আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বুধবার অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট পেশ করেছেন তাতে রাজ্যের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫১১৬.৯৯ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে বাজেট বক্তৃতায় সংখ্যালঘু চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ঘোষণা করেছিলেন ৫০০৪.০৫ কোটি টাকা। কিন্তু পরে রিভাইসড বাজেটে তা প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। বুধবার ২০২৩-২৪ অর্থ বর্ষের বাজেটে ‘২০২৩-২৪ সালের বরাদ্দের জন্য দাবিসমূহের অন্তর্গত দপ্তরওয়ারী পরিকল্পের বিস্তারিত বিবরণ’ শীর্ষক বাজেট বরাদ্দে পুস্তিকায় সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে প্রকৃতপক্ষে ব্যয় করা হয়েছে ২৫৭২.৮৯ কোটি টাকা। আরও বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ বর্ষে সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৫০০৪.০৫ কোটি টাকা। তবে পরে রিভাইসড বা পরিমার্জিত বাজেটে তা প্রায় অর্ধেক কমিয়ে করা হয় ২৮৬৩.৭৬ কোটি টাকা। যদিও ২০২৩-২৪ অর্থ বর্ষের বাজেটে সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫১৬৬.৯৯ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২২-২৩ বর্ষের মতো কমানো হবে কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি। ২০২৩-২৪ অর্থ বর্ষের বাজেটে সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের বিস্তারিত তথ্য পুস্তিকা অনুযায়ী জানা যাচ্ছে প্রশাসনিক ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে ৯৩৪ কোটি ৩২লক্ষ ০৯ হাজার টাকা। রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে সংখ্যালঘু খাতে ৪০৬২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। আর কেন্দ্রীয় সহায়তায় রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পে সংখ্যালঘু খাতে ১৭০ কোটি টাকা।
প্রশাসনিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে যে বিবরণ বাজেট পুস্তিকায় দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৫০ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা, আন এডেড মাদ্রাসার সহায়তার জন্য ৭০০ কোটি ৫৭ লক্ষ ৮ হাজার টাকা, পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের জন্য ৫ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা, পশ্চিমবঙ্গ পাহাড়িয়া মাইনোরিটি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের জন্য ১৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের জন্য ৬ কোটি ৮৫ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা, রাজ্য হজ কমিটির জন্য ২ কোটি ৬৪ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা, ওয়াকফ বোর্ডের জন্য ১৪৬ কোটি ৪৭ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা প্রভৃতি। রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে মাদ্রাসা ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হস্টেলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০ কোটি টাকা, মাদ্রাসায় ছাত্রীদের উৎসাহ ভাতা ২০ কোটি টাকা, উর্দু ভাষার প্রসারে ১৮ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের ট্যালেন্ট সাপোর্ট প্রকল্পে ১২০১ কোটি টাকা, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও কল্যাণ প্রকল্পে ১৫০ কোটি টাকা, সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের সাইকেল বিলির জন্য ২২০ কোটি টাকা, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও কল্যাণে ৬৫০ কোটি টাকা, সংখ্যালঘু উন্নয়নে নির্মাণ কাজে ২৩০ কোটি টাকা, মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রের জন্য ১০৫ কোটি টাকা, কারমাইকেল হস্টেল সংস্কার ও বর্ধিতকরণের জন্য ৬০ লক্ষ টাকা, পরিত্যক্ত সংখ্যালঘু মহিলাদের আবাসন প্রকল্পে ৩২০ কোটি টাকা, আন এডেড মাদ্রাসায় বিজ্ঞান সামগ্রীর জন্য ১০০ কোটি টাকা, ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নয়নে ২০ কোটি টাকা, নতুন সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য ২০ কোটি টাকা, দ্বিতীয় হজ হাউজের নির্মাণ কাজের জন্য ২১ কোটি টাকা, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ১৩২ কোটি টাকা প্রভৃতি। তবে, ২০২৩-২৪ শিক্ষা বর্ষে মুসলিমদের কবরস্থানের প্রাচীর নির্মাণের জন্য কোনও বরাদ্দে করা হয়নি। যদিও ২০২২-২৩ বর্ষে রিভাইসড বাজেটে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। বাজেট বক্তৃতায় চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়নে ২০২২-২৩ বর্ষে কি কি করা হয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্যে ২০১৯-২০ সালে “এক্যশ্রী” মেধাবৃত্তি প্রকল্প চালু হয়েছে। ২০২২-২৩ সালে এই প্রকল্পাধীনে ৪৫ লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়েছে তার মধ্যে থেকে এবছরে ৬৬,০০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর মেধাবৃত্তি চালু করা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের দেশে ও দেশের বাইরে পড়াশোনার জন্য শিক্ষা ঋণ দেওয়া সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এপর্যস্ত কারিগরি, প্রযুক্তি এবং কর্মোপযোগী বিভিন্ন কোর্সের ১,৫৫২ জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ২০.৭৪ কোটি টাকার শিক্ষাণ অনুমোদিত হয়েছে। স্ব-উদ্যোগমূলক ও স্বনিযুক্তিমূলক কর্মপ্রকল্পে উৎসাহ দিতে স্ব-উদ্যোক্তা ও স্বনির্ভরগোষ্টীগুলিকে বিভিন্ন মেয়াদি খণ ও ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবছর ইতিমধ্যেই ৫,২৪৬ জন সুবিধা প্রাপককে মেয়াদি ঋণ ও ৫৮,৮৩৯টি স্বনির্ভরগোষ্ঠীর সদস্যকে ক্ষুদ্র ঋণ বাবদ ১৬৮.১৫ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষার পরিকাঠামোগত উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরও অত্যাধুনিক ও সময়োপযোগী করে তুলতে পাঠ্যসূচি পুনর্মূল্যায়ণ করার কাজ শুরু হয়েছে। ৭টি নতুন পাঠ্যবই ও ৮৪টি সংশোধিত পাঠ্যবই পশ্চিমবঙ্গ মাদ্স্রা শিক্ষা পর্ষদ প্রকাশ করেছে। মাদ্রাসা শিক্ষকদের জন্য টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেসের সহযোগিতায় ৬ সপ্তাহের একটি কনস্ট্রাকটিভ লার্নিং/ টিচিং উইথ টেকনোলজির উপর সার্টিফিকেট কোর্স অন-লাইনে চালু করা হয়েছে প্রায় ৩০০ জন মাদ্রাসা শিক্ষক ইতিমধ্যেই এই কোর্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। মালদা জেলার ৪০টি মাদ্রাসায় ইউনিসেফ এবং বিক্রমশীলা এডুকেশন রিসোর্স সোসাইটি’র যৌথ উদ্যোগে কম্প্রিহেনসিভ ডিজিটাল ট্রেনিং প্যাকেজ প্রকল্প চালু হয়েছে।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্প, ইন্টিগ্রেটেড মাইনরিটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এবং মাইহ্রান্ট ডোমেস্টিক ওয়ার্কার -এর উদ্যোগে ৩টি বৃহৎ প্রকল্প শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। এর জন্য মাল্টিসেক্টরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম অধীনে ২৯৫.৪৭ কোটি টাকা চলতি অর্থবর্ষে ব্যয়িত হয়েছে। ২০২২-২৩ সালে আইএমডিপি স্কিমে ১৪টি জেলার ৩২টি ব্লকের পরিকাঠামো রূপায়ণে ৩০.৩০ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে এবং একইরকমভাবে রাজ্যের ২৩টি জেলার বিভিন্ন ব্লকে কর্মসূচি রূপায়ণে এমডিডব্লু স্কিমে ৯০.৭৮ কোটি টাকার বেশি প্রদান করা হয়েছে। সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের আরও উন্নতমানের শিক্ষা পরিষেবা দিতে স্কুল ও কলেজে ৬০৪টি হোস্টেল তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪২৪টির কাজ ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গেছে।সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে ৩০৫টি কর্মতীর্থ (বিপণন কেন্দ্র) তৈরি করা হচ্ছে। এখানে সংখ্যালঘু মানুষজন তাদের লোকশিল্প, কৃষি উৎপন্ন ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্বনিযুক্তি সদস্যগণ, নিজেদের উৎপন্ন দ্রব্যের বিপণনের সুবিধা অর্জন করতে পারবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইনরিটি ডেভেলপমেন্ট আ্যান্ড ফিনান্স কর্পোরেশন , ডাইরেক্টুরেট অফ মাদ্রাসা এডুকেশন, ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট হজ কমিটি, ওয়েস্ট বেঙ্গল উর্দু আকাডেমি র যৌথ প্রচেষ্টায় এই বিভাগ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে সংখ্যালঘু হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং কাউন্সেলিংসহ কেরিয়ার গাইড নিয়ে পরামর্শদান ইত্যাদি ব্যবস্থা করে থাকে। সংখ্যালঘু বিভাগের অধীনে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় । এখানে ২৩টি বিভিন্ন বিভাগে ৪৯টি বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয় পড়ানো হচ্ছে। এবছর ১২২ জন ছাত্র-ছাত্রী নেট, সেট, গেট ইত্যাদি বিভিন্ন পরীক্ষায় সাফলোর সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। এইবছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০জন মেধাবী ছাত্র পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছে। ক্যাম্পাস প্লেসমেন্টের মাধ্যমে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১১ জন গ্রাজুয়েট ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকুরির সন্ধান পেয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct