আপনজন ডেস্ক: ২০০২ সালের ভয়াবহ গুজরাত দাঙ্গার ২১ বছর পার হয়ে গেছে। ২০০২ সালের ২৭ পেব্রুয়ারি গোধরায় করসেবকদের ট্রেনে আগুন লাগিয়ে হত্যার ঘটনার পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গুজরাত জুড়ে নারকীয় সংখ্যালঘু হত্যা শুরু হয়। সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরুতে আহমেদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটিতে সংসদ সদস্য এহসান জাফরি সহ ৬৯ জনকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। সেই গুলবার্গ সোসাইটিতে গুজরাত দাঙ্গায় নিহতদের স্মরণে তাদের স্বজনদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হল। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় কুরআন তেলাওয়াত করা হল। এ উপলক্ষে গুলবার্গ সোসাইটির ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন ইটিভি ভারত উর্দু বিভাগের এক সাংবাদিক। দাঙ্গায় পরিবারকে হারানো নিয়ে নার্গিস তাকে বলেন, এহসান জাফরির বাংলো আমাদের বাড়ির কাছেই ছিল। ২১ বছর আগে ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গুলবার্গ সোসাইটিতে ১৫ তেকে কুড়ি হাজার উন্মত্ত জনতা হামলা করেছিল। তাদের হাতে হত্যার তালিকায় আমার পরিবারের ১০ জন সদস্য ছিল। হত্যা করা হয়েছে আমার বাবা, ভাই, ভগ্নিপতি, ভাগ্নে, ভাগ্নি, ঠাকুরমা, মাসি প্রমুখকে। তবে সৌভাগ্যবশত আমি তখন এখানে ছিলাম না। আমার মাকেও আগুনে পোড়ানোর চেষ্টা হয়। তার পরে তিনি ৬ মাস ভিএস হাসপাতালে ছিলেন। পরে মা সুস্থ হয়ে উঠেছে। মা আজও বেঁচে আছে। ইকরাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি বর্তমানে ভাটোহ এলাকায় থাকি। গুলবার্গ সোসাইটি সংলগ্ন গলিতে থাকতাম। ২০০২ সালের ২৮ফেব্রুয়ারি আমরা আমাদের রাস্তায় খেলছিলাম। আমার বয়স তখন ১২ বছর। সামনে থেকে ভিড় আসতে দেখে আমরা দৌড়াতে লাগলাম। আমার ছোট ভাই আমার সাথে ছিল। সে পালাতে গিয়ে আমার হাত ছেড়ে যায় এবং সে এহসান জাফরির বাংলোতে যায়। আমি তখন একটি বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠেছিলাম। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জনতা এখানে মানুষকে হত্যা করে, পুড়িয়ে দেয়। আমি তখন ছাদের জলের ট্যাঙ্কে লুকিয়ে ছিলাম। বাইরে গিয়ে কিছু দেখতে পারলাম না। সন্ধ্যা ৫টার দিকে নিচে নেমে দেখি, পোড়া লাশ, কারও আকৃতি চেনা যাচ্ছে না। এ সময় এহসান জাফরি সাহায্যের জন্য লোকজন ডাকলেও সাহায্য পাননি, দাঙ্গা তাকেও হত্যা করে। এই হত্যাযজ্ঞে আমার দুই বোন ও দুই ভাই শহীদ হন। এহসান জাফরির বাড়িতে শহীদ হন। আমরা বিচার চাই, কিন্তু বিচার পাচ্ছি না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct