আপনজন ডেস্ক: বিভিন্ন স্টেডিয়াম আর পার্কিং এরিয়ায় শত শত মৃতদেহ। কম্বলে ঢাকা লাশ। তার ভিতর দিয়ে শোকার্ত স্বজনরা খুঁজে ফিরছেন প্রিয়জনকে। সতর্কতার সঙ্গে মৃতদেহের মুখ থেকে কম্বল সরাচ্ছেন। চেষ্টা করছেন চিনতে। শনাক্ত করতে পারলে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। তাদেরকে শান্তনা দেয়ার কেউ নেই। সবারই এক অবস্থা। এ খবর দিয়ে অনলাইন আল জাজিরা বলছে- পরিবারের কেউ না কেউ মারা গেছেন প্রলয় ঘটানো ভূমিকম্পে। এসব লাশের মুখের কাপড় সরানোতেও হাত কাঁপছে অনেকের। কারণ, অনেক মৃতদেহের মুখ থেঁতলে গেছে। বিকৃত আকার ধারণ করেছে। দুর্বল হৃদপিণ্ডের কেউ তা দেখলে বড় আঘাত পেতে পারেন। সিরিয়ার নাদা নামের এক নারী এবং তার তুর্কি স্বামী একজন স্টাফের কাছে জানতে চাইছিলেন, তাদের এক ভাতিজি ও আন্টিকে খুঁজে পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় কি। তুরস্কের দক্ষিণের আন্তাকিয়া শহরের কাছে হাতায় রিসার্স হাসপাতালের পার্কিংয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে কমপক্ষে ১০০ মৃতদেহ। নাদা ও তার স্বামীর প্রশ্নের জবাবে স্টাফদের একজন বললেন- আপনাদেরকে একজন একজন করে চেক করতে হবে। নাদার স্বামী নিজের নাম প্রকাশ করতে চান না। তিনি একটি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, আমার স্ত্রী তুর্কি ভাষায় কথা বলতে পারে না। আমি ঠিকমতো দেখতে পাই না। আমাদেরকে প্রতিটি মৃতদেহের মুখ চেক করতে হবে। আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন।
ভূমিকম্পে যেসব মানুষ মারা গিয়েছেন তাদের অনেকের মৃতদেহ বডিব্যাগে, কম্বলে অথবা তারপুলিনে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। আত্মীয়স্বজন গিয়ে তাদের শনাক্ত করবেন এ জন্য হাসপাতালের পাশে এসব মৃতদেহ রাখা হয়েছে। ২০১৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছে ওই হাসপাতাল। এতে আছে ১১৩০ বেডের ধারণ ক্ষমতা। এর বাইরে তাঁবু টাঙিয়ে বা ফুটপাথে শুইয়ে রাখা হয়েছে এসব দেহ। কিছু মৃতদেহ শনাক্ত করে তাতে ট্যাগ লাগানো হয়েছে। কিছু শনাক্ত হয়নি। যারা প্রিয়জনকে শনাক্ত করতে পেরেছেন, তাদেরকে ইস্যু করা হয়েছে মৃত্যু সনদ। সাইট প্রসিকিউটর থেকে তারা দাফনের অনুমোদন পাচ্ছেন। এরপর মৃতদেহ নিজেদের গাড়িতে করে সরিয়ে নিচ্ছেন। একজন নারী তার বোনকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তিনি চিৎকার করে বলছিলেন- হে আল্লাহ, দেখ আমরা কত অসহায়। আমাদের প্রিয়জনদের মৃতদেহ খুঁজে পেলে কৃতজ্ঞ থাকবো। ওদিকে আল জাজিরার সাংবাদিক সুহাইব আল খালাফ বলছেন, বিরোধীনিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সালকিন এলাকায় একটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালের মর্গে আর লাশ রাখার কোনো স্থান ফাঁকা নেই। ফলে তারা বাধ্য হয়ে মৃতদেহ হাসপাতালের বাইরে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। এতে সেখানে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উদ্বিগ্ন মানুষের বিস্ফারিত চোখ। ভয়ে, আতঙ্কে, প্রিয়জনের শোকে শুকিয়ে গেছেন তারা। তবু অপেক্ষা করছেন প্রিয়জনের মৃতদেহের জন্য। তা নিয়ে তারা নিজের হাতে দাফন করতে চান। হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ সরিয়ে নিতে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে সাধারণ যানবাহন। কারণ, সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক এম্বুলেন্স নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct