নিজস্ব প্রতিবেদক, বহরমপুর, আপনজন: একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে রবিবার মুর্শিদাবাদের বহরমপুর শহরে “মুর্শিদাবাদ জেলা সাংবাদিক সংঘ” সভাগৃহে একটি বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল ‘বাংলা পক্ষ’ মুর্শিদাবাদ জেলার শাখার পক্ষ থেকে। আলোচনার শিরোনাম ছিল “বাঙালি জাতিসত্তা পূর্ণতা পাক : বাংলা ভাষা হয়ে উঠুক কাজের ভাষা”। দেশে বাঙালির অধিকার আদায়ের পক্ষে সোচ্চার সংগঠন ‘বাংলা পক্ষ’ বাংলা ভাষা সংস্কৃতি বাঙালির জীবন জীবিকা চাকরি বাণিজ্য সহ সকল ক্ষেত্রে দল মত ধর্ম সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে শুধুমাত্র ‘বাঙালি’ এই আত্মপরিচয়কে সামনে রেখে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ব্যাপৃত রয়েছে বিগত পাঁচ বছর ধরে। তারা বহরমপুর সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বাংলা ভাষা সচেতন নাগরিকদের নিয়ে এই আলোচনা সভা সম্পন্ন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও ইতিহাসবিদ খাজিম আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক, প্রাবন্ধিক, গবেষক অরূপ চন্দ্র। এছাড়া বক্তাদের তালিকায় ছিলেন প্রাবন্ধিক চন্দ্রপ্রকাশ সরকার, সাংবাদিক অনল আবেদিন, অধ্যাপক ড. মধু মিত্র, গল্পকার সাইদুর রহমান, কুনাল কান্তি দে, বিশিষ্ট সমাজ সংগঠক বিদেশ মন্ডল প্রমুখ। সভায় প্রত্যেক বক্তা বাঙালি জাতিসত্তা, বাঙালির সামনের বিপদ, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপরে বিভিন্ন আঘাত, বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ সৃষ্টির বিরুদ্ধে সরব হন। আলোচনা বিকেল সাড়ে চারটেয় শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। তীব্র স্বরে প্রশ্ন তোলেন, আমরা নিজেরা কি চাইছি? আমরা নিজেরা কতটা সচেতন? তিনি বলেন, আমরা নিজেরা কেন উদ্যোগী হয়ে সর্বত্র বাংলা ভাষার কাজের ভাষায় উত্তরণের বিষয়ে মুখ খুলছি না! তিনি জানান বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পোর্টালে ভারতের বিভিন্ন ভাষা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষা নেই। এমনকি চাইলেও অধ্যাপকবৃন্দ বহুক্ষেত্রেই নিজের ভাষায় বক্তৃতা তৈরি করে সেই পোর্টালে দিতে পারছেন না। দিতে হচ্ছে ইংরেজিতে। বাংলা ভাষা কি কাজের ভাষা হিসেবে তুলে ধরার প্রয়োজনে আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা তার বক্তব্যে পরিষ্কার হয়।
সভাপতির ভাষণে প্রাবন্ধিক খাজিম আহমেদ তুলে ধরেন বাঙালি জাতিসত্তা, ভাষাকে কাজের ভাষায় পরিণত করার বিভিন্ন উপায়। বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে নিজেদের পিছিয়ে না রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজার উপায়ও তিনি আলোচনা করেন। প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা এবং রয়েল পেট্রোনাইজেশন এর কথা তিনি তুলে ধরেন। এক কথায়, প্রত্যেক বক্তা সমস্ত বিভিন্নতা ও ভেদাভেদ ভুলে বাঙালি আত্মপরিচয়কে সামনে রেখে বাংলা ভাষাকে কাজের ভাষা করে তোলা ও বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ বিষয়ে সম্মত হন। প্রবীণ সংবাদিক অনল আবেদিন তীক্ষ্ণ প্রশ্ন ছুড়ে দেন আমরা এখনো হিন্দু-মুসলমান বিভেদ থেকে বেরুতে পারিনি কেন? কেন এখনো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা বাঙালি আত্মপরিচয়কে সামনে রেখে নিজেদের ভেদাভেদ দূর করে সঙ্ঘবদ্ধ হতে পারছি না? সভা সঞ্চালনা করেন বাংলা পক্ষ মুর্শিদাবাদ জেলার সম্পাদক অরিন্দম চন্দ্র।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct