আপনজন ডেস্ক: আদার ব্যাপারীরা আজকে দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে, চার দিন আগেই তো সরকার পড়ে যেত! কোনোরকম টিম টিম করে জ্বলছে। ত্রিপুরার মাটিতে দাঁড়িয়ে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার সভায় মঙ্গলবার বিজেপিকে এভাবে নিমানা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেস আয়োজিত নির্বাচনী সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় আগরতলার রবীন্দ্র শতবর্ষ ভবনের সামনের রাস্তায়। তার আগে তিনি আগরতলা শহর হয়ে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নেন। তার সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ত্রিপুরায় তৃণমূলের ভারপ্রাপ্ত নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও ত্রিপুরার দলীয় নেতারা। উল্লেখ্য, ৬০টি বিধানসভার আসন বিশিষ্ট ত্রিপুরায় আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে ২ মার্চ। ত্রিপুরায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এদিন সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে একদিকে যেমন কেন্দ্রে বিজেপি সরকারকে নিশানা করেন, তেমনি ত্রিপুরার প্রাক্তন সিপিএমকেও আক্রমণ করেন। মমতা বলেন, কেন্দ্র ও ত্রিপুরায় শাসন করছে বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেসই একমাত্র দল যারা বিজেপির ডাবল ইঞ্জিন সরকারকে উৎখাত করতে পারে এবং দেশের জনগণকে গেরুয়া শিবিরের বিকল্প সরবরাহ করতে পারে। ত্রিপুরায় যে গণতন্ত্র বিপন্ন সে কথাও তুৃলে ধরেন তিনি। এ িনয়ে বলেন, বিজেপির শাসনামলে ত্রিপুরায় গণতন্ত্র পিছিয়ে পড়েছে। কারণ বিরোধী দলগুলিকে রাজনৈতিক সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহের অধিকার হারিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, দু’বছর আগে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছিল, তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছিল। এদের মধ্যে কয়েকজনকে অবৈধভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে। দেশে গণতন্ত্রের অবস্থা খারাপ এবং এ ধরনের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় আমাদের নেতা-কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের নতির চরম সমালোচনা করে মমতা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং এলআইসি সম্পর্কে ত্রিপুরাবাসীকে িসতর্ক করেন। তিনি ত্রিপুরাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, যেদিন ‘এলআইসি’ টিম টিম করে নিভে যাবে, যেদিন স্টেট ব্যাঙ্ক নিভে যাবে, আপনাদের টাকাগুলো যারা এসব জায়গায় রেখেছেন, ভবিষ্যতের জন্য কেউ পেনশন পাবেন, কেউ প্রভিডেন্ট ফান্ড পাবেন, কেউ হাউজিং লোন নিয়েছেন, কেউ নানারকমভাবে টাকা জমান কষ্ট করে মায়েরা-বোনেরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো, সেই টাকাগুলো ফেরত পাবেন? নোট বাতিলের ফলে ব্ল্যাকমানি ফেরত এসেছে? ব্ল্যাকমানি পার্টিতে ঢুকে গেছে। ফেরত কিন্তু আসে নাই।’
বাম আমলের ত্রিপুরার স্মৃতিচারণা করে মমতা বলেন, ‘আমি আগে স্লোগান দিতাম ‘সিপিএম আসিয়া, ত্রিপুরা দিল ভাসাইয়া’। এখন বলি ‘বিজেপি আসিয়া ত্রিপুরা দিল ভাসাইয়া’। কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি জোট বাধিয়া ত্রিপুরা দিল ভাসাইয়া। তাই এখন আর অন্য কাউকে নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের জোড়া ফুল চিহ্নে ভোট দেবেন।’ মমতা কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এখন আমরা মহীরুহ হয়ে গেছি, তাই মনে রাখবেন, এখন আর আমাদের খেয়ে ফেলা বা পিষে ফেলা সম্ভব নয়। একাধিক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘যদি মনে করেন কাউকে গ্রেফতার করে কাউকে ‘ইডি’ করে কাউকে ‘সিবিআই’ করে ভোটে জিতবেন, ভয় দেখাবেন, তাহলে বলে রাখি, দিনটা কিন্তু আজকেই শেষ নয়, কালও আছে। আগে দেখুন ২০২৪ সালের নির্বাচনে কী হয়! অপেক্ষা করুন, দেখুন মানুষ কী করে ডাবল ইঞ্জিন (কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপি সরকার) করে, না সিঙ্গেল ইঞ্জিন করে, না মানুষের ইঞ্জিন করে। সংবিধানটাকেও তো শেষ করে দিয়েছেন প্রায়! ইতিহাসও ভুলিয়ে দিয়েছেন প্রায়। ত্রিপুরা এইটুকু জায়গা, তার মধ্যে কয়েকটা দোকান ছাড়া কিছু হয় নি। একটা ফ্লাইওভার করেছে এইটুকু! দুটি গাড়ি যায় না’ বলেও ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে কটাক্ষ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনে সমাবেশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সূচনা বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য কী করা হয়েছে তৃণমূল সরকারের সাফল্যের সেই খতিয়ান তিনি তুলে ধরেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct