রাজু আনসারী, অরঙ্গাবাদ, আপনজন: বিড়ি শ্রমিক পরিবার থেকে পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিসে রাজ্যে ১৫ তম স্থান অধিকার করে চমক সৃষ্টি করলেন মুর্শিদাবাদের সুতি থানার অরঙ্গাবাদের মহেন্দ্রপুর গ্রামের কৃতি সন্তান বিরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফলাফল প্রকাশের পরেই আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় এলাকাজুড়ে। বিড়ি শ্রমিক পরিবার থেকে উঠে এসে রাজ্য সিভিল সার্ভিসে সফল হওয়ায় নবিরুল ইসলামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ২০২০ সালের রাজ্য সিভিল সার্ভিসের মেইন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। ফলাফলে সবাইকে চমকে দিয়ে মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এলাকা সুতির অরঙ্গাবাদের মহেন্দ্রপুরের বিড়ি শ্রমিক ঘরের সন্তান নবিরুল ইসলাম। জেনারেল ক্যাটাগরিতে ১৫ তম স্থান অধিকার করেন তিনি। নবিরুলের সাফল্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই আনন্দে আপ্লুত হয়ে উঠে গোটা গ্রাম। রাতেই বাড়ি ফিরতেই সকাল থেকেই শুভেচ্ছা জানাতে নবিরুলের বাড়িতে হাজির হন বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে গ্রামবাসীরা।
মুর্শিদাবাদের সুতি-২ ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রামের বাবা এরফান আলী ও মা ফিরোজা বিবির ছেলে নবিরুল ইসলাম। চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই সংসার অতিবাহিত করছেন তিনি। বাড়িতেই মায়ের সঙ্গে বিড়ি বাঁধার পাশাপাশি রাত জেগে পড়াশুনা করে ২০০৫ সালে অরঙ্গাবাদ হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা ও ২০০৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন নবিরুল ইসলাম। তারপরেই ২০১৩ সালে বি.টেক সম্পন্ন করে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে যোগদান ও পরবর্তীতে ধূলিয়ান পৌরসভা এবং ২০১৯ সালে সুতির কৃষি দপ্তরে কেপিএস পদে জয়েন করেন তিনি। চাকুরির পাশাপাশি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে থাকেন সুতির ওই কৃতি সন্তান। ২০২০ সালের মেন পরীক্ষা, যেটি ২০২১ সালে নির্বাচনের পরে অনুষ্ঠিত হয় সেই পরীক্ষায় বসেন নবীরুল ইসলাম। তাতেই কার্যত বাজিমাত করে মুর্শিদাবাদের কৃতি। বৃহস্পতিবার ডব্লুবিসিএস (এক্সি)পরীক্ষার রেজাল্ট বেরতেই দেখা যায় নবিরুল রাজ্যে সাধারণ ক্যাটেগরিতে ১৫ তম স্থান অধিকার করে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে পাশ করেছেন। ট্রেনিং সম্পন্ন করার পর ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিসার পদে যোগ দিবেন তিনি। রাতেই নবিরুলের সাফল্যের কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় এলাকায়। নিজের সাফল্য নিয়ে বলতে গিয়ে নবিরুল ইসলাম বলেন, খুব কষ্ট করে বাবা মায়ের সাথে গভীর রাত পর্যন্ত বিড়ি বেঁধে ও পড়াশুনা করে আজ এই জায়গায় এসেছি । পিছিয়ে পড়া এলাকা থেকে আমার এই সাফল্যে খুব গর্বিত মনে হচ্ছে। নবীরুল ইসলাম জানান, বিড়ি শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি এলাকা থেকে সাধারণত ছাত্রছাত্রীরা সিভিল সার্ভিসে এগিয়ে আসেন না। কিন্তু যারা সাহস করে এগিয়ে আসে তারাই সফল হয়। অন্যদিকে, ছেলের সাফল্যের খবরে খুশি হয়ে নবিরুল ইসলামের মা জানান, বিড়ি বেঁধে কষ্ট করে একবেলা না খেয়ে ছেলেকে স্কুলে পড়িয়েছি। নবিরুল খুব ছোট বেলা থেকেই আমাদের সাথে বিড়ি বেঁধে পড়াশুনা করেছে । ছেলের রেজাল্টে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct