আপনজন ডেস্ক: বিভাগ পরবর্তী বাংলায় সাহিত্য চর্চার মেধা ও মননের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল হুমায়ুন কবির ও আতাউর রহমান প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যময় ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকা। কয়েক দশক ধরে তার যোগ্য সম্পাদনা করেছিলেন আব্দুর রাউফ। সেই আবদুর রাউফকে কাজী আব্দুল ওদুদের যোগ্য উত্তরসূরী বলে অভিহিত করলেন বিশিষ্টট প্রাবন্ধিক ও ইতিহাসকার খাজিম আহমেদ। রবিবার কলকাতার উর্দু অ্যাকাডেমি সভাঘরে আলিয়া সংস্কৃতি সংসদ প্রয়াত ‘চতুরঙ্গ’ সম্পাদক আব্দুর রাউফ স্মরণে এক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এদিন আব্দুর রাউফ স্মরণে বিশেষ গ্রন্থ প্রকাশ ছাড়াও তাকে নিয়ে অভিভাষণের আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে খাজিম আহমেদ ‘চতুরঙ্গ’ সম্পাদক আব্দুর রাউফের কাজী অব্দুল ওদুদের যোগ্য উত্তরসূরী হয়ে ওঠার পক্ষে এক জ্ঞানগর্ভ ও বহু অনালোকিত ঘটনা তুলে দরেন। হুগলির প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর কলকাতা এসে কীভাবে আব্দুর রাউফ সবশেষে ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার হাল ধরলেন এবং তার যোগ্য সম্পাদনা চালিয়ে গেলেন েস সবই বিধৃত হয়েছে খাজিম আহমেদের বক্তব্যে। খাজিম আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় আব্দুর রাউফ তৎকালীন সময়ে বাংলার সাহিত্য ও বিদ্বজ্জন জগতের এক প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব কাজী আব্দুল ওদুদের সান্নিধ্য লাভ করেন। পার্কসার্কাসের তারক দত্তর রোডে কাজী আবদুল ওদুদের বাসভবনে আব্দুর রাউফের হাতেখড়ি হয়। ৬৪-র কলকাতার দাঙ্গায় যখন আকাশ বাতাস বিদীর্ণ তখন কাজী আব্দুল ওদুদের বাড়িতে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কমিটি তৈরি হয়। ওই কমিটিতে আব্দুর রাউফও ছিলেন। সেই সময় বুদ্ধিজীবীদের বৃত্তে তরুণ আব্দুর রাউফও শামিল হন। সেই সময় ‘সঙ্কল্প’ সহ দুটি পত্রিকা প্রকাশিত হত। সে পত্রিকার লেখা সংগ্রহ থেকে প্রুফ সংশোধন সবই কম বয়সি রাউফের ঘাড়ে এসে পড়ে। কিন্তু সেই সময় কাজী আব্দুল ওদুদ, গৌরী আইয়ুব, মৈত্রেয়ী দেবী, সৈয়দ মুজতবা আলিদের বলয় থেকে তিনি হঠাৎ ছিটকে গিয়ে একটি রাজতিক দলের পতাকাতলে তাদের আদর্শ প্রচারে নেমে পড়েন। এসইউসিআইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে তিনি তাদের পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থাকার পর মুর্শিদাবাদে প্রাণপাত করে সংগঠনের প্রচারে। এরপরই তার মোহভঙ্গ হয়ে চলেন আসেন ফের কলকাতায়। বাংলার মেধা মনন তুলে ধরতে ‘আল ইমাম’ পত্রিকা বের করে যেখানে অমুলেন্দু দেও মতো বিদগ্ধ ব্যক্তিরা লিখতেন।
খাজিম আহমেদ বলেন, তার খারাপ সময় ছিল ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ এই সময়কালে। কিন্তু গৌরকিশোর ঘোষ ও গৌরী আইয়ুব প্রমুখদের সৌজন্যে ১৯৮০ সালে চতুরঙ্গে প্রথম চাকরি করার সুযোগ পেলেন। পাঁচ বছর চতুরঙ্গ পত্রিকার লাইব্রেরিকে ব্যবহার করে তিনি হয়ে ওঠেন অব্দুর রাউফ। প্রথমে সম্পাদকীয় বিভাগে চাকরি, সহযোগী সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক ও পরে সম্পাদক পদে উত্তীর্ণ হন। আর তার পরে চতুরঙ্গ আব্দুর রাউফের হাত ধরে এক বলিষ্ঠ মাত্রা পায়। কয়েক দশক ধরে তার যোগ্য সম্পাদনা চতুরঙ্গকে বিশেষ মাত্রা এনে দেয়। তবে এর পিছনে আব্দুর রাউফের যে মননশীলতা রয়েছে তা উল্লেখ করে খাজিম আহমেদ বলেন, আতাউর রহমান চতুরঙ্গ পত্রিকার প্রডাকশন দেখতেন। কি পাতায় ছাপা হবে, কোথায় ছাপা হবে, কিভাবে নির্ভুল ছাপা হবে সবেতে তার নজর ছিল। বিশেষ করে সুন্দর উপস্থানার বিষয়ে ও কাগজের মাপের বিষয়ে তার সেই বিস্তর জ্ঞান ধীরে ধীরে আয়ত্ত করেন আব্দুর রাউফ। আর সেটাই তিনি চতুরঙ্গ-র বিকাশে কাজে লাগান। সম্পাদনার সঙ্গে সঙ্গে তার এই শিক্ষণ চতুরঙ্গ-র ঐতিহ্যকে সুরক্ষা করে চলে। আধুনিকতার তালে তালে তিনি চতুরঙ্গকে ঐতিহ্য বজায় থেকেই তাকে পরিপূরক করে বাঙালির চিন্তা চেতনার মননে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মনে করেন খাজিম আহমেদ। দিন আবদুর রাউফ স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক রামকুমার মুখোপাধ্যায়। তিনি ‘পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কবিতা ও গান’ শীর্ষক বক্তৃতা শবর থেকে শুরু করে বিভিন্ন আদিবাসীদের কথা তুলে ধরেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ। বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত রাউফ সাহেবের স্ত্রী, বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, প্রাবন্ধিক মহিউদ্দিন সরকার, আহমদ হাসান ইমরান, ইমদাদুল হক নুর, একরামুল এইচ সেখ প্রমুখ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct