমুখেই। নিজের স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী রাকিবা খাতুনকে রাইটার হিসেবে নিয়ে পরীক্ষা দেয়।পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে বেশ খুশি লাবনী। জানায়, পরীক্ষা বেশ ভালই হচ্ছে তার। বাকি পরীক্ষাগুলিও ভালো হবে বলে নিশ্চিত সে। আগামীদিনে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায় সে। বেলসিংহা গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানান, পঞ্চম শ্রেণী থেকেই বেলসিংহ গার্লস হাইস্কুলে পড়াশোনা করছে লাবনী রায়। পরীক্ষার আগে পরিবারের লোকজন স্কুলে জানায় লাবনী রায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যায় কিন্তু তার দুটি হাত অকেজো কিভাবে সে পরীক্ষা দেবে? পরে তার জন্য একজন রাইটার নির্বাচন করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে আবেদন করা হয়। সে মতোই লাবনী পরীক্ষা দিচ্ছে। ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর খবর পেয়ে ফলতা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর খান সমিতির শিক্ষার কর্মাধ্যক্ষ কে নির্দেশ দেন ওই ছাত্রীর যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সেমত প্রথম দিন ফলতা পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষার কর্মাধ্যক্ষ নিজের গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দেন লাবনী রায় কে এবং পরীক্ষা কটা দিন ওই ছাত্রীর যাতায়াতের জন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
ফলতার বিডিও সন্দীপ ঘোষ জানিয়েছেন, লাবনীর স্কুলের দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে তার রাইটার হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে । মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তা অনুমোদন করায় প্রায় একশো শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ওই পরীক্ষার্থী এবার মাধ্যমিকে বসেছে। এদিন পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে ওই পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথাও হয়েছে তাঁর। সম্পূর্ণ আলাদা একটি ঘরে তার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাবনীর উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে তার স্বপ্নপূরণের আশীর্বাদ করেন বিডিও। লাবনীর জীবনযুদ্ধকে কুর্নিশ জানিয়েছেন ডায়মন্ডহারবারের মহকুমাশাসক অঞ্জন ঘোষও তিনি বলেন পরীক্ষার যাবতীয় সাহায্য করার প্রশাসন করবে। তার উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন তিনি। অবশ্য জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিতে দিতে লাবনী পরিবারের লোকজনকে জানায় আগামী দিনে আরো পড়াশোনা করতে চায় সে। আর এ নিয়ে বিপাকে পরিবারের লোকজন। দিনমজুর পরিবারে কোনোক্রমে চলে সংসার তার মাঝে কিভাবে লাবনী রায়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবারের লোকজন। অবশ্য ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় লাবনী যদি পড়াশুনা করতে চায় তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সবরকম সাহায্য করা হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct