আপনজন ডেস্ক: মঙ্গলবার লোকসভায় আদানি-হিন্ডেনবার্গ ইস্যুতে কেন্দ্রকে আক্রমণে নেতৃত্ব দিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি। মূলত মোদি জমানায় গৌতম আদানির বিপুল সাম্রাজ্য বৃদ্ধি নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। লোকসভায় রাহুল গান্ধি জানতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতায় আসার পর, অর্থাৎ ২০১৪ সালের পর কোন ‘জাদু’ বলে গৌতম আদানি ব্যবসা বৃৃদ্ধির ফলে ৬০৯ তম থেকে বিশ্ব ধনীদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে চলে গেলেন। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে আদানির নিট সম্পদ কীভাবে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ১৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, তাও জানতে চান রাহুল। কংগ্রেস নেতার এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু তাকে ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ না করতে ও তার দাবির প্রমাণ পেশ করতে বলেন।যদিও তাতে কর্ণপাত না করে বক্তব্য চালিয়ে যান রাহুল। তিনি বলেন, দেষবাসীর জানা উচিত, কোটিপতি ব্যবসায়ী গৌতম আদানির পিছনে কী শক্তি রয়েছে, যার ভাগ্য মার্কিন ভিত্তিক শর্ট-সেলিং ফার্ম হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি প্রতিবেদনের পরে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সংসদে আদানিজিকে নিয়ে আলোচনা এড়ানোর জন্য মোদীজি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন বলেও দাবি করে বলেন, এর একটি কারণ আছে ও আপনারা তা জানেন। রাহুল চান আদানি ইস্যুতে আলোচনা হোক এবং সত্য বেরিয়ে আসুক। রাহুলের মতে, যে লক্ষ লক্ষ কোটি দুর্নীতি হয়েছে, তা বেরিয়ে আসা উচিত। দেশের জানা উচিত আদানির পিছনে কী শক্তি রয়েছে। রাহুল আরও বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে আমি সরকার এবং ‘হাম দো, আমাদের দো’ নিয়ে কথা বলছি। সরকার চায় না ও আদানিজিকে নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে ভয় পায়। সরকারের উচিত সংসদে আলোচনার অনুমতি দেওয়া ও তা এড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
স্পিকার ওম বিড়লা কংগ্রেস নেতার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুটি ছবি প্রদর্শনের বিরোধিতা করেন। ওই দুটি ছবির একটিতে প্রধানমন্ত্রীকে একটি বিমানের ভিতরে আদানির সাথে দেখা যায় এবং অন্যটিতে তিনি একটি বিমান থেকে নামছেন যার উপর আদানি লোগো রয়েছে। প্রথম বিরোধী স্পিকার হিসাবে লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের বিতর্কে অংশ নিয়ে রাহুল গান্ধি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আদানিকে বিদেশি চুক্তি অর্জনে সহায়তা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে বিদ্ধ করে রাহুল প্রশ্ন তোলেন, আদানির সঙ্গে তিনি কতবার বিদেশ সফরে গিয়েছেন। আদানিজি পরে কতবার আপনার সাথে সফরে এসেছিলেন? আদানিজি কতবার একটি দেশ ভ্রমণ করেছেন? আদানিজি বিদেশে যাওয়ার পর কতবার চুক্তি করেছেন? গত ২০ বছরে ইলেকটোরাল বন্ডসহ বিজেপিকে কত টাকা দিয়েছে আদানি তাও জানতে চান রাহুল। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (এইচএএল) সামর্থ্যকে উপেক্ষা করে রাফাল চুক্তি নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জন্য মোদীকে আক্রমণ করেন রাহুল গান্ধি। তিনি বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী এইচএএল-এ বলেছেন যে আমরা ভুল অভিযোগ করেছি। কিন্তু বাস্তবে এইচএএল-এর ১২৬টি বিমানের চুক্তি অনিল আম্বানির হাতে চলে যায়, যিনি পরে দেউলিয়া হয়ে যান। সদ্য ৪০০০ কিলোমিটারেরও বেশি ভারত জোড়ো যাত্রা শেষ করা রাহুল গান্ধি বলেন, মানুষ তাকে জিজ্ঞেস করেছিল কীভাবে আদানি এত ব্যবসা করলেন ও সফল হলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের প্রকৃতি কী। তাই তামিলনাড়ু, কেরল থেকে হিমাচল প্রদেশ পর্যন্ত আমরা সর্বত্র ‘আদানি’ নামে একটি নাম শুনেছি। সারা দেশে শুধু ‘আদানি’, ‘আদানি’, ‘আদানি’। ২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে আদানির নিট সম্পদ কীভাবে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ১৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, তা ও জানতে চেয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আদানি-মোদী সম্পর্ক শুরু হয়েছিল বহু বছর আগে, যখন নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। যখন ভারতের অধিকাংশ মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করছিল, প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি) বিরুদ্ধে ছিল, তখন একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুগত ছিলেন এবং মোদিকে পুনরুত্থিত গুজরাটের ধারণা গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct