সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: কারও সাহায্য ছাড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা প্রকল্প বাংলার কৃষকদের দেশের আর পাঁচটা রাজ্যের থেকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে। সেই প্রকল্পের নাম ‘কৃষকবন্ধু’। সরকারি তথ্য বলছে গত ৫ বছরে বাংলার প্রায় ১ কোটি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্টে ঢুকেছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ টাকার মধ্যে ১ পয়াসাও কেন্দ্রের দেওয়া সাহায্য নয়। নিজস্ব তহবিলের জোরেই বাংলার কৃষকদের হাতে এই আর্থিক সহায়তা রাজ্য সরকারের তরফে পৌঁছে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের তথ্য বলছে, এর মধ্যে শুধু চলতি অর্থবর্ষেই রাজ্যের কৃষকবন্ধুরা পেয়েছেন প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। রবি মরশুমে ৯১ লক্ষের বেশি কৃষককে ২,৫৫৫ কোটি টাকা দেওয়ার পদক্ষেপ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৯০ লক্ষ কৃষকের অ্যাকাউন্টে সেই টাকা ঢুকেও গিয়েছে। যা পরিস্থিতি মার্চ পর্যন্ত সাহায্য প্রাপক কৃষকের সংখ্যা ৯২ লক্ষে গিয়ে পৌঁছবে। এখানেই নরেন্দ্র মোদির পিএম কিষাণ যোজনাকে টেক্কা দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষকবন্ধু। কারণ, পিএম কিষাণ প্রকল্পের সুবিধা পায় এ রাজ্যের মাত্র ৪৩ লক্ষ কৃষক। যা ‘কৃষকবন্ধু’র অর্ধেকেরও কম। মাথাপিছু টাকার অঙ্কও অনেক কম, মাত্র ৬ হাজার টাকা। নবান্ন সূত্রের খবর, প্রথমে পিএম কিষাণে এ রাজ্যের ৪৬.৭ লক্ষ কৃষক অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। পরে তা কমে প্রথমে ৪৪.৫ লক্ষ, শেষে ৪৩ লক্ষ হয়।
২০১১ সালে পরিবর্তনের পরে এই ১২ বছরে ধাপে ধাপে বাংলার কৃষকদের আয় বেড়েছে আগের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। যা নজিরবিহীন তো বটেই, সারা দেশের সামনে উন্নয়নের জ্বলন্ত দৃষ্টান্তও। অস্বীকার করার উপায় নেই এর পিছনে ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্প বড় ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সূচনা ঘটান মুখ্যমন্ত্রী। তারপর ২০১৮-১৯ সালে ৩৮.৮১ লক্ষ কৃষক পান ৬০১.৪৯ কোটি টাকার সাহায্য। ২০১৯-২০ সালে ৪৪.২৬ লক্ষ কৃষক পান ১৩৫৩.৮৬ কোটি টাকা। ২০২০-২১ সালে ৫৯.০৩ লক্ষ কৃষক পান ১৫৬৫.৯৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে ৭৭.৮৯ লক্ষ কৃষককে দেওয়া হয় ৪০৪০.১৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষে ৯২ লক্ষ কৃষকের অ্যাকাউন্টে ঢুকে গিয়েছে বা ঢুকতে চলেছে আরও ৪৯৫০.২৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে শুধু রবি মরশুমে ঢুকেছে ২,৫৫৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ৫টি অর্থবর্ষে প্রায় ১৫ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন বা পাচ্ছেন বাংলার প্রায় ১ কোটি কৃষক।মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার কৃষকদের শুধু সাধারণ আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে তাই নয়, কৃষকের মৃত্যুজনিত সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে তাঁর পরিবারকে। ১৮-৬০ বছর বয়সী কৃষকের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে এককালীন ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত মোট ৭১,৮০৫টি কৃষক পরিবার এই কারণেই ১৪৩৬ কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন। বাংলা শস্য বিমা যোজনার প্রিমিয়ামের পুরো টাকাও দিচ্ছে নবান্ন। কৃষিজমিতে খাজনা ও মিউটেশন ফি মকুব করা হয়েছে। এই সবই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct