ওই দূর আকাশে...
শংকর সাহা
সদ্য চারমাস হয়েছে একসন্তানকে ছেড়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন প্রগতি। বছর ছাব্বিশের প্রগতির মৃ্ত্যুর পরে সেই বাইপাশের ধারে বাড়িটিই এখন ঠিকানা প্রগতির স্বামী অম্বরীষ আর ছোট্ট মেয়ে মুন্নির। মায়ের অকাল মৃত্যু ছোট্ট মুন্নি কিছুতেই মানতে পারেনা। সে ভাবে মা একদিন ঠিকই ফিরবে! কখনো বাবার গলা জড়িয়ে মুন্নি জিজ্ঞেস করে, ‘ মা কবে আসবে বাবা ?” মুন্নির প্রশ্নের উত্তর অম্বরীষের জানা ছিলনা । সে নিরুত্তর থাকে। অফিসে তিনদিনের ছুটি পড়ায় মেয়েকে নিয়ে দার্জিলিং বেড়াতে এসেছেন অম্বরীষ।পাহাড়ী পথে মেয়ের হাত ধরে হাঁটছে। ঠিক যেন কোথায় চলেছে কেই বা জানে? হয়তো এক অনির্দিষ্টের পথে পা বাড়িয়েছেন অম্বরীষ। হাঁটতে হাঁটতে মুন্নি প্রশ্ন করে, ‘ বাবা, ও বাবা মা কি ওই গ্রামে বাস করে। যাবে মাকে খুঁছতে? যাবে বাবা?’চমকে ওঠে অম্বরীষ। মনের মাঝে এক সমুদ্রের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে তার। শিরায় শিরায় রক্তের বেগ বেড়ে যায়। কি উত্তর দেবে সে? হঠাত অম্বরীষের মনে পড়ে প্রগতিকে। আর সেই দিনগুলোর কথা ,কত স্নেহ কত ভালোবাসা। আজ বড্ড মনে পড়ছে অম্বরীষের সেই দিনটির কথা। বিয়ের পর হানিমুনে যখন প্রথম প্রগতিকে নিয়ে দার্জিলিং বেড়াতে এসেছিলেন তখন একদিন পাহাড়েরধারে এসে বিষন্ন ভাবে প্রগতি বলেছিল, “জানো অম্বরীষ, ওই দূরে পাহাড় আমায় ডাকছে। কথাগুলো মনে পড়তেই উদাসীন ভাবে সেই পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে অম্বরীষ।আবার প্রশ্ন করে মুন্নি, “বলো না বাবা মা কবে আসবে?”ক্লান্তি বুকে চেপে নিয়ে অম্বরীষ বলে, “ জানিনে মুন্নি, তোর মার বহুদূর চলে গেছে। আমি তোর মার ঠিকানা জানিনে মুন্নি।“বলতে বলতেই অম্বরীষের চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।এদিকে বাবাকে কাঁদতে দেখে ছোট্ট মুন্নিও কেঁদে ফেলে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct