সেখ মহম্মদ ইমরান, কেশপুর, আপনজন: সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের মুখ কারা হবে তার ইঙ্গিত দিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। কেশপুরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জর্জরিত তৃণমূল । যদিও মঞ্চ থেকে অভিষেকের দাবি, দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। তাঁর কথায়, “দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলে আজকের সভায় এত লোক আসত না।” সেই সঙ্গে তিনি এদিনে সভাকে তাঁর জীবনের বৃহত্তম সভা বলে বর্ননা করেন তিনি। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য দলকে ব্যবহার করা যাবে না বলে নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। অভিষেকের কথায়, “তিন-চারটে নেতার রেষারেষির জন্য় দল দুর্বল হলে কাউকে ছেড়ে কথা বলবা না। সময় দিচ্ছি শুধরে যান না হলে এমন ওষুধ প্রয়োগ করব যে শোধরানোর সময় পাবেন না।” তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, কোনও দাদা-দিদিকে ধরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের টিকিট পাওয়া যাবে না। সাধারণ মানুষের সার্টিফিকেট দিলে তবেই প্রার্থী করা হবে। দলীয় কোন্দল রুখতে শনিবার কেশপুরের সভা থেকে কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়, “অদৃশ্য চোখ সবার উপর ঘুরে বেড়াচ্ছে, সবাইকে সচেতন করে দিয়ে যাচ্ছি। পাহারাদারির দায়িত্বে আমি।” পঞ্চায়েত নির্বাচনে কে টিকিট পাবে তা নিয়ে প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে এদিন তিনি সভামঞ্চে ডাকেন এদিন সভায় ডাকেন শেখ হাসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে। সাদা জামা, এক মুখ দাড়ি, চোখে চশমা পরা ওই ব্যক্তির কাঁধে হাত রেখে অভিষেক উপস্থিত জনতাকে দেখিয়ে বলেন, ‘‘এই মানুষটিকে দেখে কী মনে হয়? তৃণমূল দুর্নীতিগ্রস্ত? এই লোকটিকে দেখে মনে হয় চোর? যাঁরা বলছেন, তৃণমূলের প্রধানকে টাকা দিয়ে বাড়ি পেতে হয়, এই ভদ্রলোক— তাঁর নামে বাড়ি এসেছে। তিনি গিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানকে বলেছেন যে তাঁর বাড়ির দরকার নেই।’’
অভিষেক জানান, ওই ভদ্রলোক জানিয়েছিলেন তাঁর মেয়ে বড় হয়েছে। বাড়ির তৈরির জন্য যদি ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নেন, সেই বাড়ি ঠিক ভাবে তৈরি করতে আরও ৩ লক্ষ টাকা খরচ হবে তাঁর। তখন তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন না। অভিষেকের কথায়, ‘‘এটাই বাংলার সংস্কৃতি, এই হসিনউদ্দিনের মতো লোকেরাই তৃণমূলের মুখ হতে চলেছেন। এঁদেরই আমরা স্বীকৃতি দেব। করেকম্মে খাওয়ার দিন শেষ।’’ অভিষেকের সংযোজন, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় দল কেশপুরে আসার পর আমি যাচাই করে ও খোঁজখবর নিয়ে দেখি। তখন জানতে পারলাম শেখ হসিমউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি যিনি কোনও রাজনৈতিক দল করেন না, তাঁর নামে আবাস যোজনার বাড়ি এসেছিল। কিন্তু, তিনি পঞ্চায়েত প্রধানকে গিয়ে জানিয়েছেন তাঁর বাড়ির কোনও দরকার নেই। কারণ তাঁর ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। বাড়ি বানানোর জন্য যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তাতে গোটা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে না। বাড়ির জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হলে তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন না। তালিকায় নাম তোলার জন্য ওনাকে কোনও টাকা দিতে হয়নি।’ অভিষেক মঞ্চে হাসিমউদ্দিনের মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি চিন্তা করেন। তাঁর মেয়ের দায়িত্ব তিনি নিজে নিচ্ছেন। মঞ্চে তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম ও আলিঙ্গন করেন তিনি। শেখ হাসিমউদ্দীন জানান, আমি ওর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিন্তু উনার মত ব্যক্তি যদি আমাকে তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েতের প্রার্থী করেন তাহলে আমি অরাজি হব না নিশ্চয়ই দাঁড়াবো বটে এবং সাধারণ মানুষের জন্য অবশ্যই কাজ করব। জানা গেছে সেখ হসিমুদ্দিন কেশপুরে এক ঔষধ দোকানের কর্মচারী হিসাবে কাজ করেন। কেশপুরের উচাহারে বাড়ি। এর পর আর এক দম্পতিকে মঞ্চে ডেকে নেন অভিষেক। নীল পাড় সাদা শাড়ির এক মহিলাকে দেখিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘ইনি মঞ্জু দলবেরা। কেশপুর গোলাড় পঞ্চায়েতের সদস্যা। ওঁর স্বামী তৃণমূলের বুথ সভাপতি।’’ পাশের সাদা চেক শার্টের যুবকে দেখিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘ইনি অভিজিৎ দলবেরা। মঞ্জু দলবেরার স্বামী। ইনি সেই নির্দিষ্ট বুথের বুথ সভাপতি। এঁদের কী মনে হয় আপনাদের? এক জন গ্রাম পঞ্চায়েত মেম্বার (সদস্য), তাঁর স্বামী ১০ বছর বুথ সভাপতি আছেন।’’ ওই দম্পতিকে দেখিয়ে দলীয় নেতৃত্বকে অভিষেকের বার্তা, ‘‘যাঁরা দেখান আমাদের ব্লক সভাপতি, ফুলেফেঁপে উঠেছেন। তাঁদের দেখাচ্ছি। আমার মিটিংয়ে আজ আমার ছবি থাকবে না। অভিজিৎ দলবেরা এবং মঞ্জু দলবেরার ছবি থাকবে।’’এদিন জনসভার শেষে তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct