জিয়াউল হক, চুঁচুড়া, আপনজন: দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নির্মাণ কার্য সম্পন্ন হয় হুগলি-ইমামবাড়ার। দানবীর হাজি মহম্মদ মহসিনের রেখে যাওয়া অর্থেই ১৮৬১ সালে গড়ে ওঠে এই স্থাপত্য। গঙ্গার দিকে ইমামবাড়ার দেওয়ালে পার্সি ও ইংরেজি হরফে লেখা ‘উইল’-এ সে কথা বর্ণিত রয়েছে। কিন্তু বয়সের ভারে খোদাই করা সেই ‘হরফ’ চাঙড়ের সাথে খসে পড়ছে। এ বার সেই হরফ উদ্ধারে নেমেছে ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ। মাস চারেক ধরে চলছে কাজ। বছর তিরিশের স্থানীয় যুবক শেখ সামসেরের হাতেই পার্সি ও ইংরেজি অক্ষরগুলি পুনরুদ্ধার করে হচ্ছে। নিয়ম মেনে হেরিটেজ স্বীকৃতি প্রাপ্ত এই স্থাপত্যের পুরনো শৈলী বজায় রাখতে নির্মাণ সামগ্রীও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। চুন, বালি আর চিটেগুড়ের সংমিশ্রণে উদ্ধার হচ্ছে ১৭০ বছরের পুরনো হরফ। ২৪ টিন বালির সাথে ২৪ কেজি চিটেগুড় এবং ৮ টিন চুন অল্প জল সহ মিশিয়ে একটি চৌবাচ্চার ভিতর রেখে দেওয়া হয়। দিন পঁচিশেক পর পচে যাওয়া সেই মিশ্রণ দিয়েই হারিয়ে যাওয়া হরফগুলি সামসেরের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় পুনর্জীবিত হচ্ছে। সামসেরের কথায়, “বছর কয়েক আগে মুর্শিদাবাদ থেকে ইমামবাড়ায় পুননির্মাণের কাজে এসেছিলেন তাঁর জামাইবাবু গয়েশ মল্লিক। সে সময় জামাইবাবুর সহযোগী হিসেবে থেকে চুন, বালি ও চিটেগুড় দিয়ে কলকা তৈরির কাজটি রপ্ত করে ফেলেছিলাম। তাই এই কাজটি আমি করতে পারছি।” তিনি বলেন, “অত্যন্ত সুক্ষ্ম কাজ। ইংরেজি হরফ চিনলেও, পার্সি অক্ষর আমি চিনি না। তাই মশলার মিশ্রণ দেওয়ালে আটকে তার উপর কর্তৃপক্ষের দেওয়া নকশা দেখে আমি ‘পার্সি হরফ’-গুলি খোদাই করে দিচ্ছি। গোটা উইলের কাজ শেষ হতে এখনও কয়েক মাস লাগবে।” ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, খোদাইকৃত উইল উদ্ধারের উদ্যোগ অনেকদিন আগেই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খসে পড়া পার্সি অক্ষরগুলি বুঝতে না পারায় সমস্যা হচ্ছিল। তাই এক ইরানির সহযোগিতা নেওয়া হয়েছিল। উইল পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হওয়ায় খুশি চুঁচুড়াবাসী। ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, শুধু উইল নয়। ওটা একটা শিল্পকলাও বটে, একটা নিদর্শন। ঐতিহাসিক ইমামবাড়ায় যা খোদাই রয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct