আপনজন ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচন এখনও এক বছরেরও বেশি সময় বাকি, তবে রাজনৈতিক দলগুলি ইতিমধ্যেই লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। শনিবার পাটনায় ১১তম পার্টি কনফারেন্সের অংশ হিসাবে সিপিআই (এমএল)-এর ডাকা কনভেনশনে প্রাধান্য পেল বিরোধী ঐক্য। বিজেপিকে পরাজিত করতে এবং ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে এল। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সালমান খুরশিদের উপস্থিতিতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে এই বিষয়ে শীঘ্রই উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানালেন এদিনের সম্মেলনে। জেডি(ইউ)-এর জাতীয় সভাপতি রাজীব রঞ্জন ওরফে লালন সিং এবং সিপিআই-এমএল পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সেই সঙ্গে বিজেপি থেকে মুক্তি পেতে বিরোধী ঐক্যের বিষয়ে নীতিশ কুমারের মতামতকে সমর্থন করেছিলেন। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) নেতা ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন রাঁচিতে রাজ্যপালের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারায় কনভেনশনে তাঁর বার্তা পাঠান।
সিপিআই (এমএল)-এর ‘সংবিধান বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও, ভারত বাঁচাও’ কনভেনশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হাত জোড় করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বলেন,আমি বিরোধী দলগুলির ঐক্যের জন্য চেষ্টা করছি, বিজেপিকে মোকাবেলা করার এবং তাদের পরাজিত করার এটাই একমাত্র বিকল্প। যদি বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয় ও ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে, আমি নিশ্চিত যে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১০০ টি আসনে নেমে আসবে। একমাত্র ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দলই বিজেপিকে থামাতে পারে। বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে দেরি না করে কংগ্রেসকে এগিয়ে আসতে হবে।, আমরা কংগ্রেসের এই পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছি। জেডি-ইউ-এর ডি ফ্যাক্টো প্রধান হিসাবে বিবেচিত কুমার বলেন, কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর বিরোধী ঐক্যের জন্য উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বেশ কয়েকটি বিরোধী দল বিজেপিকে পরাজিত করতে ঐক্যবদ্ধ হতে প্রস্তুত। আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছুই চাই না। আমি দেশের স্বার্থে বিরোধী ঐক্য চাই। এখন কংগ্রেসকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং উদ্যোগ নিতে হবে। আরজেডি-র কার্যনির্বাহী প্রধান তেজস্বী যাদব বলেন, ২০২৪-এ বিজেপিকে পরাজিত করতে হলে বিরোধী ঐক্য আবশ্যক। আর বিজেপির কাছে নতুন কিছু করার নেই, তারা ধর্মের নামে মানুষকে বিভক্ত করার পুরানো খেলা খেলছে। বিজেপি মন্দির, মসজিদ ও গরু নিয়ে কথা বলছে। কংগ্রেস বিরোধী ঐক্য চায় বলে দৃৃঢ়ভাবে জানান কংগ্রেস নেত সলমান খুরশিদ। সাম্প্রতিক দিনগুলিতে, বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা সংসদের সমস্ত সদস্যদের বলেছিলেন, “যদি ধর্ম এবং সনাতন নিয়ে বাকবিতণ্ডার দরকার না থাকে তবে তা করবেন না।” সেখানে বিরোধী দলগুলিও লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। সিপিআই-এমএল জাতীয় সম্মেলনে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার কংগ্রেস সহ সমস্ত বিরোধী দলকে লোকসভা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার পরামর্শ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি একসাথে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করি তবে আমরা বিজেপিকে ১০০ আসনের নীচে নিয়ে যেতে পারি। নইলে কি হবে, আপনারা আগে থেকেই জানেন।
সিপিআইএমএল সাধারণ সম্মেলনের মঞ্চে ভাষণ দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ তার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সুযোগ বুঝে মুখ্যমন্ত্রী কথা রাখেন। মহাজোট নেতাদের উপস্থিতিতে, নীতীশ কুমার স্পষ্ট করেন, তিনি বিরোধীদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে তিনি বারবার বলতে থাকেন, আমাদের এমন কোনো ইচ্ছা নেই। যদিও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিরোধীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও ঐক্যমত্য হয়নি। বিহারের সমস্ত মহাজোট দলগুলি ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হলেও নীতিশ কুমার না রাহুল গান্ধী প্রার্থী হবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব সহ কয়েকটি দলকে অ-বিজেপি, অ-কংগ্রেস জোটের উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে। নীতীশ বলেছেন, কংগ্রেসের বিরোধী জোটে দেরি করা উচিত নয় কারণ আমরা সবাই অপেক্ষা করছি। বিজেপির সাথে বিচ্ছেদের পরে, তিনি গত বছর দিল্লি গিয়েছিলেন এবং উভয়ের (রাহুল এবং সোনিয়া) সাথে দেখা করেছিলেন। কংগ্রেস নেতা সালমান খুরশিদ কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে আবেদন করেন, সমস্ত বিরোধী দল এক হলে বিজেপি-১০০-এর নিচে নেমে যাবে। অন্য সব দলের ডাক আসছে। অন্যদের সাথে একটি মিটিং করুন যাতে সবাই বসতে পারে। আমরা কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি কারণ অন্যান্য অনেক দল ঐক্যবদ্ধ হতে প্রস্তুত। বিহারেরউপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব কংগ্রেস পার্টিকে সমস্ত আঞ্চলিক দলকে একক প্ল্যাটফর্মে আনতে আবেদন করেছেন, যাতে আসন্ন নির্বাচনে বিজেপিকে পরাজিত করা যায়। নীতিশ কুমার এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা সালমান খুরশিদ, বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতন রাম মাঝি এবং সিপিআই-এমএল জাতীয় সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct