এক নীরব বোঝাপড়া
শংকর সাহা
প্রায় দীর্ঘ পাঁচ বছর। চেনা গ্রামটিকে অনেকটাই আজ অচেনা লাগে শুভ্রনীলের। বি.টেক পাশ করে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আজ সে বাড়ি ফিরছে। এর মাঝে কত মুখ,চেনা পৃথিবী অচেনা লাগে তার। এই গ্রাম । এখানেই তার বেড়ে ওঠা,তার যৌবনের হাতছানি। ক্লাস টুয়েলভ পাশ করে জামশেদপুরে বি.টেক পড়তে চলে আসে সে।মাত্র তিন দিনের জন্যে আজ তার গ্রামে আসা। বাবা-মার একমাত্র সন্তান শুভ্র।সব কেমন যেন পাল্টে গেছে।মনে পড়ে তার সেই স্কুলের মাঠ। এইখানে কত আড্ডা দিয়েছে একসময় সে। পাশে নীলেশদার ফুচকার দোকান। এখানেই তো দ্বীপ, রাজা আর পৌলমী সবার সাথে টিউশন থেকে ফেরার পথে ফুচকা খেত। সময়ের অন্তরালে আজ সব কিছু যেন হারিয়ে গেছে। সন্ধ্যে বেলায় মাকে বলে শুভ্র একটু বাইরে বেরিয়ে পড়ে। গ্রামটিকে সে ফিরে ফিরে দেখে। সন্ধ্যে বেলায় স্কুলপাড়ায় গেল।কিছুটা পথ গেলেও চেনা কারোও সাথে তার দেখা হলনা। হঠাত পেছন থেকে কে যেন বলে, শুভ্র না? পেছন ফিরতেই সে দেখে সামনে দাঁড়িয়ে পৌলমী। হাতে বাজারের ব্যাগ। দেখে কিছুটা বিধ্বস্ত লাগে তাকে। কিছু একটি বলতে শুভ্র থেমে যায়। “ ভালো আছো শুভ্র”-।“হ্যাঁ! কিন্তু পৌলমী এসব কি দেখছি তোমার ? “শুভ্রের কথা থামিয়ে পৌলমী হেসে বলে-“ সবটাই আমার ভাগ্য শুভ্র!” পরে সব জানতে পারবে। কিছুদিন আছো তো গ্রামে”।...” না, কাল ভোরে ফিরছি কলকাতায়। পরশু জামশেদপুর। “ গলির পথে তারা হাঁটছে এমন সময় শুভ্রের নজরে আসে পৌলমীর পরণের শাড়িটি ছেঁড়া, তার সুশ্রী মুখে যেন ক্লান্তিকর এক ছাপ। পৌলমীর হাতের সাথে কয়েকবার শুভ্রের হাতের স্পর্শ লাগে। ঠিক কিছু একটি বলতে গিয়ে শুভ্র থেমে যায়। বাড়িতে ফিরে রাতে শুভ্র কারো সাথে তেমন কথা বলেনা। মা পাশে এসে বসে বলে, ‘হ্যাঁরে শুভ্র !আর কটা দিন থাকলে হতনা। সেই যে যাস। আর তো তেমন আসিস না। তোর বাবার শরীরটাও বিশেষ ভালো যাচ্ছেনা। কী জানি কী চিন্তা তোর?‘রাতের খাবার টেবিলে বসে মার কাছে জানতে চায় পৌলমীর কথা। পৌলমীর অবস্থা কেন এমন হলো! মা কিছুটা বলতে গিয়ে অ্রপ্রস্তুত বোধ করে। মার মুখের কথাবুঝতে পারে শুভ্র।রাতের খাবারের পরে একটি চেক সাথে একটি চিঠি মার হাতে দিয়ে বলে, কাল যেন সে বেড়িয়ে যাবার পর চেকটি আর সাথে চিঠিটি পৌলমীর তুলেদেয়?পরের দিন ভোর চারটে। বাবা-মাকে প্রণাম করে স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সে। স্টেশনে পৌঁছতেই দেখে সেখানে পৌলমী দাঁড়িয়ে,হাতে একটি টিফিন পাত্র। “ এতো ভোরে তুমি!” হ্যাঁ, তোমার জন্যে কাল রাতে কিছু নারকেলের নাড়ু বানিয়েছিলাম। তুমি কাল বলেছিলো ভোরে তোমার ট্রেন তাই দিতে এসেছি।..শুভ্র কিছুটা বাকহীন হয়ে পড়ে। “ ভালো থেকো পৌলমী’ এই বলে ট্রেনে উঠে পড়ে সে। ট্রেন স্টেশন ছাড়ল। শুভ্র একভাবে তাকিয়ে থাকে পৌলমীর দিকে।যেন উভয়ের মাঝখানে এক নীরব বোঝাপড়া হয়ে গেল..
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct